সোনারগাঁয়ে রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে আওয়ামীলীগের তিন নেতা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত সহ আওয়ামীলীগের তিন নেতা। এক সময় উপজেলা আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে ছিল আজকে তারা উপজেলা আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রণ তো দুরের কথা কমিটিতে সদস্য পদেও নাই। উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর কমিটি ঠেকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেও পারেনি সরকারি দলের তিন নেতা। মুলত জেলার একজন প্রভাবশালী এমপির বলয়ের বাহিরে গিয়ে রাজনীতি করতে গিয়ে আজকে সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে তাদের নড়বড়ে অবস্থা বলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের সূত্রে, নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও-সিদ্ধিরগঞ্জ) বৃহত্তর আসনে আওয়ামীলীগের এমপি ছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে রাজপথে তার কঠোর ভুমিকায় পেয়েছিলেন নৌকা প্রতীক। হয়েছিলেন এমপি। কিন্তু পরবর্তী ইতিহাস সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগের সব নেতাকর্মীদেরই জানা। এমপি থাকাকালীন সময়ে সোনারগাঁও ও সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষ তো দুরের কথা নেতাকর্মীরাই তার টিকিটিও খুঁজে পায়নি। এমপির ছায়া দেখাও ছিল সোনার হরিণের মতই। বড় ধরণের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তার দেখা মিললেও বাকি সময়ে নেতাকর্মী তাকে খুঁজেই পেতোনা। একই দশা বর্তমানেও। নেতাকর্মীদের প্রয়োজনে অতীতে যাকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি বর্তমানে সেই ব্যবহারের খেসারত দিচ্ছেন কায়সার হাসনাত। তার অপেক্ষার প্রহর যারা গুণতেন এখন সেইসব নেতাকর্মীরা তার দ্বারে কাছেও নাই। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। তার পক্ষে নির্বাচন করতে গিয়ে যারা নির্যাতিত হয়েছিলেন তাদেরও খোঁজ খবর রাখেননি তিনি।

কায়সার হাসনাত এমপি থাকাকালীন সময়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করতেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই ভুঁইয়ার মৃত্যুর পর তিনি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নেতাকর্মীদের প্রয়োজনে কালামকেই কিছুটা কাছে পেতেন। যে সুযোগে সোনারগাঁয়ের বিপুল পরিমান নেতাকর্মী তার ভক্ত হয়ে যান। শক্ত অবস্থান তৈরি হয়ে যায় কালামের। কিন্তু গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরোধীতা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন কালাম। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাকে ক্ষমা করে দেয়। যদিও জাতীয় নির্বাচনে তিনি মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষেই কাজ করেছিলেন।

এদিকে উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে জাতীয় নির্বাচনে তার ভাতিজা বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের পক্ষেই নির্বাচন করেছিলেন। এর আগেও তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন। এরও আগেরবার তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারও আগে তিনি মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আওয়ামীলীগের এই নেতার দ্বারা সোনারগাঁয়ের মানুষের উপকার কমই হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে গরীব অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া পরিবারের পাশে তার জোড়ালো কোন ভুমিকাই ছিল না। উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনেও তিনি তেমনটা ভুমিকা রাখেননি। হাসনাত পরিবারের রাজনীতি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা তিনি সব সময়ই করে আসছিলেন।

অন্যদিকে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- নানা আলোচনা সমালোচনা ও বাধা বিপত্তির পরে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে বৈধতা পায় উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটি। কমিটি গঠনের শুরুতে নানা বিতর্ক থাকলেও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের আস্থার প্রতিদান দিচ্ছে আহ্বায়ক কমিটি। কারন দায়িত্ব নিয়ে হাই ও বাদলই এই কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলেন। নানা বাধা বিতর্ক সৃষ্টি হলে পরবর্তীতে কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত বৈধতা পায় এই কমিটি।

নেতাকর্মীদের সূত্রে- গত মার্চ মাস থেকে করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যেভাবে কাজ করেছে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ তা অন্যান্য উপজেলা/থানায় আওয়ামীলীগের এতটা ভুমিকা দেখা যায়নি। টানা কয়েক মাস যখন দেশের সকল মানুষের আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে যায় তখন গরীব অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলো চরম বিপাকে পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম উপজেলার পৌর এলাকা সহ প্রতিটি ইউনিয়ন এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।

দুটি ঈদে তিনিও ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। করোনায় নিরাপত্তার স্বার্থে থানা পুলিশ ও সাংবাদিকদের জন্য পিপিই ও মাস্ক বিতরণ করেছেন। মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের তিনি সহায়তা করেছেন। শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধাদের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন। বেদে সম্প্রদায় ও হিজড়া সম্প্রদায়ের মাঝে নগদ অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন। সেই সঙ্গে পিরোজপুর ইউনিয়ন এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্ধের ত্রাণ বিতরণ সহ নিজ উদ্যোগেও খাদ্য সামগ্রী প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিতরণ করেছেন চেয়ারম্যান মাসুম।

এ ছাড়াও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আবু জাফর চৌধুুরী বিরুও আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। তিনিও দুটি ঈদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়ন এলাকায় উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। যেখানে জেলার নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াও উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়াও রাষ্ট্রীয় ও দলীয় কোন কর্মসূচিই সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ পালনে কার্পণ্য করছে না। ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট উপলক্ষ্যে বেশকটি কর্মসূচি পালন করেছে। শোকের মাসে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন এলাকায় কর্মসূচি পালন করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ। জাতির জনকের প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে আওয়ামীলীগ।

নেতাকর্মীরা আরও জানিয়েছেন- ধীরে ধীরে উপজেলা আওয়ামীলীগ আরো সু-সংগঠিত হচ্ছে। উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের নেতৃত্বে রাজনীতিতে জোড়ালো হচ্ছে। সাবেক নেতাদের কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে উস্কানী ও উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও সেই সব বিষয়ে শান্তভাবেই জবাব দিচ্ছে উপজেলা আওয়ামীলীগ। যার বেশির ভাগ প্রশংসার দাবিদার ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম। উপজেলা আওয়ামীলীগের এই কমিটি গঠনের পেছনে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের সমর্থন ছিল। যার ফলে শামীম ওসমানের আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার মাসুম।

নেতাকর্মীরা বলছেন-এখানকার আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা এইচএম মাসুদ দুলাল ঐক্যবদ্ধ হলেও করোনায় জনগণের মাঝে তাদের ভুমিকা ছিল ক্ষীণ। নেতাকর্মীদের সঙ্গে কালামের কিছুটা যোগাযোগ থাকলেও বাকিদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের কোন যোগাযোগই নেই।

যার ফলে একদিকে এসব নেতাদের ব্যর্থতা এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটির নেতাদের নানা প্রশংসনীয় কর্মকান্ডের সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে পাকাপোক্ত হচ্ছেন সামসুল ইসলাম ভুইয়া, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম ও আবু জাফর চৌধুরী বিরু। যার ফলে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা এইচএম মাসুদ দুলালের মত নেতাদের রাজনীতি হুমকির মুখে। অস্তিত্বের লড়াইয়ে নেমেছেন এই তিন নেতা।