সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার মহানগরীর কেন্দ্রীক রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও তিনি দুই পা দিয়ে রেখেছেন রূপগঞ্জ আসনেই। মুলত তার সুযোগের কারনেই রূপগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে উত্থান ঘটে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার। এবার রূপগঞ্জে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হয়েছে। রূপগঞ্জে বিএনপির নিয়ন্ত্রণ থেকে দিপু ভুঁইয়ার বিদায় ঘন্টা। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে রূপগঞ্জ থেকে আনাড়ি ধাচের নেতারা ঠাঁই পেলেও সদস্য পদও দিপু ভুঁইয়ার ভাগ্যে জুটেনি।
জানাগেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটিতে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। তবে রূপগঞ্জ থেকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে তারাবো পৌর বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দীন, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান হুমায়ুন, সদস্য পদে সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ আহম্মেদ টুটুল, জেলা যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন, বিএনপি নেতা বশির উদ্দীন বাচ্চু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি দুলাল হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গুলজার হোসেন ও জেলা যুবদলের সাবেক সেক্রেটারি আশরাফুল হক রিপনের মত নেতারা ঠাঁই পেয়েছেন।
রূপগঞ্জের নেতাকর্মীদের সূত্রে জানাগেল, ২০০৬ সালে নির্বাচনের প্রস্তুতির সময় নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পান তৈমূর আলম খন্দকার। কিন্তু ওই বছর নির্বাচন না হওয়ায় পরবর্তীতে ১/১১ এর সময় কারাগারে চলে যান তৈমূর। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এখানে বিএনপির মনোনয়ন পান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হোন তৈমূর আলম খন্দকার ও কাজী মনিরুজ্জামান মনিরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটি গঠনের পর রূপগঞ্জের নিয়ন্ত্রন কাজী মনিরের হাতে তুলে দিয়ে পুরো জেলা নিয়ন্ত্রন করেন তৈমূর আলম। একই সময়ে রাজনীতিতে কাজী মনিরের নিস্ক্রিয়তার সুযোগে দিপু ভুঁইয়াকে মাঠে নামান তৈমূর আলম। ধীরে ধীরে রূপগঞ্জে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন দিপু ভুঁইয়া। রাজপথে সক্রিয় ভুমিকা না রাখলেও নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেয়া ও বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটিগুলোতে নেতাকর্মীদের পদে বসিয়ে বিস্তার লাভ করেন।
এসব কারনে ২০১৪ সালে কাজী মনিরের সামনে বাধা হয়ে যায় দিপু ভুঁইয়া। যদিও সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। এর আগে ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনে নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠে নামেন তৈমূর আলম। যদিও ওই সময় তার আগ্রহ ছিল রূপগঞ্জেই। তিনি দুটি আসনেই ধরে রাজনীতি করেছিলেন।
২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে তৈমূর আলমকে নির্বাচনের জন্য চাপ দেয়া হলেও তিনি নির্বাচন করেননি। নির্বাচনের পর ২০১৭ সালে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। তৈমূর আলমকে বাদ দিয়ে কাজী মনিরকে সভাপতি ও মামুন মাহামুদকে সেক্রেটারি করে জেলা বিএনপির কমিটি এবং আবুল কালামকে সভাপতি করে ও এটিএম কামালকে সেক্রেটারি করে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। দুটি কমিটিতেই তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে রাজপথে থাকা নেতাকর্মীদের রাখা হয়নি।
২০১৮ সালের নির্বাচনে রূপগঞ্জ আসন থেকে তৈমূর আলম, কাজী মনির ও দিপু ভুঁইয়া মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন। চূড়ান্তভাবে সেখানে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান কাজী মনির।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুই বছর কারাগারে থাকলেও রাজপথে একটি কর্মসূচিতে জেলা পর্যায়ে এসে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করেনি দিপু ভুঁইয়া। জেলা বিএনপির সভাপতি পদে থেকেও কাজী মনির ছিলেন মাঝে সাজে মিটিং মিছিলে। দিপু ভুইয়া তার অনুগত নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কমিটিতে বসানোর রাজনীতি ছাড়া রাজপথের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন না।
এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে সদস্য পদেও রাখা হয়নি দিপু ভুইয়াকে। আগামীতে রূপগঞ্জে নতুন নেতৃত্ব আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রূপগঞ্জের বিএনপির রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ে গেলেন দিপু ভুঁইয়া।