সমাপ্তি রেজাউল অধ্যায়, ফিকে জাফরের অবস্থান, নেতাকর্মীদের ভরসা মান্নান

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর ১/১১ এর সময় সক্রিয় ভুমিকা রাখলেও ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে নিয়ে সোনারগাঁয়ে শোডাউন করে নেতাকর্মীদের সমালোচনায় আস্থা হারিয়েছেন আবু জাফর। আরেক ধনকুবের সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম কেবল নির্বাচন আসলেই আলোচনায় আসতেন। গত নির্বাচনেও তিনি রাজনীতিকে উঁকি ঝুকি দিলেও পরক্ষণই হারিয়ে গেছেন রাজনীতি থেকে। এরি মাঝে আমেরিকায় আসার যাওয়ার পথেই আয়েশী জীবন কাটিয়েছেন খন্দকার আবু জাফর।

এমন পরিস্থিতিতে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের একমাত্র ছায়া ও আশ্রয়দাতা হয়ে ওঠেছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দলীয় নেতাকর্মীদের পেছনে যার সামান্যতম ভুমিকাও দেখা গেল না তিনি রেজাউল করিম। অথচ তিনি বিএনপির বেশকবার এমপি নির্বাচিত হোন। হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীও। রেজাউল করিম বিলিন হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার অনুগামীরা গা ভাসিয়েছেন জাতীয়পার্টির দলে। ১/১১ এর সময় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন রেজাউল করিম। সংস্থারবাদীদের মধ্যে ছিলেন তিনি অন্যতম একজন। তার আদর্শেই ধরা খেল তার অনুগামী নেতাকর্মীরাও যারা জাতীয়পার্টিতে গা ভাসিয়ে প্রমাণ করেছেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নির্বাচন আসলেই মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে নিজেদের প্রচার করতেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক এমপি রেজাউল করিম, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুল, কেন্দ্রীয় যুবদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ওয়ালিউর রহমান আপেল ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা আজিজুল হক আজিজ।

যাদের মধ্যে এটিএম কামালের সোনারগাঁয়ে অবস্থান নেই বললেই চলে। তিনি মহানগীর রাজনীতিকে এক সময় সক্রিয় ছিলেন, বর্তমানে তিনি আমেরিকা প্রবীস। খন্দকার আবু জাফর আমেরিকায় যাওয়ার আসার মধ্যেই বেশির ভাগ সময় কাটান। বকুল ও আজিজের রাজনীতিতে অবস্থান শূণ্যের কোঠায়। নেতাকর্মীদের দেখভাল তো দুরের কথা তারা নিজেরাই নিজেদের দেখভাল করতে পারেন না। রেজাউল করিম এমনিতেই নির্বাচন আসলেই এলাকা ঘুরতেন। শারীরিক অবস্থান ও বয়সের কারনে সোনারগাঁয়ে তার অস্তিত্ব বিলিন। তার নেতাকর্মীরাও এখন জাতীয়পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয়। এদের সঙ্গে আপেলও নির্বাচন আসলে এলাকায় নামেন। নিজেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বন্ধু পরিচয় দেন। কথায় কথায় নেতাকর্মীদের সামনে বেগম খালেদা জিয়াকে ভাবি সম্মোধন করেন। এমপি ও মন্ত্রী হওয়া তার সামনে হাতছানি। এমন সব ভাওতাভাজিতে মাঠ গরম করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু রাজনীতিতে কিঞ্চিত ভুমিকা নেই তার।

এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা যখন ডজন ডজন মামলায় আসামি তখন তাদের একমাত্র ভরসা কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারি আজহারুল ইসলাম মান্নান। তিনি সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও ৫ বছরের মধ্যে ডজন খানিকবার বরখাস্ত হয়েছেন, তবুও তিনি সরকারি দলের সঙ্গে আতাত করে চেয়ারম্যানের চেয়ার ধরে রাখতে যাননি। রাজপথে তার বিশাল কর্মী বাহিনী আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তার নেতৃত্বে। মামলায় জেল খেটেছেন তিনি।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয় সকল কর্মকান্ডে আজহারুল ইসলাম মান্নানের নির্দেশনায় সক্রিয় ভুমিকা পালন করছেন নেতাকর্মীরা। প্রতিটি কর্মসূচিতে লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছেন মান্নান। নেতাকর্মীরা মামলায় আসামি হলে তার জামিনের ব্যবস্থাও করছেন তিনি। কেউ কারাগারে গেলে তার যাবতীয় ব্যবস্থায় দৌড়াচ্ছেন মান্নান। রাজপথেও যার সক্রিয় ভুমিকা। এরি মাঝে আবার খন্দকার আবু জাফর মাঝে সাঝে নামেন মান্নানকে মাইনাস ফর্মূলা নিয়ে। জেলা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি মামুন মাহামুদকে ম্যানেজ করে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে আবারো জাফর ও সেক্রেটারি পদে মোশারফ হোসেনকে দিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু চেষ্টার কয়েকদিনের মাথায় জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। ফলে সোনারগাঁয়ে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসা ও আস্থারস্থল আজহারুল ইসলাম মান্নান।