সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনের বিষয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছেন আওয়ামীলীগ ঘেঁষা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস। যে আজাদ বিশ্বাসের অতীত ইতিহাস বলছে সরকারি দলের পারপাস সার্ভ করাই তার মুল্য টার্গেট। সেই আজাদ বিশ্বাসই এখন বিএনপির দুই গ্রুপের আইনজীবীদের মধ্যমণি। তা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির সাধারণ আইনজীবীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠন নিয়ে দুটি বলয়ের আইনজীবীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ইতিপূর্বে আইনজীবী ফোরামের সদস্য ফরম বিতরণ করা হয় পৃথকভাবে।
যেখানে ১৫২ জন আইনজীবীর সদস্য ফরম পূরণ করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন সাখাওয়াত বলয় থেকে ফোরামের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির। অন্যদিকে তৈমূর আলম খন্দকার নিজে কেন্দ্রে ৮৬ জন আইনজীবীর সদস্য ফরম জমা দিয়েছেন। এখানে বলয়ভিত্তিক ফোরামের কমিটি গঠনে নির্বাচন হলে ফলাফল অনুমেয়, পরাজিত হবে তৈমূর বলয়। এখানে নির্বাচনের মাধ্যমে ফোরামের কমিটি গঠনের দাবি তুলে আসছেন সাখাওয়াত অনুগামীরা। কিন্তু নির্বাচনে না গিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি গঠনের দিকে বেশ চেষ্টায় তৈমূর আলম ও তার অনুগামীরা। নির্বাচনের পক্ষে বিপক্ষে সভা সমাবেশও করছেন বিএনপির আইনজীবীরা।
সম্প্রতি তৈমূর আলম খন্দকার অনুগামীরা একটি মিটিং করেন সেখান থেকে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি সমঝোতা কমিটি গঠন করেছেন। ওই সমঝোতা কমিটিতে দায়িত্ব পান ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস। ওই কমিটি গঠনের পর তৈমূর আলম অনুগামীরা মিডিয়াতে প্রচার করেছেন তৈমূর আলম খন্দকার ও মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের সঙ্গে বসে সমঝোতা করবেন ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি যা হাস্যকর। সেটা প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে যখন আজাদ বিশ্বাস গিয়ে সমঝোতার প্রস্তাব দিচ্ছেন সাখাওয়াত ও সাখাওয়াত অনুগামীদের।
আরও জানাগেছে, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে একটি ঘরোয়া বৈঠকে সাখাওয়াত অনুগামীদের কাছে সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে যান আজাদ বিশ্বাস। তিনি নির্বাচনের প্রয়োজন নেই বলে দাবি করে সকলে বসে দুই পক্ষ থেকে মিলিয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এতে নারাজ সাখাওয়াত অনুগামীরা। সাখাওয়াত বলয় থেকে প্রস্তাব আসে যেসব বিএনপির আইনজীবীরা সমিতিতে সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, যারা জিপি পিপি ছিলেন এবং নারী নেত্রী হিসেবে অ্যাডভোকেট ফাতেমা মাসুদকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হোক। এই কমিটি ফোরামের সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবেন এবং পরবর্তী পদগুলোতে দুই পক্ষের আইনজীবীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি সমন্বয়ের মাধ্যমে গঠন করে দিবেন। তবে আজাদ বিশ্বাসকে পাল্টা এমন প্রস্তাবের কোন সারা পায়নি সাখাওয়াত অনুগামীরা।
অন্যদিকে আজাদ বিশ্বাসকে বিএনপির দুই গ্রুপের আইনজীবীরা যেনো মুরুব্বী হিসেবে মেনে নিয়েছেন। যে আজাদ বিশ্বাসকে জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি প্যানেলের পক্ষে তার কোন ধরণের সক্রিয়তা দেখা যায়না, সেই আজাদ বিশ্বাসকে কেন হটাত করে তৈমুর বলয়ে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠলো? তৈমূর আলম অনুগামীরা তাকে নিয়ে সমঝোতা কমিটিও গঠন করে দিলো। আবার সমঝোতা চাইলো আবুল কালামের সঙ্গে কিন্তু সমঝোতা করতে চাইছেন সাখাওয়াত অনুগামীদের সঙ্গে। অর্থাৎ এখানে সাখাওয়াতই ফ্যাক্টর।
কিন্তু আজাদ বিশ্বাস দীর্ঘদিন যাবত সরকারি দলের সঙ্গে প্রকাশ্যে মিলেমিশেই সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সদর উপজেলায় গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের জোর করে সরকারি দলের ভয় ভীতি দেখিয়ে বসিয়ে দিয়েছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ওই অভিযোগে তৎকালীন ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শাহআলম ও সেক্রেটারি আজাদ বিশ্বাসকে শোকজ করেছিলেন তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকারই। ওই নির্বাচনের আগে মাসদাইরে তৈমূর আলমের বাসায় তৈমূর আলম ও আজাদ বিশ্বাসের উপস্থিতিতেই জেলা মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রহিমা শরীফ মায়া বলেছিলেন, এই আজাদ বিশ্বাস আওয়ামীলীগের দালাল, শামীম ওসমানের দালাল।’ ওই নির্বাচনের পরেই তৈমূর আলম শোকজ করেছিলেন। শোকজের কোন জবাবও দেয়নি শাহআলম ও আজাদ বিশ্বাস। তবে নির্বাচনের আগেই মনিরুল আলম সেন্টু সহ বেশকজনকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন তৈমূর।
ফতুল্লার দেলপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে আয়োজিত শামীম ওসমানের সমাবেশে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ওই অনুুষ্ঠানে আজাদ বিশ্বাস বলেছিলেন, আমি বিএনপি নেতা হয়ে আমার নেতা এমপি শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই। এর আগে ফতুল্লার এক অনুষ্ঠানে আজাদ বিশ্বাস বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমানের মত সাংগঠনিক নেতা আর কেউ নাই।’ এছাড়াও বন্দরের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরিয়ে ওঠবসোর ঘটনায় এমপি সেলিম ওসমানের পক্ষে ফতুুল্লায় মানববন্ধন করেছিলেন আজাদ বিশ্বাস। অথচ সেই আজাদ বিশ্বাস এখন বিএনপির দুই গ্রুপের আইনজীবীদের মধ্যমণি হয়ে ওঠেছেন। যে কারনে কেউ কেউ বলছেন বিএনপির আইনজীবী ফোরামের উপর শামীম ওসমানের ছায়া পড়েছে। সেই ছায়া দিচ্ছেন আজাদ বিশ্বাস।