এমপি খোকার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের জাতীয়পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকতকে সোনারগাঁও পৌরসভার মেয়র পদে বসাতে তিনি ইতিমধ্যে মাঠ গুছানোর চেষ্টায় নেমেছেন। প্রাথমিক ধাপে তিনি বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমানের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হলেও নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের প্রশ্নে এমপি খোকার সামনে দেখা দিয়েছে বিরাট চ্যালেঞ্জ। কারন পৌরসভা নির্বাচনে তার সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকত বিজয়ী হলে সোনারগাঁয়ের সিংহভাগ রাজনীতি চলে যাবে এমপি খোকার মুঠোবন্ধিতে। কিন্তু এর ব্যতয় ঘটলে সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে চরম হোচট খাবেন এমপি খোকা। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ও এমপি একেএম শামীম ওসমানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে সেটা ওপেন সিক্রেট। সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন বিষয়ে এমপি খোকার সুবিধার্থে পেছন থেকে শামীম ওসমান কাজও করে আসছেন। গত পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বীর বিপক্ষে ছিলেন এমপি শামীম ওসমান ও এমপি খোকা সেটাও যেমন ওপেন সিক্রেট, তেমনি এবারের নির্বাচনে ডালিয়া লিয়াকতের মেয়র প্রার্থী হওয়ার পেছনে এমপি শামীম ওসমানের হাত রয়েছে কিনা কিংবা শামীম ওসমান এবার নৌকার পক্ষেই জোড়ালো ভুমিকা নিবেন কিনা সেই বিষয়টি নিয়েই পৌরবাসীর মাঝে সবচেয়ে কৌতহল।

এদিকে পৌরবাসীর মাঝে জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠে ছড়িয়ে দিয়েছেন ডালিয়া লিয়াকতকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণার পূর্বে এমপি শামীম ওসমানের সবুজ সংকেত নেয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যেই এমপি খোকা ডালিয়া লিয়াকতকে নিয়ে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু নৌকা প্রত্যাশি ও আওয়ামীলীগ নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, ডালিয়া লিয়াকতকে পৌর মেয়র প্রার্থী ঘোষণার পূর্বে শামীম ওসমানের সঙ্গে কোন পরামর্শ এমপি খোকা করেননি। এ বিষয়ে নাখোশ এমপি শামীম ওসমান। শামীম ওসমান এবার নৌকার পক্ষে স্টেপ নিবেন। নতুবা চুপসে থাকবেন। এমন বিষয়টি আদৌ সত্য হলে এমপি খোকার সামনে ঘোর অন্ধকার।

সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে শামীম ওসমান কেন বরাবরই আলোচনায় আসছে সেই বিষয়ে আওয়ামীলীগের অনেক নেতা বলেছেন, মুলত গত নির্বাচনের পূর্বে আমিনপুুর মাঠে এমপি শামীম ওসমান ও এমপি খোকা বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমানের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু এমপি নজরুল ইসলাম বাবু ও সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের পছন্দের প্রার্থী এটি ফজলে রাব্বীর জন্য কাজ করেন এবং রাব্বীকেই নৌকা প্রতীক তুলে দেয়া হয়।

ওই নির্বাচনে এমপি শামীম ওসমান ও এমপি খোকার পছন্দের প্রার্থী সাদেকুর রহমানই যোগ্য প্রার্থী সেই বিষয়টি প্রমাণ করতে গিয়ে তারা নৌকার পক্ষে জোড়ালো ছিলেন না এবং সাদেকুর রহমানের পক্ষেই ছিলেন সেটাও ওপেন সিক্রেট ছিল। একই সঙ্গে সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগের বিশাল অংশের নেতাকর্মীরা সরাসরি এমপি শামীম ওসমানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যে কারনে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও নৌকার বিপক্ষে গিয়ে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাদেকুর রহমানের পক্ষে কাজ করেন এবং সাদেকুর রহমান মেয়র নির্বাচিত হোন। সেই থেকে সেখানকার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মতামত শামীম ওসমান যেদিকে থাকবেন সেই প্রার্থীর জয় নিশ্চিত।

এদিকে ১৭অক্টোবর শনিবার সোনারগাঁয়ে এসেছিলেন জাতীয়পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি। উপজেলা ও পৌর জাতীয়পার্টির সম্মেলনে ডালিয়া লিয়াকতকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণার দাবি ওঠে। কিন্তু জিএম কাদের এখনই প্রার্থী ঘোষণা করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষার কথা বলেন। যার ফলে জাতীয়পার্টির লাঙ্গল প্রতীক আনাটাও বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে ডালিয়া লিয়াকতের জন্য। তবে ইতিমধ্যে পৌর নাগরিক কমিটি ডালিয়া লিয়াকতকে নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে আগাম ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান। কেউ কেউ জানিয়েছেন নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবেও দেখা যেতে পারে ডালিয়া লিয়াকতকে।

অন্যদিকে নৌকার লড়াইয়ে মাঠে গরম করে রেখেছেন বেশকজন মনোনয়ন প্রত্যাশি। যাদের মধ্যে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহাম্মেদ, গত নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী ফজলে রাব্বী, গাজী মজিবুর রহমান ও নাসরিন সুলতানা ঝরা। পুরোদমে নির্বাচনী মাঠ তারা গরম করে রেখেছেন। যার ফলে ডালিয়া লিয়াকতের জয়ের সামনে একেরপর এক বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বিরাট চ্যালেঞ্জে এমপি খোকা। যদিও পৌরবাসীর জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা বলছেন- রাজনীতি নয়, এখানে মেয়র পদে ডালিয়া লিয়াকত নির্বাচিত হলে পৌরসভার উন্নয়ন হবে। আমরা উন্নয়ন চাই। কারন এমপি খোকার সহধর্মিনী ডালিয়া লিয়াকত। এমপি খোকা এখানে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবেন। কিন্তু তার আগে তাকে মেয়র নির্বাচিত হতে হবে।