সোনারগাঁয়ে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে যুবদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াতে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার পর সেখানে কমিটি গঠনের কার্যক্রমের জন্য সাংগঠনিক টিম গঠনও করা হয়। আহ্বায়ক কমিটির প্রায় সকলেই সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি পদে আসতে চাচ্ছেন। তবে কেউ কর্মীদের ভোটে সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি হতে নারাজ। কারন প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে ইউনিয়ন কমিটির নেতাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি হবেন সেই প্রত্যাাশা কারোরই নাই।

জানাগেছে, কেউ কেউ রয়েছেন সমঝোতার আশায়, কেউ কেউ তদবিরের মাধ্যমে, কেন্দ্রীয় বিএনপির মুলদলের নেতাদের তদবিরে, কেউ কেউ নিজস্ব কারিশমায় ম্যাকিং করে কমিটির নেতৃত্বে আসতে চান। মজার বিষয় হলো আহ্বায়ক কমিটির প্রায় প্রতিটি যুগ্ম আহ্বায়কই সভাপতি ও সেক্রেটারি হিসেবে নিজেদের দাবি করছেন। যে কারনে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

জানাগেছে, উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠনের পরপরই কঠোর সমালোচনা শুরু হয়। কারন কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় আশরাফ ভুঁইয়াকে। কিন্তু এই আশরাফ ভুঁইয়ার পরবর্তী যুগ্ম আহ্বায়ক যাদেরকে করা হয়েছে তারা দীর্ঘদিন যুবদলের রাজনীতি করেছেন এবং রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে মামলা ও কারাভোগের শিকার হয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারনে এই আশরাফ ভুঁইয়াকেই করা হয় সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। কিন্তু উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নূরে ইয়াসিন নোবেলের মত নেতাদের রাখা হয় নিচের সারিতে। কমিটির গঠনের পূর্বে যুবদলের রাজনীতিতে আশরাফ ভুঁইয়ার উল্ল্যেখযোগ্য কোন ভুমিকা ছিল না।

স্থানীয় মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলছেন- যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ প্রধান এককভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও তাকে কোনদিন কোন মিটিং মিছিলে দশজন নিয়েও অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। একসময় ছাত্রদলের রাজনীতিতে ছিলেন আশরাফ মোল্লা। তিনিও যুবদলের রাজনীতিতে ছিলেন না। তবে ছাত্রদলের তার অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতই। যুগ্ম আহ্বায়ক কাউসার ছিলেন ছাত্রদলের রাজনীতিতে। যদিও ছাত্রদলের রাজনীতিতেও তিনি কবে নাগাদ শ খানিক নেতাকর্মী নিয়ে জেলা ছাত্রদলের কোন কর্মসূচিতে জেলা পর্যায়ে শোডাউন করেছেন সেই ইতিহাস কারো জানা নেই। একই অবস্থা পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী চপলেরও। ফলে কার হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হবে নিরাপদ সেটাই বুঝতে পারছেন না নীতিনির্ধারকেরা। তবে জেল জুলুম হামলা মামলায় নূরে ইয়াসিন নোবেলকেই অনেকে ত্যাগ মনে করছেন। যদিও তিনি স্থানীয় মুলদলের একটি অংশের বিপক্ষ শিবিরে রাজনীতি করতেন।

এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় যুবদলের পরামর্শে জেলা ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সোনারগাঁয়ে কমিটি গঠন সম্পন্ন করার দিকে মত দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। আবার কেউ কেউ জানিয়েছেন আহ্বায়ক শহিদুর রহমান স্বপনের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দেয়া হতে পারে। তবে তিনি সভাপতির দায়িত্ব নিবেন কিনা সেই বিষয়ে জানা যায়নি। সম্প্রতি উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি আজহারুল ইসলাম মান্নানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উপজেলা যুবদলের নেতারা। ভিন্ন সূত্রে জানাগেল- মান্নানের পছন্দ আশরাফ প্রধান ও আশরাফ ভুঁইয়াকে নিয়ে যুবদলের কমিটি হোক।

জানাগেছে, গত ৫মার্চ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান স্বপনকে আহ্বায়ক ও আশরাফ ভুঁইয়াকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে জেলা যুবদল। ৩২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে ১২ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১৯জনকে সদস্য পদে রাখা হয়েছে। কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন নুরে ইয়াসিন নোবেল, আশরাফুল আলম প্রধান, আশরাফ মোল্লা, পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী চপল, কামাল হোসেন, রাসেল রানা, আব্দুল আলী, কাওসার হোসেন, আমির হোসেন, মোঃ কাওসার ও আবু তাহের।

এ ছাড়াও সদস্য পদে মাসুম রানা, নিজাম উদ্দিন, শাহিন আলম জুবায়ের, আমজাদ হোসেন, মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ ইয়াসিন, ইউনুস মিয়া, সুমন মিয়া রান্টু, মোঃ আতাউর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন হিমেল, মকবুল হোসেন, নোবেল মীর, মতিউর রহমান মতি, আমিনুল ইসলাম, খন্দকার রেজাউল, অলিউর রহমান, শাহ আলম ও আল আমিন মোল্লা।

নেতাকর্মীরা বলছেন- আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে করোনা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। যার কারনে সোনারগাঁয়ে যুবদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি নেতারা। উপজেলার মধ্যে একটি পৌর ও ১০টি ইউনিয়ন এলাকা। যার মধ্যে ১০টি ইউনিয়ন উপজেলা যুবদলের আওতাধীন যেখানে কমিটি গঠনের কোন চেষ্টাই করতে পারেনি করোনা পরিস্থিতির কারনে। ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি খসড়া কমিটি তৈরি করা হলেও একটির অনুমোদন করতে পারেনি উপজেলা যুবদল। এনিয়ে সম্প্রতি নেতাদের মধ্যে তুমুল তর্কবিতর্ক হয়।

অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা বলছেন- এই করোনা পরিস্থিতিতে নতুন করে যুবদলের কমিটি গঠিত হলেও করোনায় নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দেয়ার সুুযোগ থাকলেও সেটা করেনি তারা। করোনায় দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলো যখন অসহায় জীবন যাপন করছিলেন তখন যুবদলের দু’একজন নেতাকে বাদে আর বাকিদের দেখা যায়নি অসহায় মানুষের পাশে। করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই শহিদুর রহমান স্বপন কয়েক হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে মানুষের মাঝে বিতরণ করেছেন। নিজ এলাকায় খাদ্য সামগ্রীও দিয়েছেন তিনি। যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ ভুঁইয়াও খাদ্য সামগ্রী ও মাস্ক বিতরণ করেছেন। দুটি কর্মসূচি করেছিলেন কাউসারও। কিন্তু বাকিদের ভুমিকা কি ছিল করোনা পরিস্থিতিতে? যুবদলের যেসব কর্মীরা অসহায় দিনযাপন করছিলেন তাদের পাশেও দাঁড়াননি নেতৃত্ব প্রত্যাশি নেতারা।

সোনারগাঁও এলাকা থেকে জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন জিয়াউল হক চয়ন ও সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন হারুন অর রশিদ মিঠু। গত ১১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা ও পৌর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠনের লক্ষ্যে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাংগঠনিক টিম গঠন করেছিল জেলা যুবদলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু ও সেক্রেটারি গোলাম ফারুক খোকন।

এই সাংগঠনিক টিমে রয়েছেন জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি হারুন অর রশিদ মিঠু, আফজাল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম চয়ন, দপ্তর সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রিন্স ও প্রচার সম্পাদক রাজিব ভূঁইয়া।

এই সাংগঠনিক টিমের প্রধান করা হয়েছে যুবদলের রাজনীতিতেই নেই সেই হারুন অর রশিদ মিঠুকে। যিনি জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি। জেলা যুবদলের কমিটি গঠনের পর জেলা যুবদলের সঙ্গে কটি কর্মসূচিতে তিনি উপস্থিত ছিলেন সেটার সংখ্যাও নেই। কেউ কেউ জানিয়েছেন তিনি জেলা যুবদলের কোন একটি কর্মসূচিতেও ছিলেন না।

নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, ১১ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে এই সাংগঠনিক টিম ২২ আগস্ট পর্যন্ত দুটি কমিটির সম্মেলন বাস্তবায়নে কাজ করবে বলে দায়িত্ব দেয়া হয়। এই সাংগঠনিক টিমের কাজ তদারকি করবেন জেলা যুবদলের সভাপতি টিটু ও সেক্রেটারি খোকন। কিন্তু ২২ আগস্ট পেরিয়ে গেলেও উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠনের কোন প্রাথমিক প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করতে পারেনি তারা।