সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের আইনজীবীরা পুরোদমে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। এর মধ্যে একটি পক্ষে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন আবার সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি গঠনেরও চেষ্টা করছেন। তবে নির্বাচন ও সমঝোতা কোনটাতেই আলোচনার মাঝে নেই বিএনপির সিনিয়র বেশকজন আইনজীবী।
আদালতপাড়ায় বিএনপির রাজনীতিতে যেসব আইনজীবীদের সক্রিয় ভুমিকা দেখা যায় এবং বিএনপির ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে যারা দাপটশালী ছিলেন তারাও এই কমিটি গঠনের বিষয়ে আলোচনার মাঝে নাই। এসব সিনিয়র আইনজীবী ফোরাম নেতাদের অনীহা থাকায় মধ্যমসারির নেতারাই চাচ্ছেন ফোরামের নেতৃত্ব ভাগিয়ে নিতে। অনেকটা সস্তার তিন অবস্থা। কিন্তু বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনার বাহিরে রেখে সমঝোতার মাধ্যমে কোন কমিটি হলে তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটা নিয়েও বিরাট প্রশ্ন।
জানাগেছে, সভাপতি পদে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন আইনজীবী ফোরামের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির ও সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভুঁইয়া। এরপর সেক্রেটারি পদে যারা আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির মত এত বড় একটি দলের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সেক্রেটারি পদে তাদের মাঝে বেশকজনের কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে জোরালো। কারন তাদের অনেকের রাজনৈতিক অতীত ইতিহাস কতটুকু?
সেক্রেটারি পদ প্রত্যাশিদের মধ্য থেকে কেউ একজন সেক্রেটারি নির্বাচিত হলে প্রায় অর্ধশত সিনিয়র আইনজীবীর জুনিয়র হিসেবে সেক্রেটারি পদে আসীন হয়ে যাবেন। কিন্তু এতে তাকে সেক্রেটারি পদে কতটুকু মান্য করবেন সেটাও বিরাট প্রশ্ন। কিন্তু সিনিয়র আইনজীবীরা যখন নেতৃত্ব আসতে নারাজ সেই সুযোগে মধ্যমসারির নেতারাই সেক্রেটারি পদে আলোচনায়। এরি মাঝে আবার সভাপতি প্রার্থী দুজন পাল্টাপাল্টি একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বদনাম রটিয়ে যাচ্ছেন আদালতপাড়ায়।
জানাগেছে, বিএনপির সমর্থন নিয়ে জেলা আইনজীবী ফোরামের সভাপতি হয়েছিলেন আব্দুল বারী ভুঁইয়া। তিনি ফোরামের সভাপতি পদে আসার প্রতিযোগীতায় নেই। এর আগে ফোরামের সদস্য ফরম বিতরণ নিয়ে তিনি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। যে কারনে তিনি ফোরামের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার বাহিরে।
অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লা ছিলেন গত কমিটির সাধারণ সম্পাদক। এর আগের কমিটিতে তিনি ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। একজন সাংগঠনিক নেতা হিসেবে আদালতপাড়ায় বেশ পরিচিত তিনি। দলের কর্মকান্ডে যিনি কঠোর ভুমিকা রাখতেন এবং সব ধরণের সহযোগীতা তিনি করতেন। ফোরামের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় তার ভাল ভুমিকা থাকার পরেও তিনি ফোরামের নেতৃত্ব আসতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। যারা আলোচনায় রয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ নেতৃত্বে আসলে খোরশেদ মোল্লার শূন্যস্থান কতটুকু পুরণ করতে পারবেন তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
অ্যাডভোকেট আজিজুল হক হান্টু ছিলেন ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি। এরও আগের কমিটিতে তিনি ছিলেন সহ-সভাপতি পদেই। আদালতপাড়ায় তিনি একজন মিষ্টভাষী ভদ্র আইনজীবী হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু তিনিও নেই সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি পদে আসার লড়াইয়ে। সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে কমিটি গঠনেও তার কোন ভুমিকা নেই।
অ্যাডভোকেট নবী হোসেন বিএনপির আমলে ছিলেন জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর। একই সঙ্গে বিএনপির আইনজীবী ফোরামের নীতি নির্ধারকদেরও তিনি একজন। আইনজীবী সমিতির প্রতি নির্বাচনেই তিনি কিছু ভুমিকা পালন করেন। কিন্তু ফোরামের কমিটি গঠনে এখণ তার ভুমিকা দেখা যাচ্ছেনা।
নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির রাজনীতিতে নারী আইনজীবী হিসেবে যার সবচেয়ে বেশি সক্রিয়তা দেখা যায় তিনি হলেন অ্যাডভোকেট ফাতেমা মাসুদ। তিনিও নীতি নির্ধারকদের একজন। একই সঙ্গে বিএনপির আইনজীবীদের রাজনীতিতে তিনিও সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। তবে তিনিও সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি পদে আসার লড়াইয়ে আলোচনাতে নেই।
অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান খান খোকাও বিএনপির আইনজীবীদের কর্মকান্ডে সক্রিয় ভুমিকা রাখেন। আদালতপাড়ার রাজনীতির বাহিরেও তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভুমিকা রাখেন। তিনিও সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি পদে আসীন হওয়ার লড়াইয়ে এখনও নির্বাচনী মাঠে নেই।
অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দীন সরকারও ফোরামের সহ-সভাপতি ছিলেন। বিএনপির আমলে তিনি স্পেশাল পিপি হিসেবেও ছিলেন। তিনিও ফোরামের সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি পদে আলোচনায় নাই।
আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনে নীতি নির্ধারকদের একজন অ্যাডভোকেট রফিক আহাম্মেদ। সিনিয়র এই আইনজীবী মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি পদেও দায়িত্ব পালন করছেন। আদালতপাড়ার রাজনীতির বাহিরেও তিনি রাজনীতিতেও সক্রিয় ভুমিকা পালন করছেন। তবে তিনি ইতিমধ্যে একটি পক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি পদে তিনি এখনও আগ্রহ প্রকাশ করেননি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মশিউর রহমান শাহিন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন অ্যাডভোকেট রকিবুল হাসান শিমুল। একই সঙ্গে ফোরামেরও বিভিন্ন গুরুতপূর্ণ পদে ছিলেন। তারাও ফোরামের সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহী।
আইনজীবী ফোরামের গত কমিটির শীর্ষ পদেই ছিলেন অ্যাডভোকেট আজিজুল রহমান মোল্লা। এরও আগের কমিটিতে তিনি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তবে অনেকের মাঝে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় থাকলেও তিনি এখনও ফোরামের নেতৃত্ব নিয়ে কোন কথা বলেননি। তার নীরবতা পালন নিয়ে বেশ রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন- কয়েকদিন শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ্য ছিলেন। এখনও পুরোপুুরি তিনি সুস্থ্য নন। তাই আপাতত রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা তিনি করতে নারাজ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন অ্যাডভোকেট কাজী আব্দুল গাফফার। আইনজীবী ফোরামের রাজনীতিতেও তিনি বেশ সক্রিয়। কিন্তু ফোরামের সভাপতি কিংবা সেক্রেটারি পদেও আসতে তিনিও এই প্রতিযোগীতাতে নাই। কিন্তু এসব সিনিয়র আইনজীবীদের নীরবতায় মধ্যমসারির আইনজীবীরাই চাচ্ছেন ফোরামের নেতৃত্ব ভাগিয়ে নিতে। আবার শীর্ষ পদে ঘুরে ঘুরে সেই সরকার হুমায়ুন কবির ও আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। এছাড়াও আর কেউ সভাপতি পদে আলোচনাতে নাই।