সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর রাজনীতিতে জড়িত থাকার পরেও মহানগর যুবদলের কমিটিতে না রাখায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি পারভেজ মল্লিক। বিশেষ করে তিনি অভিযোগ করেছেন- মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুুদুুল আলম খন্দকার খোরশেদের চাটুকার শ্রেণির হয়ে পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি না করায় প্রতিহিংসার ফলে তাকে জেলা যুবদলের রাজনীতি করতে বাধ্য করেছে। তবে তিনি এবার মহানগর যুবদলের রাজনীতিতে ফিরতে চান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি পারভেজ মল্লিক বলেন, আমি সিটি কর্পোরেশনের ১৬নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা। আমি পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি করিনা, তাই আমাকে জেলা যুবদলে যেতে বাধ্য করেছে। আমি ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে চাই। আমি মহানগর যুবদলের সঙ্গে রাজনীতি করতে চাই। আমি প্রতিহিংসার শিকার। আমি কখনও কোন পরিবারের বাজার টানার রাজনীতি করবো না। আমি মহানগরীতে রাজনীতি করি, আমি আমার ন্যায্য অধিকার চাই।
তিনি আরও বলেন, মহানগর যুবদলের সভাপতি টিম খোরশেদ নামে করোনায় কাজ করেছেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানের নামে, বেগম খালেদা জিয়ার নামে, তারেক রহমানের নামে সে একটি কাজও করেনি। সেলিম ওসমানের কাছ থেকে দশ লাখ টাকার চেক আসবে, মডেল গ্রæপ থেকে চেক আসবে, তাই নাম দিয়েছেন টিম খোরশেদ। তাহলে যুবদলের সভাপতি হয়ে জিয়াউর রহমানের নাম কোথায়? বেগম খালেদা জিয়া, তারেক জিয়ার নাম কোথায়? দলের নাম একমুঠো চালও তিনি দেননি। তাহলে তিনি কি করে যুবদলের সভাপতি পদে থাকেন?
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন সদর থানার প্রতিটি ওয়ার্ডের যুবদল নেতাদের মাঝে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেছে মহানগর যুবদল। ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকেলে শহরের দেওভোগ এলাকার খন্দকার টাওয়ারে এই তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করা হয়। ওই অনুুষ্ঠানে পারভেজ মল্লিক এসব কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সভাপতি মমতাজ উদ্দীন মন্তু এসব তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেন।
এতে প্রধান বক্তা হিসেবে মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাগর প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি ও বন্দর থানা যুবদলের সেক্রেটারি আহাম্মদ আলী, মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হক রানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জরুল আলম মুছা।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন এবং উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক সেন্টু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আল ইমরান শামীম, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, সদস্য শাহজালাল কালু, ওয়ার্ড যুবদল নেতা হামীম আহম্মেদ রাসেল, ফখরুল ইসলাম, রোমান, দুলাল, শাহিন সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
এ ছাড়াও মহানগর যুবদলের সঙ্গে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি পারভেজ মল্লিক ও জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব রহমান।
একই সঙ্গে মহানগর যুবদলের এই কর্মসূচিতে মিছিল নিয়ে যোগদান করেন মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নিক্সন খান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মমতাজ উদ্দীন মন্তু বলেন, সামনে যুবদলের কমিটিতে কোন ভাইয়ের লোক স্থান পাবে না। কারো ব্যক্তিগত ঘরের লোক স্থান পাবে না। যারা রাজপথে সক্রিয় ভুমিকা রেখেছেন তারা যুবদলের কমিটিতে থাকবেন। রাজপথে যারা আন্দোলন সংগ্রাম করে নির্যাতিত হয়েছেন তাদেরকে নিয়েই যুবদলের কমিটি হবে। কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হবে।
মমতাজ উদ্দীন মন্তু জানান, মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান ও সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দীনের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। তারাও পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়েই মহানগর যুবদলের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন করা হবে। এ সময় তিনি আগামী দুই দিনের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ ফরম পূরণ করে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা সাগর প্রধান বলেন, কেউ কেউ ত্যাগীদের বাদ দিয়ে যুবদলের কমিটি গঠনের পায়তারা করেছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় সেই পায়তারা ব্যস্তে গেছে। তারা যুবদল নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে ফরম বিতরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই নির্দেশমত কাজ করছি। কমিটি কারো ব্যক্তি স্বার্থে হবে না। ঘরে বসে কমিটি হবে না। কোন গোজামিলের কমিটি হবে না।
সাগর প্রধান বলেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে আমি সব সময় প্রতিবাদ করেছি। আমার এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।
মহানগরীর এলাকায় বসবাসরত নেতারা জেলা যুবদলে যাওয়ার বিষয়ে সাগর প্রধান বলেন, যারা মহানগরীতে বসবাস করেন মহানগরীর রাজনীতিতে জড়িত তারা কেন জেলা যুবদলের সঙ্গে থাকবে? এবিষয়টি কেন্দ্রে আমরা জানিয়েছি। কেউ কারো গ্রæপের নয়, বলয়ের নই, তাই বলে তাকে কমিটিতে রাখা হবে না সেটা আর হতে দেয়া হবে না।
সভাপতির বক্তব্যে মনোয়ার হোসেন শোখন বলেন, আমাদের সভাপতি (মাকসুুদুুল আলম খন্দকার খোরশেদ) ঘরে বসে নেতাকর্মীদের ডেকে ডেকে এনে ফরম তুলে দিচ্ছেন। তার সময় শেষ। তিনি কেন্দ্রকে বলেছেন তিনি মহানগর যুবদল আর করবেন না। তিনি বলেছেন তিনি কমিউনিস্ট পার্টি করতেন, তাই যুবদল নেতাকর্মীদের প্রতি তার দরদ কম। তিনি নেতাকর্মীদের খোজ খবর নেন না। তিনি রাজপথের ভাল ভাল নেতাদের ভাল ভাল পদ দেননি। তিনি যেনো লোকজনকে বড় বড় পদে বসিয়েছেন।
শোখন কঠোর ভাষায় বলেন, সামনে কারো ব্যক্তিগত চামচা, বাজার টানাটানির লোক, ড্রাইভার হেলপার হোল্ডিং ছাড়া ব্যক্তিদের দিয়ে মহানগর যুবদলের কোন কমিটি হবে না।
বিশেষ অতিথি আহাম্মদ আলী বলেন, স্বৈরচারি মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রথমে যুদ্ধ করতে নেমেছেন সাগর প্রধান। কদিন আগে দেখেছেন সভাপতি তার বাড়িতে বসে ফরম বিতরণ করেছেন। যুবদল কারো ব্যক্তিগত সংগঠন নয়। কারো ঘরে বসে বাড়িতে বসে ফরম বিতরণ করা হবে কেন? যত কর্মসূচি হবে রাজপথে হবে। রাজপথের নেতাকর্মীদের মাধ্যমেই কমিটি হতে হবে।
আহামম্মদ আলী মহানগর যুবদলের সভাপতি খোরশেদকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমাকে নিয়ে আপনার এলার্জি। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেউ কেউ দেখে তার বাড়ির বাজার করে দিল কিনা। এখন আপনি আমাকে মাইনাস করে দিতে চান। সেটা ভাল কথা। কিন্তু বন্দরের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যদি আমার চেয়ে কেউ ত্যাগী হয়, আমার চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়, আমার চেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়, আমার পরিবারের চেয়ে কারো পরিবার যদি পুুরোপুরি বিএনপির হয়ে থাকে তাহলে তার হাতেই বন্দরের নেতৃত্ব তুলে দিন। আমাকে তাকে স্বাগরে গ্রহণ করবো। কিন্তু কেউ যদি আমার চেয়ে কম যোগ্যতা এবং কম নির্যাতিত হয় আর তার হাতে কমিটি তুলে দিবেন সেটা আমরা মেনে নিবো না। আমার চেয়ে ত্যাগী নির্যাতিত সক্রিয় নেতা যার হাতে বন্দর থানার নেতৃত্ব দিবেন তেমন নেতা আমি দেখি না।
মঞ্জরুল আলম মুছা বলেন, বাড়ির আমলা-কামলা, গাড়ির ড্রাইভার, পিয়নদের নিয়ে কমিটি আর হতে দেয়া হবে না। ত্যাগী নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা করা হলে আমরা রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে বাধ্য হবো।