সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের জন্মদিন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভাংচুরের অভিযোগ ওঠেছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে এই হামলা ভাংচুরের অভিযোগ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আসা ৩০ জন নেতাকর্মী এই হামলায় আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহামুদুুর রহমান মান্নার গাড়ি ভাংচুর করা হলেও তৈমূর আলম খন্দকারের গাড়িটি অক্ষত রয়েছে। তৈমূর আলমের গাড়িটিতে কেউ আঘাত না করলেও মান্নার গাড়ি ও অনুষ্ঠানে আসা নেতাকর্মীদের বেশকটি মটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। তবে একই সঙ্গে অনুষ্ঠানের সকল নেতাদের বক্তব্য শেষে এবং অনুষ্ঠানের শেষে এই হামলা নিয়েও রহস্য তৈরি হয়েছে রূপগঞ্জবাসীর মাঝে।
জানাগেছে, ১৯ সোমবার বিকেলে রূপগঞ্জের রূপসী খন্দকার বাড়িতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেছেন জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন। অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে বসেছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার ও তার মেয়ে মার-ই-য়াম খন্দকার। মার-ই-য়াম খন্দকার বক্তব্যও রাখেন অনুষ্ঠানে।
অভিযোগ করা হয়েছে- এ সময় মঞ্চ থেকে টেনে-হিঁচড়ে মাটিতে ফেলা হয় তৈমূর আলম খন্দকার, তার মেয়ে ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম খন্দকার, নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর মান্নাসহ অনেককে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে অনুষ্ঠানের ওই মঞ্চে থাকা চেয়ার টেবিল ও সাউন্ড সিস্টেম।
তৈমূর আলম খন্দকারের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) তুহিন পারভেজ আলাল জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের রোগমুক্তি কামনা, তৈমূর আলম খন্দকারের জন্মদিন উপলক্ষে রূপসী খন্দকার বাড়িতে দোয়ার আয়োজন করা হয়। বিকেল ৪টার মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত হন মাহমুদুর রহমান মান্না, তৈমূর আলম খন্দকার, তার মেয়ে মার-ই-য়াম সহ অনেকেই। ওই সময়ে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকজন অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। উপস্থিত লোকজনদের একের পর এক মারধর করতে থাকে। মঞ্চ থেকে নেতাদের ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়া হামলাকারীরা সেখানে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। আকস্মিক এ হামলায় লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এভাবে একটি হামলা ন্যক্কারজনক।
কখন হামলা চালানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করেন- অনুষ্ঠানের শেষের দিকে এই হামলা চালানো হয়। মান্নার গাড়িটি ভাংচুর করা হলেও তৈমূর আলম খন্দকারের গাড়িটি কেন অক্ষত রয়েছে জানতে চাইলে আলাল দাবি করেন- তৈমূর আলমের বাড়ির পেছনের দিকে মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বাড়ির সামনে ছিল তৈমুর আলমের গাড়িটি! যে কারনে তার গাড়িটি হামলাকারীরা ভাঙ্গতে পারেনি।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত তাদের কাছে হামলার কোনো খবর আসেনি। তবে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে অতীতের সূত্র থেকে জানাগেছে, ২০১২ সালের দিকে তৈমূর আলম খন্দকারের বাড়ি থেকে প্রয়াত বিএনপি নেতা জান্নাতুল ফেরদৌস, মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল, বিএনপি নেতা সুরুজ্জামান, নুরুল হক চৌধুরী দিপু রূপসী খন্দকার বাড়ি থেকে জঙ্গল দিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন তৈমূর আলম খন্দকারের লোকজনদের হামলার দ্বারাই। ওইদিন প্রয়াত নেতা জান্নাতুল ফেরদৌসের পাঞ্জাবী ছিড়ে দিয়েছিল তৈমূর আলমের লোকজনই।
ঘটনা সূত্রে আরও জানাগেছে, ওইদিন রূপগঞ্জ থেকে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণার জন্য রূপগঞ্জে তৈমূর আলমের বাড়িতে মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়। ওই বিষয়টি মহানগরীর নেতারা জানতে পেরে তৈমূর আলম খন্দকারকে নিয়ে দেওভোগ চারুকলা মাঠে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় তৈমূর আলম খন্দকারকে সদর আসন থেকেই নির্বাচন করতে হবে এবং এই ঘোষণা দিয়ে রূপগঞ্জের নেতাদেরকে কাজী মনিরের হাতে তুলে দেয়ার ঘোষণা দিবেন তৈমূর।
এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সকল নেতারা রূপগঞ্জে যান। ওইদিন কাজী মনিরকে তৈমূরের বাড়িতে ঠেকে আনলে তৈমূর আলম সদর আসন থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে তার নেতাকর্মীরা চেয়ার ভাংচুর করেন এবং তৈমূর আলমের গাড়ির সামনে শুয়ে থেকে আত্মাহত্যার চেষ্টার নাটক সাজান। রাস্তায় শুয়ে নেতাকর্মীরা দাবি করেন রূপগঞ্জ থেকেই তৈমূর আলমকে নির্বাচন করতে হবে। ওইদিন কাজী মনিরকেও নাজেহাল করেছিলেন তৈমূর আলমের লোকজন।
এদিকে নতুন করে জানাগেছে, তারাব পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে তৈমূর আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম খন্দকারকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তৈমূর আলম। তবে সোমবার রূপসী খন্দকার বাড়ির অনুষ্ঠানে কাদের নেতৃত্বে এবং কারা কারা এই হামলায় জড়িত ছিল তাদের নাম বলতে চাননি অভিযোগকারীরা। এসব কারনে বেশ রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে এই হামলার ঘটনাটিও।