সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
করোনাকালে লাশ দাফন কাফনে ব্যাপক ভুমিকা রেখে প্রশংসা পেয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। ওই সময় তিনি বেশকজনকে নিয়ে কাজ করেছিলেন যার নাম দিয়েছিলেন টিম খোরশেদ বনাম কোভিড-১৯। কিন্তু তার পরিচয় আরেকটি রয়েছে তিনি বিএনপির যুবদলের নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সভাপতি। দীর্ঘ ৫ মাস তিনি টিম খোরশেদের ব্যানারে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও নিজ সংগঠন যুবদল ও বিএনপিকে অবজ্ঞা করার অভিযোগ ওঠেছে তার বিরুদ্ধে।
গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় যুবদলের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভের পাঁচ নেতার সঙ্গে বৈঠক করা হয়। মুলত মহানগর যুবদলের আওতাধীন তিনটি থানা এলাকায় কমিটি গঠন নিয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুবদলের শীর্ষ তিন নেতার কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে যান খোরশেদ। নেতারা অভিযোগ তুলেন-করোনায় দলকেই ভুলে গিয়েছিল খোরশেদ। টিম খোরশেদ নামে নিজেকে হাইলাইট করতে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তিনি। টিম খোরশেদ নামে প্রচারণা চালানোর কারনে যুবদল নেতারা প্রশ্ন রেখেছেন-তাহলে মহানগর যুবদল কোথায়? দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামেও মুখে আনেননি খোরশেদ। কেন?
সেখানে আরও অভিযোগ করা হয়- টিম খোরশেদ ব্যানারে কাজ করে আওয়ামীলীগ নেত্রী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী, এমপি শামীম ওসমান, এমপি একেএম সেলিম ওসমান ও জেলা প্রশাসককেই বারবার ফেসবুক লাইভে এসে এবং মিডিয়াতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে প্রশংসা করেছিলেন খোরশেদ। বিএনপি ও যুবদলের নামও কখনও মুখে নেননি। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে তিনি এক মুঠো চালও বিতরণ করেছেন সেটাও কোনদিন বলেননি।
মিডিয়াতে খবর বেরিয়েছিল এমপি সেলিম ওসমানের কাছ থেকে দশ লাখ টাকা নিয়েছেন খোরশেদ। এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর খোরশেদ মিডিয়াতে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছেন দশ লাখ টাকা তিনি ফেরত দিয়েছেন এবং তা গরীব মানুষের মাঝে বিতরণের অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু জনগণের মাঝে বিতরণের জন্য তার মাস খানিক পর সেলিম ওসমানের কাছ থেকে ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করেছেন খোরশেদ। এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গেও জেলা প্রশাসনের একটি অনুষ্ঠানে খোরশেদকে দেখা গেছে। পাশাপাশি ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠজন আরেক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকুর সঙ্গে জোট বেধেছেন খোরশেদ।
কেন্দ্রে আরও অভিযোগ তোলা হয়- করোনা পরিস্থিতিতে মহানগর যুবদলের অন্যান্য নেতারা দলের পক্ষে মানুষের পাশে দাঁড়ালেও খোরশেদ সরকারি দলের বেশকজন নেতার বাহবাহ ও খেতাব পেয়ে নিজ সংগঠনের কার্যক্রমই ভুলে যান। নেতাকর্মীরা বলছেন- বিএনপির মুলমন্ত্র থেকে বিচ্ছিন হয়ে পড়েছেন খোরশেদ। কারন বিএনপির মুলমন্ত্র হলো ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। কিন্তু খোরশেদের কাছে দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়- সেই বিষয়টি কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতাদের কাছে তুলে ধরেছেন গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় যুবদলের এক মিটিংয়ে।
এত্তসব অভিযোগের পর খোরশেদের জমা দেয়া তিনটি থানা কমিটির খসড়া ফেরত দেন কেন্দ্রীয় যুবদল। সেই সঙ্গে নির্দেশনা দেন মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভের পাঁচ নেতাকে নিয়ে যুবদল নেতাদের তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ ও পূরণ করে তা জমা দেয়ার। তারপর কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু ১৫ সেপ্টেম্বর খোরশেদ একই ফরম বিতরণ করেছেন। যার ফলে ১৭ সেপ্টেম্বর মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি মমজাজ উদ্দীন মন্তু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান সহ শীর্ষ নেতারা খোরশেদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন। ফলে এবার রাজনীতিতে খোরশেদকে যুদ্ধ নামতে হচ্ছে। যেখানে কেউ কেউ বলছেন যুদ্ধ এবার টিম খোরশেদ বনাম মহানগর যুবদল! কারন মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরাও বিষয়টি বুঝতে পেরে খোরশেদের নেতৃত্ব থেকে সটকে পড়ছেন।
অন্যদিকে জানাগেছে, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান এবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন খোরশেদের স্বেচ্ছাচারি কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। এদের সঙ্গে রয়েছেন মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হক রানা, আহাম্মদ আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জরুল হক মুছা, ফিরোজ আহম্মেদ সহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সভাপতি খোরশেদ ও ভাগনে সাংগটনিক সম্পাদক রশুকে বাদেই এবার বন্দর থানায় তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেছে মহানগর যুবদল।
জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন বন্দর যুবদলের আওতাধীন ৯টি ওয়ার্ড যুবদলের নেতাকর্মীদের মাঝে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে বন্দরের কবিলের মোড় এলাকায় মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হক রানার বাড়িতে মহানগর যুবদলের আয়োজনে নেতাকর্মীদের মাঝে এই তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর থানা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তু ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান, সহ-সভাপতি নাজমুল হক রানা ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক মুছা।
ফরম বিতরণের পূর্বে নেতারা বলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের রাজনীতি কারো একক ব্যক্তিগত মতামতে পরিচালিত হবে না। যুবদলের কোন নেতাকর্মী কোন ভাইয়ের রাজনীতি করবে না। আমরা বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্দেশনায় রাজনীতি করবো। ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে আমাদের দলের স্বার্থ দেখতে হবে। কেউ এমপি মন্ত্রী মেয়র হবে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা যুবদলের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব নয়। যুবদলের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলকে শক্তিশালী ও সু-সংগঠিত করা।
রাজপথে সক্রিয় নেতাকর্মীদের প্রতিটা ওয়ার্ড যুবদলের কমিটি গঠনের মাধ্যমে মুল্যায়ণ করা হবে বলেও আশ^স্থ করেন শীর্ষ নেতারা। ব্যক্তি স্বার্থে নয় দলের স্বার্থে কাজ করার জন্য সকল নেতাকর্মীদের প্রতিও আহ্বান জানান বক্তারা।
এ ছাড়াও মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল হক মুসার উপর হামলায় লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বক্তারা দুঃখ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ভবিষৎে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমরা দেখতে চাইনা। কারন যুবদলের প্রতিটা নেতাকর্মী বিএনপির কর্মী। তারা কারো ব্যক্তিগত কর্মী নয় যে যেনো তেনো আচরণ করা হবে। তারা দলের কর্মী, তারা দলের জন্য কাজ করে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের উপর নিজেরাই আচর দিলে একশত বার ভাবা উচিত।
এর আগে নেতারা জানান, প্রতিটি নেতাকর্মীর যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রীয় যুবদল থেকে তথ্য সংগ্রহ ফরম দেয়া হয়েছে। এই তথ্য সংগ্রহ ফরমে নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক তথ্য দেয়া থাকবে। এসব ফরম পূরণ করে কেন্দ্রীয় কমিটির হাতে তুলে দেয়া হবে।
এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকায় মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বাসায় তার অনুগামী নেতাকর্মীদের নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়। ওই অনুষ্ঠানের বিষয়ে সুপার ফাইভের তিন নেতা সহ অনেককেই জানানো হয়নি। ওইদিন সেখানে গেলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জরুল হক মুছার উপর হামলা করে লাঞ্ছিত করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠেছে খোরশেদের বিরুদ্ধে।
তবে এসব বিষয়ের কাউন্টার দিতে ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের একটি কাউন্টার কর্মসূচিও পালিত হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জের ৮নং ওয়ার্ডের এনায়েতনগর এলাকায় থানা যুবদলের আয়োজনে প্রতিটি ওয়ার্ডের যুবদলের শীর্ষ নেতাদের হাতে তথ্য সংগ্রহ ফরম তুলে দেন মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রশিদুর রহমান রশু।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল প্রধানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ অপু।
মহানগর যুবদল নেতা মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি শেখ মোহাম্মদ অপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, সাইফুদ্দীন মাহামুদ ফয়সাল।
এ অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুুল আলম খন্দকার খোরশেদের কর্মকান্ডের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও মহানগর যুবদলের শীর্ষ নেতারা। একই অনুষ্ঠানে মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তুর কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা করেছেন তারা। সেই সঙ্গে হুশিয়ারি দিয়েছেন ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধেও।
নেতারা বলেছেন, মহানগর বিএনপির কিছু অংশের নেতাদের কুটকৌশলে মমতাজ উদ্দীন মন্তুকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এও বলেছেন, যদি বিবেদ মিটমাট নাও হয় তাহলেও অযোগ্য ও আওয়ামীলীগের দালালদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কমিটিতে রাখা হবে না।
নেতারা দাবি করেছেন- মহানগর যুবদলের সভাপতি হিসেবে খোরশেদ করোনায় মানবতা দেখিয়ে যুবদলকেও বিশে^র দরবারে নিয়ে গেছেন। অথচ সেই যুবদলে গুটি কয়েকজনকে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন মন্তু।