আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ৪৫ বছরের ইতিহাসে খোকন সাহা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের মাত্র বাকি একটি বছর। এমন পরিস্থিতিতে যখন আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মেয়র প্রার্থীর তালিকায় মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহার নাম ওঠেছে তখন প্রতিদ্বন্ধিরা ওঠে পড়ে লেগেছে তার পেছনে। আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ৪৫ বছরের ইতিহাসে খোকন সাহার নাম রয়েছে। সেই খোকন সাহার বিরুদ্ধে এবার নিজ দলের নেত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী মামলা ঠুকে দিয়েছেন। গত নির্বাচনে আইভী নৌকা প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সাল থেকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসা খোকন সাহা আপাদমস্তক একজন আইনজীবী। আইন পেশায়ই যার একমাত্র আয়ের উৎস। দীর্ঘদিন রাজনীতিক জীবনে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি ভূমিদস্যূতা সন্ত্রাসী লালনের মত অভিযোগ কোনদিন ওঠেনি। যে কারনে নেতাকর্মীরা তাকে কর্মীবান্ধব খোকন সাহা হিসেবেই দাবি করেন। আইন পেশায় আয়ের সিংহভাগ খরচ করেছেন দল ও নেতাকর্মীদের পেছনে।

তার কর্মী সমর্থকরা আরও জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পরে রাজনীতিতে আসেন খোকন সাহা। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু খোকন সাহার রাজনীতি। ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরি মধ্যে ১৯৮০ সালে সরকারি তোলারাম কলেজ বানিজ্য শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। পরবর্তীতে শহর ছাত্রলীগের সদস্য হন। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।

১৯৮২ সালে এরশাদ সরকার যখন মার্শাল ‘ল’ জারি করে তখন ওইদিন সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে এরশাদ বিরোধী সর্বপ্রথম যে ১২ জন মিলে মিছিল বের করেছিল সেই মিছিলে খোকন সাহাও ছিলেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারনে তৎকালীন এরশাদ সরকার খোকন সাহার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে। যার মধ্যে একটি হত্যা মামলা ও একটি বিস্ফোরক মামলা হয়। এসব রাজনৈতিক মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।

আরও জানা গেছে, খোকন সাহা এরশাদের আমলে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবরণ করেন। ১৯৯২ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে ১৭ বছর তিনি নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গণভবনে সারাদেশের আওয়ামীলীগের নেতাদের নিয়ে সভা হয়। ওই সভাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও খোকন সাহাকে সেক্রেটারি করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঘোষণা দেন।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যডভোকেট খোকন সাহা এবং ফেসবুক-ইউটিউবে ‘হিন্দু লাইভস ম্যাটার’ পেজ ও চ্যানেলের প্রকাশক-সঞ্চালক প্রদীপ দাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।

৪ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে এই মামলার আবেদন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার শামীম আল মামুন জানান, এদিন বাদীর জবানবন্দিও নিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)।