সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে নিয়ে আবারো আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমান। ২৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে মেয়র আইভীকে না পেয়ে এমপি এমন আক্ষেপ প্রকাশ করে কিছু বক্তব্য দেন।
এমপি সেলিম ওসমান আক্ষেপ করে ওই স্কুলের অনুষ্ঠানে বলেন, আমি আশা করেছিলাম আজকে এখানে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে পাবো। মর্গ্যান স্কুলে গিয়েও আশা করেছিলাম উনাকে সেখানে পাবো। উনি আমার অত্যন্ত আদরের ছোট বোন। নারায়ণগঞ্জের মুরুব্বি যারা আছেন, নেতৃবৃন্দ যারা আছেন তাদের সকলের প্রতি আমার অনুরোধ রাখবে আপনারা আলোচনার ব্যবস্থা করুন। আলোচনায় সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে যে কোন সমস্যায় হয়তো মেয়র আমাকে সহযোগীতা করবে নয়তো আমি উনাকে সহযোগীতা করবো পারস্পরিক সহযোগীতায় আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলা সম্ভব।
এর আগে নারায়ণগঞ্জের বিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এমপি সেলিম ওসমান বলেছেন, আমরা শুরু করে দিলাম তোমরা শেষ করবে। আমি বিশ্বাস করি আমাদের পর আর অপরাজনীতি থাকবেনা। ভবিষ্যত নেতাদের মাঝে পেশী শক্তি অর্জনের প্রতিযোগীতা থাকবেনা। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমরা এখন যারা নেতৃত্ব দিচ্ছি আমরা সকলেই দায়ী, আমাদের অতীত ভুলের কারনেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের মৃত্যুর পর এই পরিস্থিতি আর থাকবেনা। তাই চাই আগামীতে তোমরা যেন যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারো সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ সময় তিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের দাবী অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি সাপেক্ষে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য ১টি বাস ও নবনির্মিত ভবনটি আধুনিকায়নের জন্য তাঁর নিজস্ব তহবিল থেকে মোট ৫০ লাখ টাকার অনুদান প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।
২৪ ফেব্রুয়ারী রবিবার সকাল ১১টায় শহরের ভূইয়ারবাগ এলাকায় বিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের বসন্ত বরণ, বার্ষিকী ক্রীড়া প্রতিযোগীতার পুরস্কার বিতরণী এবং কৃতিশিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান ঘোষণা দেন।
ইতোমধ্যেই তিনি নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরে যাওয়ার জন্য ২টি বাস প্রদান করেছেন যেটি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিদ্যা নিকেতনকে দেওয়া ওই বাসটির মালিক থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। প্রয়োজনে চেম্বারের কাছে থাকা দুটি বাস ও বিদ্যা নিকেতনকে দেওয়া বাসটি দিয়ে সমন্বয় করে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও শিক্ষা সফরে যাওয়ার জন্য ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার আহবান রাখেন তিনি।
সেলিম ওসমান আরো বলেন, বিদ্যা নিকেতন স্কুলটি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একটি স্কুল। স্কুলটি যেন তৈরি হয়েছেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ তৈরি করতে। কাশেম হুমায়নে এর সাথে আমার আগে খুব বেশি বসা হয়নি। এখন সেই দুরত্বের অবসান হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে ভাল কিছু করতে পারবো। কিন্তু একই ভুল বার বার হলে আবার সকল কিছু বৃথা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাচ্চারা খেলাধূলা করতে চায়। কিন্তু তাদের খেলাধূলার জন্য সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য কোন মাঠ নাই। আমার মনে আছে শহরে একটি ডোবা ভরাট করে সেখানে টাউন হল নামে একটি অডিটরিয়াম করা হয়ে ছিল। পরবর্তীতে সেটি নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। শুধুমাত্র নামের কারনে সেটি ভাঙ্গা হচ্ছে না। নাম নিয়েও রাজনীতি করা হচ্ছে। আমি বলবো নাই মামার চেয়ে কানা মামা অনেক ভাল। আমি প্রশসানকে অনুরোধ করবো ওই জরার্জীন পরিত্যক্ত ভবনকে ভেঙ্গে দিয়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য খালি মাঠ করে দেন। যেখানে নারায়ণগঞ্জের মানুষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন মেলার আয়োজন ও খেলাধূলা করতে পারবে।
এরআগে প্রধান অতিথির আহবানে স্কুলের শিক্ষার্থীরা মঞ্চে এসে তাদের চাহিদার কথাগুলো উপস্থাপন করেন। যার মধ্যে প্রায় সকলের বক্তব্যে স্কুলের খেলার মাঠের আবেদনটি জোরালো ছিল। স্কুলের পাশের সরকারী জমিটি দখলমুক্ত করে সেখানে খেলার মাঠ তৈরির জন্য সকল শিক্ষার্থীরা এমপির কাছে জোড়ালো দাবী রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বলেন, এমপি সেলিম ওসমান লেখাপড়ার দিকে সব থেকে বেশি দৃষ্টি দিয়েছেন। নিজ অর্থায়নে ৭টি স্কুল নির্মান করেছেন। আমি অনুরোধ রাখবো প্রতিটি স্কুলে কারিগরি প্রশিক্ষন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য। যার ফলে পড়ালেখা শেষ করে বের হওয়ার পরই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আমরা সর্বাত্মক সহযোগীতা করবো।
বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী কাশেম জামাল বলেন, এমপি সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান দিয়েছেন। এমপি হওয়ার পর তিনি এখন পযন্ত প্রায় ১০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। আমি উনাকে বিদ্যা নিকেতন স্কুলে আসার জন্য আহবান জানিয়েছি। আমি চাই উনি অন্যান্য স্কুলের মত বিদ্যা নিকেতনেও দু হাত প্রসারিত করবেন। আমরা বিদ্যা নিকেতনে সকলের সম্মলিত প্রচেষ্টায় একটাকার কাজকে ১০০ টাকায় রূপান্তরিত করি।
সিটি কর্পোরেশনের ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দরা যারা এলাকার সাধারণ অসহায় মানুষের খবর রাখতে পারি না। উনি শত ব্যস্ততার মাঝেও উনি সেই খবর রাখেন এবং সহযোগতার হাত বাড়িয়ে দেন। উনার মত মানুষ সব সময় জন্মায় না। আমরা উনাকে পেয়ে গর্বিত।
কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল বলেন, বিদ্যা নিকেতনের জন্য এমপি সেলিম ওসমানের কাছে চাইতে হবেনা। আমি উনার কাছে অনুরোধ করবো নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ ও নদী দূষনের উপর নজর দিতে।
শারমিন হাবিব বিন্নী বলেন, আমরা ভাগ্যবান সেলিম ওসমানের মত একজন এমপি পেয়ে। উনার কাছে কিছু চাওয়ার আগেই উনি দিয়ে দেন। উনি মানুষের মুখ দেখলেই চাহিদা বুঝতে পারেন।
সভাপতির বক্তব্যের বিদ্যা নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক কাশেম হুমায়ুন বক্তব্যে, বৃটিশ আমলা থেকে অদ্যবদী বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের অবদানের কথা তুলে ধরেন। সেই সাথে আওয়ামীলীগের জন্য খান সাহেব ওসমান আলী, শামসুজ্জোহা সহ প্রয়াত নাসিম ওসমান ও এমপি সেলিম ওসমানের ত্যাগের কথা তুলে ধরেন।
এ সময় তিনি এমপি সেলিম ওসমানের কাছে অনুরোধ রেখে বলেন, আপনি শিক্ষার মানোন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। একটি সুন্দর সমাজ গঠনে শিক্ষা ব্যবস্থা সব থেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে। আপনি সেই কাজটিই করে যাচ্ছেন। তাই আপনার প্রতি অনুরোধ রইলো আপনি নারায়ণগঞ্জে একটি পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করেছেন। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এই পরিবর্তন অত্যন্ত প্রয়োজন। আপনি আমি আমরা কেউ হয়তো এক সময় থাকবো না। কিন্তু আমরা যদি পরিবর্তনটা এনে দিয়ে যেতে পারি তাহলে আজকের এই শিশুরা আগামীতে সুস্থ্য নেতৃত্ব দিয়ে নারায়ণগঞ্জ তথা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। নারায়ণগঞ্জের পরিবর্তন আনতে আমরা সকলের সহযোগীতা করবো।