সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারও নৌকার প্রার্থীকে আওয়ামীলীগের বিজয়ী করার প্রস্তুতির চেয়ে পরাজিত করার প্রস্তুতি বেশ শক্ত। জাতীয়পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার নির্দেশনায় ঐক্যের মধ্যে রয়েছে জাতীয়পার্টি। মাঠে না থাকলেও নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও এখানকার বিএনপির অবস্থান নড়বড়ে।
এখানকার নির্বাচনী লড়াইয়ের চিন্তাও আপাতত বিএনপির নাই। তবে রাজনৈতিকভাবে হাল ছাড়তে নারাজ বিএনপি। এখানে নৌকা ও লাঙ্গলের দুই প্রার্থী থাকলে সুযোগ কাজে লাগানোর প্রস্তুতিও বিএনপির রয়েছে বেশ। ফলে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছেন বিএনপির নেতারা। কিন্তু উপজেলা বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার অনুসারিরা রয়েছেন দুই সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রচারণায়।
সূত্রমতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিএনপি নেতা লায়ন শফিকুল ইসলাম নয়নের পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম মান্নান অনুগামী নেতাকর্মীরা। তবে গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন এবারও নির্বাচন করবেন বলে সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
মোশারফ হোসেন বলেছেন, দলের কঠিন সময়েও আমি দলের ধানের শীষ প্রতীকের ঝান্ডা তুলে ধরতে চাই। জয় পরাজয় বিষয় নয়। মানুষ ভোট দিতে পারলে যে কোন নির্বাচনে বিএনপির জয় নিশ্চিত। আমরা নির্বাচনে লড়াই করবো। আমি এবারও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।
ভিন্ন সূূত্রে জানাগেছে, মোশারফ হোসেন মুুলত রাজনীতি করছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফরের বলয়ে। জেলা ও উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তারা মান্নানের বিপক্ষে কাজ করে আসছেন। যে কারনে মোশারফ হোসেনের দিক থেকে মান্নানের সুনজর সরে গেছে। এখানে নয়নকে মনোনয়ন দেয়া হলে জাফর অনুগামীরা থাকবেন বিপক্ষে। আবার মোশারফ নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে মান্নানের লোকজন থাকবেন ধানের শীষের বিপক্ষে। ফলে ধানের শীষ প্রতীককে পরাজিত করার প্রস্তুতিও বেশ জোরালো।
এদিকে উপজেলা ও পৌর জাতীয়পার্টিতে রয়েছে ঐক্য। স্থানীয় জাতীয়পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার নির্দেশনায় এই ঐক্য জোরালো। এমপি খোকার সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকতকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে জাতীয়পার্টি। প্রায় প্রতিদিন পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মীসভা করছেন উপজেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ডালিয়া লিয়াকত। একই সঙ্গে প্রতিটি ওয়ার্ডে মহিলা পার্টির কমিটিও গঠন করছেন তিনি। এসব কর্মকান্ডে সঙ্গ দিচ্ছেন এমপি খোকা নিজেও। অনেক কর্মকান্ডে মঞ্চে এখন ডালিয়া লিয়াকত।
এসব কর্মীসভায় দাবি ওঠেছে ডালিয়া লিয়াকতকেই জাতীয়পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী করা হোক। লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন ডালিয়া লিয়াকত সেটা প্রায় নিশ্চিত। কারন সুবজ সংকেত না পেলে একজন এমপির সহধর্মিনীকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকতো না। তলে তলে চেষ্টা চলছে এখানে যেনো নৌকা প্রতীক না দেয়া হয়। তাহলে লাঙ্গলের জয় সিংহভাগ নিশ্চিত হয়ে যায়। নৌকার প্রার্থী দিলেই হবে কঠিন লড়াই।
অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য প্রস্তুত। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু এখানে আরও বেশকটি বলয় বা গ্রুপ রয়েছে। যাদের কারনে খন্ডখন্ড আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
তবে সোনারগাঁও পৌরসভার গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাদেকুর রহমানের জয়ে ডুবেছিল নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বীর বিজয়। এমনটা সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন পৌরসভার লোকজন। এর আগের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না হলেও দলীয় সমর্থিত প্রার্থী গাজী মজিবুর রহমানের বিজয় ঠেকিয়েছিল বিএনপি জামাত সমর্থিত প্রার্থী সাদেকুর রহমান। যেখানে দলীয় নেতাকর্মীরাও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে সাদেকের পক্ষে কাজ করেছিলেন। এবার নৌকা ডুবাতে প্রস্তুত লাঙ্গল।
এখানকার জাতীয়পার্টির রাজনীতিতে রয়েছেন বিএনপি ও আওয়ামীলীগ থেকে দলছুট নেতারা। যারা বিগত সময় পৌরসভার সুুবিধাভোগী তারাই এখন জাতীয়পার্টির সঙ্গে ক্ষমতার স্বাদ নিতে গা ভাসিয়েছেন। যদি নির্বাচনে নৌকার প্রতীকের প্রার্থী না দেয়া হলে জাতীয়পার্টি থেকেই এখানে মেয়র হতে যাচ্ছেন। যেখানে আলোচনায় ডালিয়া লিয়াকত। আর নৌকার প্রার্থী দিলেও খন্ডখন্ড বিভক্তির কারনে নৌকা ডুবাতে প্রস্তুত আওয়ামীলীগের বিভিন্ন বলয়ের নেতাকর্মীরাও। ফলে নৌকা এখানে আবারো ডুবতে যাচ্ছে সেটা প্রায় অনেকাংশে বলা যায়।
নির্বাচনের এখনও তফসিল ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে তার আগেই সরকারি দল আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় নেমেছেন ৪ নেতা। একই সঙ্গে বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান ভুঁইয়া কয়েক মাস আগেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি এবারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন এবং এবারও তিনি নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চাইবেন।
এমন পরিস্থিতিতে সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম বেশকজন সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম খুঁজে পেয়েছে। যাদের মধ্যে পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝড়া ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান। এই মনোনয়ন প্রত্যাশিরা নিয়মিত কর্মীসভা, প্রচারণা, উঠান বৈঠক করছেন। নিজেদের মাঠ গুছানোর সঙ্গে জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশিরা।
স্থানীয়রা জানান, ইতিমধ্যে পরোদস্তর নির্বাচনী মাঠে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে পরাজিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী। এবারও তিনি উঠান বৈঠক ও নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছেন। তিনি মুলত নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামীলীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ভগ্নিপতি। গত নির্বাচনে ফজলে রাব্বীর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বেশ জোড়ালো ভুমিকা রেখেছিলেন এমপি বাবু। ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের সুদৃষ্টিতে ছিলেন না রাব্বী। কারন নির্বাচনের আগেই আমিনপুুর মাঠে স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকাকে নিয়ে বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমানের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেন শামীম ওসমান। যে কারনে আওয়ামীলীগের সিংহভাগ নেতাকর্মী ও জাতীয়পার্টি সাদেকুর রহমানের পক্ষ নিলে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পরাজয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মেয়র সাদেকুর রহমান নির্বাচিত হোন।
এ ছাড়াও গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত জোড়ালো ভুমিকায় ছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফজলে রাব্বীর দিকে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের সুদৃষ্টিও ফজলে রাব্বীর দিকে ছিল না। যে কারনে কালামের লোকজনকে নৌকার পক্ষে জোড়ালো দেখা যায়নি। বিদ্রোহী প্রার্থী সাদেকুর রহমানের পক্ষেই ছিলো আওয়ামীলীগের অধিকাংশ।
তবে ফজলে রাব্বী এবার ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী দুই এমপি একেএম শামীম ওসমান ও এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর সম্পর্কে আগের মত দূরত্ব নেই। তাদের সমর্থনের দিকেই কাজ করছেন রাব্বী। বিভিন্ন উঠান বৈঠকের ব্যানারে শামীম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবুর ছবি ব্যবহার করছেন তিনি। যদিও ২৬ সেপ্টেম্বর নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে মির্জা আজমের কাছে গিয়ে নানা অভিযোগ দিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা। ফলে এবার ফজলে রাব্বীর বিষয়টি আরো জটিল হয়ে গেল।
একইভাবে মাঠে রয়েছেন গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন বঞ্চিত গাজী মজিবুর রহমান। তিনি এবার দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। গত নির্বাচনের আগের নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের সমর্থিত প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করলেও তিনি আওয়ামীলীগের কোন্দলের কারনে পরাজিত হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে নির্বাচিত হোন ওই নির্বাচনের বিএনপি জামাতের সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান।
ইতিমধ্যে সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতকে নিয়ে একটি কর্মী সভা করেছেন গাজী মজিবুর রহমান। ওই সভার পর খবর বেরিয়েছে কায়সার হাসনাত গাজী মজিবুর রহমানকে সমর্থন দিয়েছেন। যদিও পরদিন বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করে কায়সার হাসনাত বলেছেন, দলের প্রধান যাকে নৌকা তুলে দিবেন সেই হবে সকলের প্রার্থী। যদিও প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে গাজী মজিবুর রহমানকে কায়সার কালাম বলয়ের সঙ্গেই দেখা গেল।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছগীর আহম্মেদ। আওয়ামীলীগের এই নেতা কয়েক বছর ধরেই নির্বাচনকে টার্গেট করে কাজ করে আসছিলেন। উপজেলা ও জেলা আওয়ামীলীগের কারো সাথেই তার খারাপ সম্পর্ক নেই। সকল বলয়ের নেতাদের সঙ্গেই তিনি সুসম্পর্ক রেখে কাজ করছেন এবং মাঠ গুছানোর কাজটিও করে যাচ্ছেন টানা কয়েক মাস ধরে।
এদিকে রাজধানীতে বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে দলের জন্য রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সোনারগাঁয়ের সন্তান নাসরিন সুলতানা ঝরাও নেমেছেন নির্বাচনী মাঠে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বদরুন্নেছা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। কয়েক মাস ধরেই তিনি পুরোদমে নির্বাচনী মাঠে। স্থানীয় আওয়ামীলীগের সঙ্গে তার তেমন কোন বিরোধের খবর পাওয়া যায়নি। তবে তার জেলা পর্যায়ে সে রকম লবিং নেই। তিনি কেন্দ্রীয় লবিংয়ের উপর নির্ভর করেই নৌকা প্রতীকের আশায় নেমেছেন। সেই সঙ্গে মাঠ গুছানোর কাজ করছেন। এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত কার হাতে ওঠতে যাচ্ছে নৌকা প্রতীক। নাকি নৌকার প্রার্থী না দিয়ে জাতীয়পার্টিকেই ছাড় দিতে যাচ্ছে এই পৌরসভাটি সেটা দেখার অপেক্ষায় পৌরবাসী।