সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
প্রায় দেড় বছর আগে ২৮৭ জন বিএনপির আইনজীবীকে নিয়ে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি। তারা প্রত্যেকেই নেতা। এই কমিটিকে বাতিল ভুয়া দাবি করে বিএনপির আইনজীবীদের আরেকটি গ্রুপ পাল্টা কমিটিও গঠন করেন। ফলে দুই কমিটি মিলে হয়ে যায় ২৮৭ জনেরও বেশি। যদিও ওই কমিটিতে পদ পাওয়া অনেক নেতা আবার পদত্যাগও করেছেন। সব নাটকীয়তা বাদ দিলে কমিটির ২৮৭ জনের মধ্যে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ৯০ জন আইনজীবী ভোট দিয়েছেন আওয়ামীলীগের প্যানেলের প্রার্থীদের। অথচ তারা প্রত্যেকেই বিএনপির আইনজীবী নেতা। আর এই দীর্ঘ কমিটি গঠন করার অভিযোগ ওঠেছিল কমিটি গঠন করা হয়েছে কেবল মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের প্রেসক্রিপশনে। ফলে সাখাওয়াত অনুগামী বিএনপির ৯০ আইনজীবী নেতারা ভোট এবার গেল আওয়ামীলীগের বাক্স্রে!
জানাগেছে, প্রায় দেড় বছর আগে জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন এককভাবে নারায়ণগঞ্জের কমিটি ঘোষণা করেন। যেখানে শুধুমাত্র অগ্রাধিকার পায় মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের অনুগামী আইনজীবীরা। কমিটি গঠনের পর দিনই কমিটি বাতিলের দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেন অপর পক্ষের আইনজীবীরা। কমিটি গঠনের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে কমিটিতে প্রত্যাখান করেন আইনজীবীদের একটি অংশ। এমনকি ১৪৪ জন পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেন।
কমিটিতে রাখা উপদেষ্টা পদ থেকে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারও পদত্যাগ করেন। এ কমিটি বাতিল না হওয়ার কারনে কয়েক দিনের মাথায় অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুইয়াকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সেক্রেটারি করে পাল্টা কমিটি গঠন করেন অপর পক্ষের আইনজীবীরা। মুলত তারা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। এর আগে ২৮৭ জনের কমিটিতে অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবিরকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লাকে সেক্রেটারি বিশাল এক কমিটি ঘোষণা করেন মাহবুব উদ্দীন খোকন।
জানাগেছে, গত ২৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে নির্বাচন করেন ওই ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির। তিনি ২৮৭ জনের কমিটির একজন নেতা যিনি সভাপতি। অথচ তিনি ভোট পেয়েছেন মাত্র ১৯৭ জন আইনজীবীর। ফলে ২৮৭ জন আইনজীবী নেতারা ভোটের মধ্যে ১৯৭ ভোট যখন সরকার হুমায়ুন কবিরের বাক্সে তখন কমিটির আরও ৯০ জন আইনজীবী নেতার ভোট কোথায়? নির্বাচনে ৯২৬টি ভোটের মধ্যে ৯১০জন আইনজীবী ভোট প্রদান করেছেন। ফলে ওই ৯০টি ভোট আওয়ামীলীগের বাক্সে গিয়েছে। তাহলে এত দীর্ঘ ফোরামের কমিটি গঠনের স্বার্থকতা কোথায় যেখানে ফোরামের নেতাদের ভোটই পেলেন না ফোরামের সভাপতি সরকার হুমায়ুন কবির?
ফোরামের শীর্ষ আইনজীবী নেতা খোরশেদ আলম মোল্লা দাবি করেছেন, এবারের নির্বাচনে বিএনপির আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু ভোটের হিসেবে তার বক্তব্যের কোন প্রমান পাওয়া গেল না। যেখানে ২৮৭ জন আইনজীবী নেতার মধ্যে ৯০ জন নেতার ভোটই চলে যায় আওয়ামীলীগের বাক্সে। তাহলে ওই ৯০ জন আইনজীবী নেতা কারা এখণও খুজে বের করতে পারেননি ফোরামের শীর্ষ নেতারা। এছাড়াও কোর্টে বিএনপির অনেক সমর্থক ও ভোটারও রয়েছেন। তাহলে তাদের ভোট না হয় বাদ দেয়া হলো। তবুও ৯০ জন আইনজীবী নেতারা ভোট আওয়ামীলীগের বাক্সে সেটা হলফ করেই বলা যায়। ২৮৭ জনের কমিটির সভাপতি সরকার হুমায়ুন কবির পেলেন মাত্র ১৯৭ টি ভোট।
কেউ কেউ বলেছেন, সরকারি দল নির্বাচনে ভয় ভীতি প্রহসন করে ভোট আদায় করেছেন। কিন্তু দৃশ্যমান সে রকম কিছু দেখা যায়নি। তবে সেটা না হয় বিএনপির সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের ভোট সরকারি দল ছিনিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু ফোরামের ৯০ জন নেতার ভোট কিভাবে নিয়ে গেল তার উত্তর কারো কাছেই পাওয়া যায়নি। তবে এসব বিষয় নিয়ে এখনও বিএনপির আইনজীবীরা সংবাদ মাধ্যমে মুল খুলেননি। নির্বাচনের পর ফোরামের দুই গ্রুপের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করলেও কোন ধরনের সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। মুুলত এসব কারনে এখন নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন ফোরামের শীর্ষ আইনজীবী নেতারা। অনেকেই বলেছেন এবারের নির্বাচনে ফোরামের শীর্ষ আইনজীবী নেতাদের অনেকেই দলীয় প্যানেলে ভোট দেয়নি। আবার যদি সরকারি দল জোর করে বিএনপি আইনজীবী নেতাদের ভোট ছিনিয়েই নেয় তাহলে তারা কিসের নেতা যারা নিজেদের ভোটের অধিকার রক্ষা করতে পারেন নাা। সব মিলিয়ৈ তারা সব দিকেই ব্যর্থ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০২০ সালের কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে আবারো সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া। সমিতির ১৭টি পদের মধ্যে কার্যকরী সদস্য পদে অ্যাডভোকেট আহসান হাবিব ভূঞা বিএনপির প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র একজন। বাকি ১৬টি পদে আওয়ামী প্যানেলের প্রার্থীরা বিশাল জয় পেয়েছেন।
২৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত ২টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির গঠিত নির্বাচন কমিশন এ ফলাফল ঘোষণা করেন। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৯২৬ জন আইনজীবী। এতে ৯১০ জন আইনজীবী তাদের ভোট প্রদান করেন। নির্বাচনে সভাপতি পদে আওয়ামীলীগ প্যানেলের প্রার্থী ও বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল পেয়েছেন ৬৯৪ ভোট। তার প্রতিদ্বন্ধি বিএনপির প্রার্থী সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির পেয়েছেন মাত্র ১৯৭ ভোট। হাসান ফেরদৌস জুয়েল এবার সমিতির রেকর্ড সংখ্যক ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
এদিকে একইভাবে রেকর্ড সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে সেক্রেটারি পদে আওয়ামীলীগ প্যানেল থেকে সমিতির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া ৬২৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় বারের মত সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্ধি বিএনপি প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির পেয়েছেন মাত্র ২৬১ ভোট।
সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আওয়ামীলীগ প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আলী আহাম্মেদ ভূইয়া ৫৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্ধি বিএনপি প্যানেলের প্রার্থী ও বর্তমানে সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম খান রেজা পেয়েছেন ৩৩০ ভোট। সহ-সভাপতি পদে আওয়ামীলীগ প্যানেলের অ্যাডভোকেট বিদ্যুৎ কুমার সাহা ৪৯১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্ধি বিএনপি প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট গিয়াসউদ্দীন মিয়া পেয়েছেন ৩৮৬ ভোট।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান আওয়ামীলীগ প্যানেল থেকে দ্বিতীয় বারের মত নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ৬৬০ ভোট। তার প্রতিদ্বন্ধি বিএনপি প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহিদুর ইসলাম টিটু পেয়েছেন মাত্র ২৩০ ভোট।