ভোটের মাঠে দশ আইনজীবী: হুমকির মুখে তৈমূরের অস্তিত্ব, ফুরফুরে সাখাওয়াত!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির রাজনীতিতে চলতো অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের অঙ্গুলী ইশারায়। বিএনপির আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনে নেতৃত্ব বাছাই এবং আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্যানেল গঠনে সর্বসবা ছিলেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে তৈমূর আলম খন্দকারের সেই দাপট অনেক আগেই কমে আসে। যেখানে বড় অংশের প্রভাব তৈরি করেছেন তৈমূর আলম খন্দকারের এক সময়কার ঘনিষ্ঠজন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।

গুটিকয়েকজন আইনজীবী এখানে তৈমূর আলম খন্দকারের নাম জপে রাজনীতিতে টিকে থাকলেও এবার কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখী হয়েছেন তৈমূর আলম অনুগামীরা। সেই সঙ্গে আদালতপাড়ায় বিএনপির রাজনীতিতে এবার তৈমূর আলম খন্দকারের কর্তৃৃত্ব প্রভাব ও দাপট বিলিন হওয়ার পথে। এবার সাখাওয়াত হোসেন খানের কাছেই রাজনীতিতে ধরা খাওয়ার পথে তৈমূর আলম খন্দকার। এমনটাই দাবি করছেন বিএনপিরই সিংহভাগ আইনজীবী।

জানাগেছে, বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠনকল্পে সম্মেলনে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন ১১ জন আইনজীবী নেতা। অঘোষিত দুটি প্যানেলে ৫জন করে ১০জন আইনজীবী তাদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। এছাড়াও এককভাবে সেক্রেটারি পদে অ্যাডভোকেট সুমন মিয়াও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ফলে নেতৃত্বের প্রতিযোগীতায় নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন বিএনপির ১১জন আইনজীবী নেতা। আগামী ৯ ডিসেম্বর এই নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সম্মেলনে ভোটের লড়াইয়ে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভুঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আজিজ আল মামুনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্যানেলে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন অ্যাডভোকেট সীমা সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আলী হোসাইন।

অপরদিকে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির ও সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকিরের নেতৃত্বে প্যানেলে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট আজিজুল হক হান্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন ভোটের লড়াইয়ে।

আইনজীবীদের সূত্রে, নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির আইনজীবীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে রাজনীতি করছেন। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলোচিত আইনজীবী নেতা ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। এই তৈমূর আলম বলয়ের সঙ্গে একজোট হয়ে সাখাওয়াত বিরোধী রাজনীতিতে রয়েছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালামের অনুগামী বেশকজন আইনজীবী। মুলক ভাসানী-মামুন প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার অনুগামী হিসেবে পরিচিত। হুমায়ুন-জাকির প্যানেলের প্রার্থীরা অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান অনুগামী হিসেবে পরিচিত।

এই সম্মেলনের পূর্বে নারায়ণগঞ্জের বিএনপির আইনজীবীদের ফোরামের কমিটি গঠনের জন্য সদস্য ফরম বিতরণ করা হয়। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই জানিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন খান অনুগামীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির ১৫২ জন আইনজীবীর ফরম পূরণ করে কেন্দ্রে জমা দেন। অন্যদিকে তৈমূর আলম খন্দকার নিজে ৮৬ জন আইনজীবীর সদস্য ফরম জমা দেন। এই ফরম বিতরণের বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীরা বলছেন একদিকে ১৫২ ভোট অন্যদিকে ৮৬ ভোট। এভাবে হিসেব করলে সাখাওয়াত অনুগামী প্যানেলের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। যদি ভেতরগতভাবে বিরাট কোন রাজনৈতিক অঘটন না ঘটে তাহলে এখানে তৈমূর অনুগামীদের পরাজয় বহন করতে হবে। যদি তাই হয় তাহলে আদালতপাড়ায় তৈমূর আলম খন্দকারের কর্তৃত্ব প্রভাব একেবারেই শূন্যের দিকে চলে যাবে।

এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুঁইয়া ও অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস।

গত ২৯নভেম্বর রবিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান ও ঢাকা বিভাগীয় টিমের আহ্বায়ক মাহাবুব উদ্দীন খোকন নারায়ণগঞ্জের দুই গ্রুপের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সম্মেলনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন। বৈঠকে উপস্থিত অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুঁইয়া ও অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস নারায়ণগঞ্জে সুষ্ঠু সম্মেলনের মাধ্যমে ফোরামের কমিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন।