সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের বন্দরের পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলে তিন নারীকে গাছে বেধে নির্যাতনের পর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় প্রধান আসামি ইউসুফ মেম্বারকে রিমান্ডে নিয়েছে পুুলিশ। ২০ ফেব্রুয়ারি বুধবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে সিদ্ধিরগঞ্জের একটি ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বন্দরের ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশ সুুপার হারুন অর রশীদ বলেন, ওই তিন নারীর পেশা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। তাদের পেশা যাই হোক তাদের নির্যাতনের অধিকার কারো নাই। ইউসুফ মেম্বারের নেতৃত্বে নির্যাতন চালানো হয়েছিল। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকি যারা আসামি রয়েছে তাদেরকেও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।
জানাগেছে, আগের দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দরে পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে তিন নারীকে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলে গাছে বেধে চুল কেটে বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় মুলহোতা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ইউসুফ মিয়াকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ওইদিন নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে বন্দর থানা পুলিশ। আদালত আসামীকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলায় নির্যাতনের শিকার ফাতেমা বেগমের পক্ষে এই মামলায় বিনা পারিশ্রমিকে আইনি লড়াই করছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু। তিনি আসামী ইউসুফ মেম্বারের দুই দিনের রিমান্ডের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। তবে এ মামলায় আসামীর পক্ষে কোন আইনজীবী আইনি লড়াইয়ে ছিলেন না।
জানাগেছে, গত শনিবার নারায়ণগঞ্জ বন্দরের দক্ষিণ কলাবাগ এলাকায় এক লাখ ২২ হাজার টাকা পাওনা নিয়ে বিরোধের জের ধরে নারীদের বিরুদ্ধে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলে তিন নারীকে গাছে অমানসিক বর্বর নির্যাতনের পর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। নির্যাতনের ঘটনার দুই দিন পর বন্দর থানা পুলিশ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামা ১৫ জনকে আসামী করে মামলায় দায়ের করে। মামলায় বাদী হয় নির্যাতনের শিকার ফাতেমা বেগম। মামলার সঙ্গে সঙ্গে নির্যাতনের ঘটনার মুলহোতা ইউসুফ মেম্বারকে গ্রেপ্তার করে পুুলিশ। পরদিন মঙ্গলবার সকালে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুুর করেন।
এর আগের দিন ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার দিনব্যাপী নারায়ণগঞ্জে এসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ওই নির্যাতিতদের বক্তব্য শুনেন এবং বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্র্তা মামলা গ্রহন করবেন বলে জানান মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের। পরে তিনি সেদিন সন্ধায় মামলায় গ্রহণ করে একজনকে গ্রেপ্তার করেন।
জানাগেছে, সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জে ওই ঘটনার তদন্তে আসে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম। পরে তারা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মিলনায়তনে পুলিশের মাধ্যমে ওই নির্যাতিন তিন নারীর মধ্যে একজনকে নিয়ে আসেন। তদন্তে এসেছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বানচিতা চাকমা, অভিযোগ ও তদন্ত পরিচালক আল মাহামুদ ফাইজুুল কবির এবং অভিযোগ ও তদন্ত উপ-পরিচালক গাজী সালাম।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের দক্ষিণ কলাবাগ এলাকায় তিন নারীকে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলে তাদের আটক করে অমানসিক নির্যাতন চালানো হয়। যা বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। বর্বর নির্যাতনের পর পুলিশ সংবাদ পেয়ে দুপুর সাড়ে ৩টায় দ্রুত ঘটনাস্থল এলাকায় গিয়ে অতিউৎসাহি বর্বর লোকজনদের কাছ থেকে ৩ নারীকে উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
নির্যাতনের শিকার ওই তিন নারী হলেন- বন্দর ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাবাগ খালপার এলাকার মৃত মফিজ উদ্দিনের মেয়ে ফাতেমা বেগম(৫০), বন্দর শাহীমসজিদ এলাকার বাছেদ আলীর মেয়ে আসমা বেগম (৩৫) ও বুরুন্দি এলাকার বকুল মিয়ার স্ত্রী বানু বেগম (৩০)।