সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পৌরসভার নির্বাচনের তফসিল এখনও ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে তার আগেই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের লড়াইয়ে পুুরোদমে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে সম্ভাব্য চার মেয়র প্রার্থী। নির্বাচনী মাঠের সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবেও লবিং করছেন যার যার মত করেই। মাঠে শক্তি প্রদর্শন ছাড়াও আওয়ামীলীগ নেতাদের মধ্যে কে কার পক্ষে রয়েছেন সেটাও প্রদর্শিত হচ্ছে এই নির্বাচনকে ঘিরে।
নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে যাওয়ার আগেই নৌকা প্রতীকের লড়াইয়ে রয়েছেন এই চার হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশি। তবে প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কারো বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি কিংবা বিরোধাচারন করছেন না। নৌকার লড়াইয়ে যার যার মত করে কাজ করলেও তারা ভেতরগতভাবে সকলের মধ্যে একটি সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। চারজনেরই মতামত নৌকা প্রতীক যে পাবে তার পক্ষেই নির্বাচনী মাঠে থাকবেন তারা।
স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন ২০১৫ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী, ২০১১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছগীর আহাম্মেদ, বাংলাদেশ আওয়ামী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বদরুন্নেছা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাসরিন সুলতানা ঝরা।
সূত্রে জানাগেছে, গত নির্বাচনে অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বীর মনোনয়ন ভাগিয়ে আনার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনের আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত। এমপি বাবু এবারও তার ভগ্নিপতি ফজলে রাব্বীর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয়ভাবে শক্ত লবিং তৈরি করছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদকের কেন্দ্রে বেশ গুরুত্ব রয়েছে সেটা গত নির্বাচনে তিনি প্রমাণ করেছেন। একই সঙ্গে জেলার প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের সঙ্গেও গত নির্বাচনের সময়ের মত দূরত্ব রাখছেন না। দূরত্ব কমিয়ে নিয়মিত এই দুই এমপির সঙ্গে ফজলে রাব্বীর মনোনয়ন ও মেয়র নির্বাচন নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে বলেও জানাগেল বিভিন্ন সূত্রে। ফজলে রাব্বীর নির্বাচনী প্রচারণাতেও এমপি শামীম ওসমান ও এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ছবি ব্যবহার করছেন এবং তাদের প্রশংসা করে বক্তব্যও রাখছেন। ফলে নৌকা লড়াইয়ে এবারও ফজলে রাব্বীর অবস্থান হালকা নয়।
একইভাবে পৌরসভার একজন শিল্পপতি সিআইপি ফেরদৌস ভুঁইয়া মামুনের সরাসরি সমর্থনের কারনে বেশ আলোচিত হয়ে ওঠেছেন ছগীর আহাম্মেদ। স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ও সিআইপি মামুন ভুঁইয়ার পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পৌরবাসীর মাঝে আলোচনার খোড়াকে পরিনত হয়েছে, সেই সুযোগে ছগীর আহাম্মেদের প্রচারণাও হয়ে গেল বেশ ভালভাবেই। মামুন ভুঁইয়াও তার বক্তব্যে জেলার প্রভাবশালী দুই এমপি একেএম শামীম ওসমান ও একেএম সেলিম ওসমানের প্রসংশা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। মেয়র প্রার্থী ছগীর আহাম্মেদও তার নির্বাচনী প্রচারণায় এমপি শামীম ওসমানের ছবি ব্যবহার করছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সিআইপি মামুন ভুঁইয়া ছগীর আহাম্মেদকে নিয়ে সাক্ষাতের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর বুঝা গেল মামুন ভুঁইয়াও ছগীর আহাম্মেদকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় রাজনাতি করার সুবাদে কেন্দ্রীয় অনেক নেতার সঙ্গে তারও সখ্যতা রয়েছে বেশ। এসব কারনে তাকেও বেশ শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে দেখছেন পৌরবাসী।
২০১১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছিলেন গাজী মজিবুর রহমান। ওই নির্বাচনে বিএনপি—জামাত জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছিলেন বর্তমান মেয়র সাদেকুর রহমান। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের কোন্দলের কারনে গাজী মজিবুর রহমান জয়ের কাছাকাছি গিয়েও পরাজিত হোন। ২০০১ সালের পর বিএনপি জামাত সরকার আমলে আন্দোলন করতে গিয়ে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার এই ক্লিন ইমেজধারী গাজী মজিবুর রহমানের ত্যাগের মুল্যায়নের দাবি তুলেছেন তার নেতাকর্মীরা। গত নির্বাচনে ফজলে রাব্বীকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে সরাসরি থাকলেও এবার কৌশলে গাজী মজিবুর রহমানের পক্ষ নিয়েছেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন নিয়ে একজোট হয়েছিলেন কায়সার হাসনাত, তার চাচা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। তারা যদি একজোট হয়ে গাজী মজিবুর রহমানের জন্য ভেতরগতভাবে কাজ করেন তাহলে গাজী মজিবুর রহমানও এবার শক্ত মনোনয়ন প্রত্যাশি।
অন্যদিকে ভিন্ন কৌশলে এগুচ্ছেন নাসরিন সুলতানা ঝরা। স্থানীয় আওয়ামীলীগের কোন বলয় বা গ্রুপের সঙ্গেই তিনি নেই। যদিও তিনি সকলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবত। তার সবচেয়ে বড় শক্তি তিনি কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের রাজনীতিতে জড়িত। কেন্দ্রীয় নেত্রীরাও তার পক্ষে মনোনয়নের দাবি তুলছেন। সেই দাবি দলের নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও জানানো হবে বলেও জানাগেছে। কেন্দ্রীয় শীর্ষ অনেক নেতাদের কাছেও পরিচিত মুখ নাসরিন সুলতানা ঝরা। বিএনপি-জামাত জোট সরকার আমলে আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি ৭বার কারাভোগ করেছিলেন। রাজপথের আন্দোলন ও ত্যাগের বিনিময়ে তিনিও এবার দলের মূল্যায়নের আশায় রয়েছেন। নিয়মিত তিনি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় তৃন্যমুল নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।