সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
পিতার কবর জিয়ারত করতে যাওয়ার সময় রাজাকার বাহিনী পাকিস্তানিরা গাড়ীযোগে তুলে নিয়ে যায় তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউদ্দিন আহম্মেদকে। স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও সেই শফিউদ্দিন আহম্মেদের মরদেহটাকেও শেষবারের মত দেখার ভাগ্য হয়নি পরিবার সহ আত্নীয় স্বজনদের।
দেশ স্বাধীন হওয়ার ২৯ দিন পূর্বে নীরহ-সাধারণ লোকদের উপর অত্যাচার, লুটপাটের বিরুদ্ধে পথিমধ্যে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করার ১৫ মিনিটের মধ্যে রাজাকাররা তাকে তুলে নিয়ে যায়।
পিতার কবর জিয়ারত ও স্বাধীনতার সূর্য দেখার ভাগ্য হয়নি বন্দর উপজেলার (সদর) ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদ শফিউদ্দিন আহম্মেদের। তৎসময়ে তিনি দ্বিতীয় বারের মত নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর ২৭ রমজান বিকেলে শহীদ শফিউদ্দিন আহম্মেদকে (চেয়ারম্যান) তুলে নেয়ার পর আর তার খুজ পাওয়া যায়নি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় খবর নিয়েও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে তার ভাই হাজী মোসলেউদ্দিন আহম্মেদ জানান। অনেক দিন পর বন্দর সিএসডি’র জেডির নিচে মরদেহ পাওয়া গেলেও তা সনাক্ত করা যায়নি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, ১৭ নভেম্বর (বুধবার) ছিল নবীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাট। বুধবার হাট করে ব্যবসায়ীরা যাওয়ার সময় রাজাকাররা নবীগঞ্জ স্ট্যান্ডে তাদের মারধর পূর্বক সকল কিছু লুটপাট করতে থাকে। শফিউদ্দিন আহম্মেদ তার পিতার কবর ( নবীগঞ্জ বাগ এ জান্নাত) কবরস্থানে যাওয়ার সময় তাদের বাধা দেয়। এর কিছুখনের মধ্যেই তাকে পাকিস্তানিদের গাড়ী যোগে তুলে নিয়ে যায়। স্বাধীনতার সূর্য দেখার ভাগ্য যাদের হল না আমরা একটি বই ও তালিকা করেছিলাম।
বন্দর সদর ইউনিয়নের ৯নং ওর্য়াডের একজন বীর শহীদ শফিউদ্দিন আহম্মেদ। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন পর্যায়ে বন্দরের শহীদদের তালিকায় ৮ নং শহীদ শফিউদ্দিন আহম্মেদ। নবীগঞ্জ এলাকার প্রয়াত জালাল সরদারের ছেলে শহীদ শফিউদ্দিন আহম্মেদ একজন চেয়ারম্যানও ছিলেন। এ কে এম শাহনাওয়াজের সম্পাদনায় “মুক্তিযুদ্ধ বন্দর” নামক বইয়ে প্রকাশ রয়েছে। ১৯৭২ সালে দৈনিক দেশের বাংলা পত্রিকায় প্রকাশ হয় স্বাধীনতার সূর্য যাদের দেখার ভাগ্য হল না তার মধ্যে শহীদ শফিউদ্দিন আহম্মেদ চেয়ারম্যানও একজন। বন্দর (সদর) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদের চাচা ও মিনহাজ উদ্দিন আহম্মেদের পিতা শহীদ শফিউদ্দিন আহম্মেদ চেয়ারম্যান। শহীদ শফিউদ্দিন আহম্মেদ চেয়ারম্যানের ১ ছেলে মিনহাজ উদ্দিন আহম্মেদ ও ৪ কন্যা সন্তান এখন পিতার স্মৃতি আকরে আছে।
শহীদ শফিউদ্দিন আহম্মেদ চেয়ারম্যানের ছেলে মিনহাজ উদ্দিন আহম্মেদ কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেশের জন্য রাজাকারদের হাতে শহীদ হয়। দেশের জন্য শহীদ হয়েছে এটা গর্ব করার মত। কিন্তু পিতাকে শেষ দেখা ও মাঠি দেয়ার ভাগ্য হয়নি আমার। একমাত্র ছেলে হয়েও আমার পিতার কবর দিতে পারিনি। কবর দিতে পারলেও গিয়ে দোয়া করতে পারতাম। আমার দাদার কবর জিয়ারত করতে দেয়নি রাজাকাররা। পথিমধ্যে থেকে তুলে নিয়ে যায়, তেমনি আমার বাবার কবর দেওয়ারও ভাগ্য হয়নি আমার। এর চেয়ে কষ্টকর, বেদনাদায়ক আর কিছু হতে পারে না বলেও তিনি জানান।