সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলে তিন নারীকে অমানসিক বর্বর নির্যাতনের পর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার দিনব্যাপী নারায়ণগঞ্জে এসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ওই নির্যাতিতদের বক্তব্য শুনেন এবং বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্র্তা গ্রহন করবেন বলে জানান মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের। পরে তিনি মামলা গ্রহণ করেন।
এ মামলায় বিনা ফিতে নির্যাতিত তিন নারীর পক্ষে আইনি লড়াই চালাবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু। এর আগে বন্দর থানা পুলিশ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতিও নেন আনিসুর রহমান দিপু।
জানাগেছে, সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জে ওই ঘটনার তদন্তে আসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম। পরে তারা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মিলনায়তনে পুলিশের মাধ্যমে ওই নির্যাতিন তিন নারীর মধ্যে একজনকে নিয়ে আসা হয়। তদন্তে এসেছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বানচিতা চাকমা, অভিযোগ ও তদন্ত পরিচালক আল মাহামুদ ফাইজুুল কবির এবং অভিযোগ ও তদন্ত উপ-পরিচালক গাজী সালাম।
এ ঘটনার পর বন্দর থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, সোমবার মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় ৯ জনকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।
তবে ঘটনায় নির্যাতিত ফাতেমা বেগম কমিশনকে জানান, মুলত তিনি পাশ্ববর্তী উম্মেহানী নামে একজনের কাছে এক লাখ ২২ হাজার টাকা পাওয়া রয়েছেন। উম্মেহানীর ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর সময় ফাতেমা বেগমের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ও তার মেয়ের বিয়ের সময় ২২ হাজার টাকা ধার নেয়। ওই পাওনা টাকা দিয়ে তাদের সঙ্গে জগড়া হয়। কোন ধরনের স্ট্যাম্প ছিল না যে কারনে টাকা দিতে অস্বীকার করেন তারা। এ নিয়ে তুমুল জগড়া হয়। পরে পতিতা আখ্যায়িত করে তিন নারীকে নির্যাতন করা হয়। সঙ্গে ফাতেমার বোনের মেয়ে আসমা বেগম। তবে আরেকজন বানু বেগম রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে নির্যাতন করা হয় বলেও দাবি করেন ফাতেমা।
জানাগেছে, গত শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের দক্ষিণ কলাবাগ এলাকায় তিন নারীকে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলে তাদের আটক করে অমানসিক নির্যাতন চালানো হয়। যা বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। বর্বর নির্যাতনের পর পুলিশ সংবাদ পেয়ে দুপুর সাড়ে ৩টায় দ্রুত ঘটনাস্থল এলাকায় গিয়ে অতিউৎসাহি বর্বর লোকজনদের কাছ থেকে ৩ নারীকে উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
নির্যাতনের শিকার ওই তিন নারী হলেন- বন্দর ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাবাগ খালপার এলাকার মৃত মফিজ উদ্দিনের মেয়ে ফাতেমা বেগম(৫০), বন্দর শাহীমসজিদ এলাকার বাছেদ আলীর মেয়ে আসমা বেগম (৩৫) ও বুরুন্দি এলাকার বকুল মিয়ার স্ত্রী বানু বেগম (৩০)।
বর্বর নির্যাতনকারীদের দাবি- বন্দর দক্ষিণ কলাবাগ খালপার এলাকায় মফিজ উদ্দিনের বাড়ীতে মৃত মফিজ উদ্দিনের মেয়ে ফাতেমা বেগম দীর্ঘদিন যাবৎ বহিরাগত পতিতা দিয়ে অসামাজিক কাজ করে আসছিলেন। এলাকাবাসী একাধিকবার সাবধাণ করলেও কাউকে তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন এলাকার পতিতাদের নিয়ে গোপনে তার দেহ ব্যবসা অব্যাহত রাখে। এর ধারাবাহিকতায় গত শনিবার বিকেল ৩টায় গোপনে উল্লেখিত নারীদের দিয়ে অসামাজিক কাজ করার সময় ফাতেমা বেগমসহ উল্লেখিত ৩ নারীকে আটক করে চুল কর্তন করে অমানসিক নির্যাতন চালায় লোকজন।
এ সময় বন্দর দক্ষিন কলাবাগসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক লোকজন ফাতেমা বেগমকে মারধর করতে থাকলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যায়। খবর পেয়ে বন্দর ইউপি সদস্য ইউসুফ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বন্দর থানা পুলিশকে অবহিত করে। সংবাদ পেয়ে বন্দর থানার এসআই সাফিউল দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে ৩ নারীকে উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।