সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত মার্চ মাস থেকে সারাদেশে করোনা পরিস্থিতি শুরু হয়। সারাদেশে নারায়ণগঞ্জ হয়ে ওঠে করোনার হট স্পট। ২৫ মার্চ থেকে সারাদেশে সরকারি বেসরকারি সহ সকল ধরণের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে আয়ের পথও বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গরীব অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলো চরম বিপাকে পড়ে যায়। এসব মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের মহিলা দলের কি ভুমিকা ছিল সেটা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন। এমনকি করোনাকালেই গেল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী এবং সবশেষ ১ সেপ্টেম্বর গেলো বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দুটি কর্মসূচির কোনটিতেই জেলা ও মহানগর মহিলা দলের সমষ্ঠিগত আয়োজনে দোয়া মাহফিল করতেও দেখা যায়নি।
যদিও নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা যুগ্ম আহ্বায়ক ডলি আহমেদকে পাইকপাড়া এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণে দেখা গেলেও বাকিদের অনেকের ছায়াও দেখা যায়নি জনগণের পাশে। যারা দল ক্ষমতায় আসলে সংরক্ষিত আসনগুলোর চেয়ার দখলে নিতে দৌড়াবেন তারাই ছিল না গরীব মানুষের পাশে। কেউ সংরক্ষিত কাউন্সিলর, কেউ কেউ নারী ভাইস চেয়ারম্যান সহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে দলের সমর্থনে জনপ্রতিনিধি হবেন জনগণের সেবা করার জন্য। কিন্তু জনগণের বিপদের সময় তাদের এমন অনীহা ভুমিকায় হতাশ সাধারণ মানুষ। যদিও বিএনপির রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে মহিলা দলের নেত্রীরা সামনে থেকেই রাজপথে আন্দোলন করেন সেটা দেখা যায়। কিন্তু করোনায় গরীব মানুষের পাশে তাদের সেভাবে দেখা গেলোনা।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা তার নির্বাচনী এলাকার বাহিরে তিনি কোন এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন কিনা সেটা জানা যায়নি। তাও তিনি বিএনপি কিংবা মহিলা দলের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন এমনটাও তিনি কখনও দাবি করেননি। প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো খাদ্য সামগ্রী ও তার নিজ তহবিল থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করলেও মহানগর মহিলা দলের উদ্যোগে কিংবা আয়োজনে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন এমনটা দেখা যায়নি। এ ছাড়াও করোনায় ব্যাপক অবদান রেখে তিনি ব্যাপক আলোচিত হলেও বিএনপির মহিলা দলের পক্ষে তার ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক পদে রয়েছেন নূরুন্নাহার বেগম ও যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন রহিমা শরীফ মায়া। এ ছাড়াও আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফৌজিয়া আক্তার পপি সহ ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের পারভীন আক্তার কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। তিনিও আড়াইহাজার পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনে করেছিলেন। করোনায় তিনি বেশকটি কর্মসূচি করে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করলেও তার নির্বাচনী এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের আহ্বায়ক পদে রয়েছেন রাশিদা জামাল ও যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহামুদা আক্তার, সাজেদা খাতুন মিতা, ডলি আহম্মেদ সহ বেশকজন। মহানগর মহিলা দলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহামুদা আক্তার ছিলেন বন্দর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ছিলেন একজন জনপ্রতিনিধি সেই সঙ্গে মহিলা দলের পদধারী নেত্রী। কিন্তু তাকে এক মুঠো চাল বিতরণেও দেখা গেলো না। পূর্বের শহর মহিলা দলের সেক্রেটারি দিলারা মাসুদ ময়নাও ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষিত কাউন্সিলর। কিন্তু তাকেও এক মুঠো চাল বিতরণে দেখা গেলোনা। বর্তমানে তিনি মহানগর বিএনপির মুলদলের পদেও রয়েছেন।
তবে এ বিষয়ে জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক নুরুন্নাহার বেগম সান নারায়ণগঞ্জের কাছে দাবি করেন- আমরা দলীয়ভাবে সেরকম একত্রিত হয়ে কার্যক্রম পালন করতে পারিনি। তবে আমি দলের পক্ষ থেকেই মানুষের জন্য কাজ করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ওষুধ মাস্ক হ্যান্ড স্যানিটাইজার এনে দিয়েছে। আমাদের মহানগরের নেত্রী আয়শা আক্তার দিনার সঙ্গে থেকেও কাজ করেছি। জেলার অন্যান্য থানা এলাকার নেত্রীরাও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা থাকার কারনে সংগঠনের উদ্যোগে একত্রিত হয়ে কাজগুলো করতে পারিনি।
এদিকে কাউন্সিলর দিনার অবদানের বিষয়টি তুলে ধরে নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের আহ্বায়ক রাশিদা জামাল দাবি করেছেন- আমি এবং আমার সংগঠনের অন্যান্যরা যার যার অবস্থান থেকে গরীব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারনে সেই সময় সকলে একত্রিত হয়ে কাজগুলো করতে পারিনি। আমাদের নিজেদের অবস্থান থেকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের ছিলাম। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে বিধি নিষেধ থাকায় সকল নেত্রীরা এক হয়ে ফলাও করে করতে পারিনি।