সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে উদ্দেশ্য করে সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তু বলেছেন, কাচের ঘরে বসে টিনের চালে ঢিল ছুড়বেন না। তাহলে নিজেই ভেঙ্গেচুরে চুরমার হয়ে যাবেন। আমরা মুখ খুললে আপনি মুখ দেখাতে পারবেন না। আপনি যে খেলা শুরু করেছেন সেই খেলা বন্ধু করুন। নতুবা আমরা মুখ খুলতে বাধ্য হবো।
১২ অক্টোবর সোমবার সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় মমতাজ উদ্দীন মন্তু সভাপতি খোরশেদকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, মনে রাখবেন রক্ত কখনও ভাগ হয়না। চাচা ভাতিজার শরীরে একই রক্ত। আমার ভাতিজা রাজনীতি করবে আমার সঙ্গে। আমরা চাচা ভাতিজা রাজপথে যুবদলের রাজনীতি করবো। এখানে এসে কোন অপকৌশল নেয়ার চেষ্টা করবেন না। নোংরামী করার চেষ্টা করবেন না।
তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সঙ্গে মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভের বৈঠকে আপনার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছিল এবং যা যা ঘটেছিল তা এখনও নারায়ণগঞ্জে এসে প্রকাশ করিনি। ওইসব বিষয়গুলো প্রকাশ করতে আপনি বাধ্য করবেন না। যদি প্রকাশ করি তাহলে আপনি মুখ দেখাতে পারবেন না।
এদিকে জানাগেছে, গত ৯অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির একসময়কার দাপটশালী নেতা মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেনের বাসায় যান খোরশেদ অনুগামী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সেক্রেটারি জুয়েল প্রধান। কামাল হোসেনের ছেলে মাজহারুল ইসলামকে যুবদলের তথ্য সংগ্রহ ফরম দেয়া হয়। ওই ফরম বিতরণের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কামাল হোসেন হলেন মমতাজ উদ্দীন মন্তুর আপন বড় ভাই। অর্থাৎ মাজহারুল ইসলাম হলেন মন্তুর ভাতিজা।
এই বিষয়টিকে মহানগর যুবদলের শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছিলেন, এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মমতাজ উদ্দীন মন্তু ও সাগর প্রধানের এলাকা ৮নং ওয়ার্ডে গিয়ে ফরম বিতরণ করেছিলেন খোরশেদ অনুগামীরা। বিষয়টি মন্তু ও সাগর প্রধানকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দেয়। যার ফলে মন্তু ও সাগর প্রধান সিদ্ধিরগঞ্জে পাল্টা কর্মসূচি করতে বাধ্য হয়। এবার কামাল হোসেনের ছেলের হাতে ফরম তুলে দিয়ে মন্তুর ঘরের টিনের চালে ঢিল ছোড়ার মত কান্ডটা করা হলো। এসব উস্কানীমুলক কর্মকান্ডের কারনে যুবদলের বিরোধ আরও বেড়ে যায় বলেও মন্তব্য করেন ওই নেতা।
অন্যদিকে নেতাকর্মীরা বলছেন- মুলত মহানগর যুবদলের বিরোধকে কেন্দ্র করে মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তুকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করছেন মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও তার অনুগামীরা। এর আগে সুপার ফাইভের ৫নেতার মধ্যে তিনজনই খোরশেদের বিরুদ্ধে শক্তি সঞ্চার করে বিপরীতে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনটি থানায় তারা ব্যাপক পরিসরে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেন। যার পাল্টা কর্মসূচি খোরশেদ পালন করতে পারেননি।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, মহানগর যুবদলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের বিষয়ে সম্প্র্রতি মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভের সঙ্গে কেন্দ্রীয় যুবদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক থেকে জমা দেয়ার পর কমিটির খসড়াগুলো ফেরত দেয়া হয়। সেই সঙ্গে নানা দিকনির্দেশনা দিয়ে যুবদল নেতাদের তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণের জন্য ফরম তুলে দেয়া হয়। ওই বৈঠকে মহানগর যুবদলের শীর্ষ তিন নেতা খোরশেদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন।
সেখানে তারা অভিযোগ করেন- করোনাকালে খোরশেদ যুবদলের ব্যানারে কোন কর্মসূচি পালন করেননি। তিনি টিম খোরশেদ নাম দিয়ে ব্যক্তি প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। এখনও তিনি তাই করছেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের নামও করোনাকালে মুখে নেননি। অথচ সরকারি দলের এক এমপির বক্তব্যকে খেতাব হিসেবে নিয়ে নাচানাচি করেছেন তিনি। এমপি সেলিম ওসমানের কাছ থেকে দশ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে ওই এমপির কাছ থেকে সামগ্রীও গ্রহণ করেছেন। দলীয় আদর্শ নীতি নৈতিকতা ভুলে সেই এমপিকে আবার ধন্যবাদও দিয়েছেন খোরশেদ। তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন। এ ছাড়াও হাজারো অভিযোগ তোলা হয় ওই বৈঠকে যেগুলো নারায়ণগঞ্জে এসে নেতাকর্মীদের না জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় যুবদল নেতারা নির্দেশ দেন।
ওই ফরম গত ১৫ সেপ্টেম্বর সভাপতি খোরশেদের বাসায় বিতরণ করা হয়। যেখানে সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর উপরোক্ত তিন নেতা ছাড়াও মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হক রানা, আহাম্মদ আলী, যুগ্ম
সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হোসেন মিলে বন্দরে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেন।
এই ঘটনার পর ১৮সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের ৮নং ওয়ার্ডে সভাপতি অনুগামী মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু প্রধান অতিথি এবং মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ অপু, ইকবাল হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সেক্রেটারি জুয়েল প্রধান মিলে ফরম বিতরণ করেন। এই ওয়ার্ডেই সেক্রেটারি মন্তু ও যুগ্ম সম্পাদক সাগর প্রধানের নিজ এলাকা।
২১ সেপ্টেম্বর ১০নং ওয়ার্ডে সুপার ফাইভের ওই তিন নেতা ছাড়াও মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি জুয়েল রানা, আহাম্মদ আলী, নাজমুল হক রানা মিলে যুবদল নেতাদের মাঝে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেন। ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক পর্যায়ে একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মমতাজ উদ্দীন মন্তু। তিনি বলেছেন, ‘১৮ সেপ্টেম্বর ৮নং ওয়ার্ডে যুবদলের কোন প্রোগ্রাম হয়নি। ওটা ছিল মাদকসেবীদের মিলন মেলা। ছবিতে দেখেছি মঞ্চের ৭ জনের মধ্যে ৬জনই মাদকসেবী। কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্দেশনা রয়েছে যুবদলে মাদকসেবীদের রাখা যাবে না।’
এই কর্মসূচির পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর মহানগরীর দেওভোগ এলাকায় সদর থানায় যুবদলের নেতাদের মাঝে তথ্য সংগ্রহ ফরম বিতরণ করেন মন্তু। যেখানে সকল পূর্বের সকল নেতারা উপস্থিত থাকলেও জুয়েল রানা সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন না। মন্তুর নেতৃত্বে এসব কর্মসূচিগুলোতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যায়।