সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত ১০টি বছর ধরে বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল। গত ৫ বছর ধরে তিনটি পদেই উপজেলা পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপি ও জামাতের তিনজন নেতা। তবে এবার দীর্ঘদিন পরে হলেও বিএনপি ও জামাতের রাহুমুক্ত হতে যাচ্ছে বন্দর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়টি। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। ফলে এবার বন্দর উপজেলা পরিষদে তিনটি পদেই দেখা যেতে পারে আওয়ামীলীগ কিংবা জাতীয়পার্টির নেতাদের। তবে বিএনপির কেউ আবার আগের মত দালালি করে টিকেও থাকতে পারেন। এমন সম্ভাবনাও কম নয়। তবে সেক্ষেত্র পেরে ওঠবেন কিনা তা নিয়ে বেশ সন্দিহান। ফলে বন্দর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়টি এবার বিএনপি ও জামাতের হাতছাড়া হতে যাচ্ছে।
জানাগেছে, বন্দর উপজেলা পরিষদে টানা দুইবার চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন আতাউর রহমান মুকুল। ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা সাইফুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহমুদা আক্তার। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আতাউর রহমান মুকুল স্থানীয় সরকারি দলের এমপির সঙ্গে সখ্যতা রেখেই উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপির নেতা হলেও তিনি অনেকটা সরকারি দলের নেতার ভুমিকায় ছিলেন বেশ জোড়ালো।
তবে এক্ষেত্রে সুবিধা করতে পারেননি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করলেও সরকারি দলের সঙ্গে প্রকাশ্যে তাকে কমই দেখা গেছে। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত ইসলামীর নেতা সাইফুল ইসলাম গত ৫ বছরের বেশির ভাগ সময় ছিলে কারাগারে। আবার ছিলেন মামলায় আসামি হয়ে কারাগারে। এমন পরিস্থিতিতে একক নিয়ন্ত্রন ছিল মুকুলের হাতেই। তবে ২০১৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে পড়বে এমন সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই রাজপথে নেমেছিলেন আতাউর রহমান মুকুল। পরবর্তীতে তিনি আন্দোলন করতে গিয়ে মামলায় আসামীও হন। ওই নির্বাচনের পর তিনি আবারো বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে সরকারি দলের পক্ষে কাজ করেন। গত জাতীয় নির্বাচনে আতাউর রহমান মুকুল এ আসনের বর্তমান এমপি একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে সরাসরি নির্বাচনে কাজ করেন। সেলিম ওসমানের বেশকটি নির্বাচনী জনসভায় গিয়েছিলেন মাহামুদা আক্তারও। তবে দুরেই ছিলেন জামায়াত নেতা সাইফুল ইসলাম।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ২০ দলীয় জোটের সমর্থন পান বর্তমান মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি নূরউদ্দীন আহমেদ। যেদিন নূরউদ্দীন আহমেদকে নিয়ে বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছিলেন ২০ দলীয় জোটের নেতারা ওইদিন সন্ধায়ই আতাউর রহমান মুকুলকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা আমানউল্লাহ আমান সমর্থনের ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয় বরং আতাউর রহমান মুকুলকে বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি উল্লেখ্য করে নূরউদ্দীন আহমেদকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি ঘোষণা করা হয়। অথচ মুকুল ছিলেন বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির স্বঘোষিত সভাপতি। বিএনপির সক্রিয় রাজনীতিতেও ছিলেন না। ওই নির্বাচনে মুকুল নির্বাচিত হন। একইভাবে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন মাহামুদা আক্তার। অপর ভাইস চেয়ারম্যান হন জামায়াত নেতা সাইফুল ইসলাম।
এদিকে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিন জনের নাম চূড়ান্ত করেছে আওয়ামীলীগ। রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান, বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ রশিদ ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী সালাম। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসআই জুয়েল ও যুবলীগ নেতা আলমগীর হোসেন। এই নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে না। ফলে এখানে আতাউর রহমান মুকুলকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় এমপির সমর্থন তার দিকেও থাকতেও পারে। যদিও এখানে নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। আর জাতীয় পার্টি এখন বিরোধী দল। এখানে জাতীয়পার্টি বিরোধী দলের ভুমিকায় থাকলেও আতাউর রহমান মুকুল আবারো নির্বাচনে দাড়াতে পারেন। যদিও এখনও বিএনপি জামাতের এই তিন চেয়ারম্যান এখনও নির্বাচনের বিষয়ে কিছু জানাননি।