সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জমে ওঠেছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। সোনারগাঁও পৌর নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে ডালিয়া লিয়াকতের নাম ঘোষণা করেছেন বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান ভূঁইয়া ও সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মোল্লা। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ৬জন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী। বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে তিন জনের নাম শোনা গেলেও তারা এখনও নির্বাচনী প্রচারণায় নামেননি। তবে এমন পরিস্থিতিতে পৌরবাসীর মাঝে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের মনোনিত প্রার্থী হতে যাচ্ছেন? পৌরবাসীও যে যার মত করে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের মাঝে যুক্তি তুলে ধরে পৌরসভার অলিগলির চায়ের দোকানগুলো গরম রাখছেন।
এ ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশি প্রার্থীরাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে যে যার যার যোগ্যতা, দলের প্রতি তাদের ত্যাগ ও অবদানের বিষয়গুলো স্থানীয় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের কাছে তুলে ধরছেন। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারেও নিজেদের মনোনয়ন প্রাপ্তির পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই যার যার বলয় পোক্ত করতে কাজ করছেন মেয়র প্রার্থীরা। এ ছাড়াও নেতাকর্মীদের গুছিয়ে আনার পাশাপাশি ভোটারদের দ্বারে দ্বারেও দৌড়াচ্ছেন নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশি নেতারা। একদিকে নিজেদের বলয় পোক্ত করতে নেতাকর্মী ও জনগণকে সম্পৃক্ত করার কাজটি করছেন আবার নিজেদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতেও কাজ করছেন।
মুলত নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর নৌকা প্রতীকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দুই বা তিনজনের নাম চাওয়া হবে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড থেকে। উপজেলা আওয়ামীলীগ প্রার্থী বাছাই করবে। সেই প্রার্থীদের নাম জেলা আওয়ামীলীগের সঙ্গে পরামর্শ করে কেন্দ্রে জমা দিবে। তার আগে পৌর আওয়ামীলীগের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তবে অনেক সময় স্থানীয় পর্যায় থেকে নাম কারো না পাঠালেও সেইসব মনোনয়ন প্রত্যাশিরা কেন্দ্রীয় লবিংয়ের মাধ্যমে কেন্দ্রে জমা দিয়ে থাকেন। অনেক সময় স্থানীয় আওয়ামীলীগের পাঠানো নাম দেয়া কাউকে মনোনিত করাও হয়না। যেমন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় মহানগর আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মেয়র আইভীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি। কিন্তু আইভীর হাতেই নৌকা তুলে দেয়া হয়েছিল।
সূত্রমতে, পৌরসভার গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করেছিলেন জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী। তিনি নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনের তিনবারের আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর ভগ্নিপতি। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই জানিয়েছেন গত নির্বাচনে ফজলে রাব্বীর মনোনয়ন ছিনিয়ে আনার লড়াইটা করেছিলেন মুলত এমপি বাবু ও সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। যদিও শেষ পর্যন্ত ফজলে রাব্বীর জয় নিশ্চিত করতে পারেননি তারা। ওই নির্বাচনের আগেই আমিনপুর মাঠে সমাবেশ করে বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান ভূঁইয়ার হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান ও স্থানীয় জাতীয়পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। কিন্তু নির্বাচনে মনোনয়ন পান এটি ফজলে রাব্বী। মুলত নিজেদের ইমেজ রক্ষার লড়াইয়ে শামীম ওসমান ও লিয়াকত হোসেন খোকার লোকজন বিদ্রোহী প্রার্থী সাদেকুর রহমানের পক্ষেই কাজ করেছিলেন। ফলে সাদেকুর রহমান মেয়র নির্বাচিত হোন। এবারও এটি ফজলে রাব্বী নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। প্রায় প্রতিদিনই পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে সক্রিয় থাকছেন এটি ফজলে রাব্বী।
এবারও নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান। তিনি ২০১১ সালে আওয়ামীলীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনে বিএনপি জামাত সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছিলেন বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান। কিন্তু ওই নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে গাজী মজিবুর রহমান জয়ের কাছাকাছি গিয়েও পরাজিত হোন। গত নির্বাচনে মনোনয়ন চাইলেও তাকে বঞ্চিত করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গাজী মজিবুর রহমানের উপর অত্যাচার জুলুম চালানো হয়েছিল। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন গাজী মজিবুর রহমান। রাজপথে তার ভুমিকা এখনও স্বীকার করেন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। একজন ক্লিন ইমেজধারী ও স্বচ্ছ এই রাজনীতিককে মূল্যায়ণ করা হবে সেই প্রত্যাশা করছেন তার বিশাল কর্মীসমর্থক গোষ্ঠী। তার প্রতি আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের সমর্থন রয়েছে বলেও স্থানীয়দের দাবি। গাজী মজিবুর রহমান দাবি করছেন দলের প্রধান শেখ হাসিনা তাকে এবার মূল্যায়ণ করবেন।
পুরোদস্তর নির্বাচনী মাঠে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহাম্মেদ। তিনি স্থানীয় আওয়ামীলীগের নির্দিষ্ট কোন বলয়ের নন। তিনি মুলত উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সকল নেতাদের সঙ্গেই সুসম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করছেন। তার পক্ষে প্রকাশ্যেই নেমেছেন পৌরসভার আলোচিত শিল্পপতি সিআইপি ফেরদৌস ভূঁইয়া মামুন। এই ফেরদৌস ভূঁইয়া মামুন প্রতিটি পৌরসভা নির্বাচনেই মেয়র সাদেকুর রহমানকে পেছন থেকে সহযোগীতা করতেন। বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করে পৌরসভায় বেশি জনপ্রিয় এই মামুন ভুঁইয়া। তার আশীর্বাদ পেলে ছগীর আহাম্মেদের শক্তি অনেকটা বেড়ে যায়। বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে রাজধানীতে আন্দোলন সংগ্রামে ছগীর আহাম্মেদের বেশি ভুমিকাও ছিল।
বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বদরুন্নেছা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাসরিন সুুলতানা ঝরা। তিনিও পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন। যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাজমা আক্তার সহ কেন্দ্রীয় বেশকজন নেতৃবৃন্দের সুদৃষ্টিতে রয়েছেন নাসরিন সুলতানা ঝরা। তিনিও দাবি করছেন- বিএনপি জামাত জোট সরকার রাজধানীতে কঠোর আন্দোলন সংগ্রামে ভুমিকা রেখেছেন। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি একাধিকবার নির্যাতনের শিকার হোন এবং ৭বার তিনি কারাভোগ করেছেন। তিনি মনে করছেন ত্যাগের মূল্যায়ণ করা হলে তিনিই পাবেন নৌকা প্রতীক।
এদের ছাড়াও নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হোসাইন। ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গনির পক্ষের নৌকা প্রতীকের দাবিতে উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা মানববন্ধনও করেছেন। তিনিও নির্বাচনী প্রচারণায় রয়েছেন। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই জানিয়েছেন, একইভাবে মোহাম্মদ হোসাইনও নিয়মিত পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরুর সুদৃষ্টি রয়েছে মোহাম্মদ হোসাইনের দিকে। এখন দেখার বিষয় তফসিল ঘোষণার পর কার ভাগ্যে ওঠবে কাঙ্খিত নৌকা প্রতীকটি। আর সেই নৌকা প্রতীক নিয়ে নাগরিক কমিটির প্রার্থী ডালিয়া লিয়াকতের সঙ্গে লড়াই করবেন, কে সেই প্রার্থী? তার দেখার অপেক্ষায় পৌরবাসী।