সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
মেয়াদ উত্তীর্ণ গ্যাস-সিলিন্ডার ঘরে অথবা গাড়ীতে রাখা মানে টাইম বোমা রাখা। আর এ বিষয়টি বেশি আলোচনায় আসে গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় বহু মানুষ নিহতের ঘটনার পর থেকে। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারে ভয়াবহ আগুন কীভাবে লেগেছিল, তা নিয়ে নানান জনের নানান মত থাকলেও সঠিক কারণটি জানতে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে। এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটিই জানাতে পারবে আসল কারণ। তবে প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের বিবরণ আর বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করে আগুন লাগার মোটামুটি একটা চিত্র দাঁড় করানো যায়- অনড় যানজটে একটি পিকআপ ভ্যানের সিএনজি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের সূত্রপাত। সেখান থেকে পাশের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। পাশের ওয়াহিদ ম্যানশনে থাকা কেমিক্যাল সে আগুন দ্রুত ছড়াতে সহায়তা করে।
সারাদেশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছেই। এ বিস্ফোরণের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধের পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। সিলিন্ডারগুলো নিম্নমানের হওয়ায় একেকটি শক্তিশালী বোমায় পরিণত হচ্ছে। ফলে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে আতঙ্ক। বিশেষ করে রাজধানীর চকবাজারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় বহু মানুষ নিহতের ঘটনার পর থেকে এ আতংক বাড়ছে বহুগুনে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানায়, দেশে পাইপ লাইনে গ্যাস সঙ্কটের কারণে সিলিন্ডারের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। চাহিদা বেশি থাকার ফলে মানহীন সিলিন্ডারও বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণেই সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও দূর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। এছাড়া সিলিন্ডার ব্যবহারে মানুষের সচেতনতারও ঘাটতি রয়েছে। এই কারণেও দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। তাদের মতে, সিলিন্ডারের মান নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা নেই। যেসব সংস্থা মান নিয়ে কাজ করে তাদেরও মান যাচাই করার সঠিক সক্ষমতা নেই। বিস্ফোরক পরিদপ্তর এ বিষয়ে দেখার করা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তারা পারছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিস্ফোরণ তাজা বোমার মত ভয়ঙ্কর। আইন করে সিলিন্ডার রিটেস্ট বাধ্যতামূলক করা হলে অনেকটাই কমে যাবে এ ঝুঁকি। সরকারের উচিত খুব দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন, যানবাহন ও গৃহস্থালি জ্বালানির গ্যাস সিলিন্ডার ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। নিম্নমানের সিলিন্ডার ও কিটস ব্যবহার, পাঁচ বছর পরপর রিটেস্ট না করাসহ বিভিন্ন কারণে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সিএনজিচালিত তিন লাখ যানবাহনের সিলিন্ডারের মধ্যে রিটেস্ট করা হয়েছে মাত্র ৫০হাজার। সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ৩২শ’ পাউন্ড চাপে যখন গ্যাস ভরা হয় তখন রাস্তাায় এক একটি গাড়ি চলন্ত বোমা হয়ে ওঠে। তাছাড়া, সিএনজিচালিত গাড়ির পাঁচ বছরের বেশি পুরনো সিলিন্ডার পুণঃপরীক্ষার আইন কেউ মানছে না। রিটেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় দুই লাখ গাড়ি বিপজ্জনক সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় চলছে। এ অবস্থায় গত কয়েক বছরে রাস্তার ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। সরকার বর্তমানে সিএনজিচালিত যানবাহন নিরুৎসাহিত করলেও বিদ্যমান সিএনজি সিলিন্ডার নিয়ে উৎকণ্ঠা কাটছে না।
যানবাহন ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারগুলো নাগরিকদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। নিম্নমানের সিলিন্ডার ও কিটস ব্যবহার এবং পাঁচ বছর পর পর রিটেস্ট করার নিয়ম না মেনে গাড়িচালকরা জীবন্ত বোমা নিয়ে যানবাহন চালাচ্ছেন। চালকদের পাশাপাশি গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার যাত্রী এমনকি পথচারীদের জীবনের জন্যও হুমকি সৃষ্টি করছে। প্রায়ই ঘটছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৩২শ’ পাউন্ড চাপে গ্যাস ভরা হয়, ওই সময় গাড়ি ভয়াবহ বোমা হয়ে বিস্ফোরণের বিপদ সৃষ্টি করতে পারে, এ আশঙ্কা রোধে গ্যাস সিলিন্ডারের সঠিক মান রক্ষা করা জরুরি। এদিকে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু এলপিজি সিলিন্ডারও বিস্ফোরিত হয়েছে। মানহীন সিলিন্ডার ব্যবহার করায় নিরাপদ রান্নাঘর হয়ে উঠেছে বিস্ফোরণের বিপজ্জনক স্থান। বাধ্যবাধকতা থাকলেও সিএনজিচালিত গাড়ির পাঁচ বছরের বেশি পুরনো সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষায় কেউ উদ্যোগী হচ্ছে না। রিটেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় দুই লাখ গাড়ি বিপজ্জনক সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় চলছে।
গত সোয়া দুই বছরে সিএনজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ১১৩টি ঘটনায় অর্ধশত মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যাও বিপুল। ঘন ঘন দূর্ঘটনার কারণে সিএনজি সিলিন্ডারের নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিঃ মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার অনুসন্ধ্যানে বিশেষ জোর দিচ্ছে। বিস্ফোরক পরিদফতরও অননুমোদিত কনভার্সন ওয়ার্কশপ নিয়ে বরাবরই উদ্বিগ্ন।
গত জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৩৮৯টি গাড়ি সিএনজিতে চলছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬টি গাড়ি দেশে সিএনজিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বাকি ৪০ হাজার ৩৮৯টি গাড়ি সিএনজি অবস্থায় আমদানি হয়ে এসেছে। দূরপাল্লার বাণিজ্যিক যানবাহন বিশেষ করে বাস-ট্রাকের কোনো কোনোটিতে দুই থেকে ছয়টি সিলিন্ডার সংযোজন করা হয়। এসব যানবাহনের ২ লাখ সিলিন্ডারের পুনঃপরীক্ষার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এর অনেক গুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলাচল করছে।
নিম্মমানের সিলিন্ডার ও কিটস, পাঁচ বছর পর পর টেস্ট না করানোসহ কয়েকটি কারণে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এবং এতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এই তথ্য দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে ‘বিপজ্জনক সিলিন্ডার বোমা’ শীর্ষক প্রতিবেদন। ঐ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় গাড়িতে ব্যবহার করা গ্যাস সিলিন্ডার মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানহীন ও সময়মত পুনঃপরীক্ষা না করানোই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ। নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি-আরপিজিসিএল, দায় চাপাচ্ছে বিআরটিএ’র কাঁধে। বলছে বিষয়টি আইনের মধ্যে না থাকায় রোধ করা যাচ্ছে না সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। আরপিজিসিএল এর হিসেব অনুযায়ী সারা দেশে প্রায় সোয়া দুই লাখ সিএনজি চালিত যানবাহন রয়েছে। এর মধ্যে একই সিলিন্ডার পাঁচ বছরের বেশী সময় ধরে ব্যবহার করা গাড়ীর সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশী। আর এর ৮০ ভাগই পুন:পরীক্ষা ছাড়াই চলছে সড়ক-মহাসড়কে।
নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি সিলিন্ডার ৫ বছর অন্তর পরীক্ষা করানোর কথা থাকলেও বিষয়টি এখনও ফিটনেস আইনের মধ্যে ঢোকানো হয়নি। এতে মালিক ও চালক তাদের ইচ্ছেমত পরীক্ষা করাচ্ছেন বা পরীক্ষা ছাড়াই চলছে একেকটি চলন্ত বোমা। আর ঘটছে দূর্ঘটনা। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি আরপিজিসিএল নিজেদের দায় এড়িয়ে বললেন শুধু, সচেতন হতে। প্রাকৃতিক গ্যাসের রূপান্তরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরীক্ষা করা হয় গ্যাস সিলিন্ডার ঝুঁকিপূর্ণ কিনা। সারাদেশে এমন প্রায় ৬’শ প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে রিটেস্ট সেন্টার রয়েছে মাত্র ১৩ থেকে ১৪টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিআরটিএ থেকে ফিটনেস নেয়ার সময় যদি রিটেস্ট বা পুনঃপরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয় তাহলে কমবে ঝুঁকি আর বাঁচবে জীবন। বিআরটিএ’র হিসেব অনুযায়ী এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। যার বড় একটি অংশ সিএনজি চালিত। কিন্তু এর সঠিক কোন পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই।
মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার এখন জীবন্ত বোমায় পরিণত হয়েছে। বাসাবাড়ি, রেস্তোরাঁ ও যানবাহনে অনিরাপদ সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা। এতে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। বিশেষজ্ঞরা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার না জানার কারণে এধরনের দূর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
বাসা বাড়িতে এলপি গ্যাস আর গণপরিবহনে বেড়েছে সিএনজি সিলিন্ডারের ব্যবহার। কিন্তু এই সিলিন্ডারই অনেক সময় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে জীবনের। গতমাসে কেবল রাজধানীতেই ঘটেছে, চারটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। এসব ঘটনায় প্রাণহানিসহ ক্ষতি হচ্ছে বিপুল সম্পদের। গত একবছর এধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিয়েছে, ৭০ থেকে ৮০ জন। যার মধ্যে মারা গেছে ১৩ জন। সম্প্রতি রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনে এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার সিলিন্ডার বিস্ফোরনে অন্তত ৪ জন গুরুত্বর আহত হয়।
ঢাকাসহ সারাদেশে যানবাহনের একটি বড় অংশই সিএনজিচালিত। কিন্তু সিলিন্ডারের ফিটনেস পাঁচ বছর পর পর পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও, তা করা হচ্ছেনা। এটিই, আগুন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে জানালেন, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক। দেশে রান্নার কাজে ব্যবহার করা গ্যাস সিলিন্ডারের সংখ্যা, প্রায় ৫০ লাখ। কিন্তু এর ৮০ ভাগই পুন:পরীক্ষা ছাড়াই ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়ের প্রয়োজনে সিএনজি বা গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার বাড়বে। তবে বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা এড়াতে, এর সঠিক ব্যবহারে শিক্ষা নেয়া দরকার বলে মনে করেন তাঁরা।
গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার স্থাপনের পর রি-টেস্টের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা করছে না গাড়িচালক ও মালিক কর্তৃপক্ষ। অহরহ ব্যবহার হচ্ছে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার। ফলে প্রতিটি গাড়ি পরিণত হচ্ছে এক একটি চলন্ত বোমায়। এসব গ্যাস সিলিন্ডার ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। এসব জেনেও গাড়ির মালিকরা নিয়মিত গ্যাসের সিলিন্ডারটি পরীক্ষা করছে না। গাড়িতে সিলিন্ডার স্থাপনের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও গাড়ির মালিক বা চালক এসব সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষা করিয়ে এগুলো নিরাপদ অবস্থায় আছে কিনা এবং বদলানো প্রয়োজন কিনা, তা নিশ্চিত হন না। দেখা গেছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও, আড়াইহাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বিপুলসংখ্যক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চললেও এগুলোর মালিক কিংবা চালক গ্যাস সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষার ব্যাপারে নির্বিকার ও উদাসীন। ফলে এসব যানবাহন ধীরে ধীরে ‘বোমাবাহী’ গাড়ির ন্যায় বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
বিস্ফোরক অধিদপ্তরের জনৈক কর্মকর্তা বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ এক একটি সিলিন্ডার একটি বোমার চেয়েও ভয়াবহ। তবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রি-টেস্ট সেন্টার ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকার মাধ্যমে এই বিপর্যয় মোকাবেলা করা সম্ভব। সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এখন যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, গাড়িতে লাগানো সিএনজি চালিত গ্যাস সিলিন্ডার প্রতি পাঁচ বছরের মধ্যে পুনঃপরীক্ষা করার নিয়ম রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কনভার্সন কর্তৃপক্ষ কি পরিমাণ সিএনজি চালিত গাড়ি রয়েছে এবং কি পরিমাণ সিলিন্ডার পরীক্ষিত হয়েছে তা বিস্ফোরক অধিদপ্তরে এই পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা। যদিও গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটলে হতাহতের ঘটনা অনিবার্য। বেসরকারি এক জরিপের তথ্য মতে, নির্দিষ্ট সময়ের আগে পরীক্ষার নিয়ম থাকলেও তা মানছে না পরিবহন মালিকরা। প্রায় সাড়ে চার লাখ সিএনজি চালিত যানবাহনের মধ্যে এ পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র ৫০ হাজার। দিন যত গড়াচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডারের বয়স বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। রি-টেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় চার লাখ গাড়ি বিপজ্জনক সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় চলছে প্রতিনিয়ত। এখনই সচেতন না হলে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।
ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডার গাড়িতে রাখলে তা চলন্ত বোমার মতো, বাড়িতে থাকলে নিজেই তা গণবিধ্বংসী অস্ত্র। ফলে সিলিন্ডারের মেয়াদ পর্যবেক্ষণ, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বদল ও ত্রুটিযুক্ত সিলিন্ডার বাতিলের পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে একটি শক্ত আইনি কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। সরকার যখন রান্নার কাজে এলপিজি গ্যাসের বিস্তার বাড়াতে চাইছে, তখন এটি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। জরুরিভাবে সারা দেশে ত্রুটিপূর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারগুলো চিহ্নিত করা দরকার। এ জন্য ভোক্তাদের যেমন সচেতন করতে হবে, তেমনি সরকারিভাবে সিলিন্ডার টেস্ট ও বদলে নেওয়ার সেবা চালু করতে হবে।
মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের গ্যাস সিলিন্ডার মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। বাসাবাড়ি, শিল্প-কারখানা ও যানবাহনে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে একের পর এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। কিন্তু কেন ঘটছে এ ধরনের ঘটনা, কীভাবে এই অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং এ জন্য আসলে কারা দায়ী সে বিষয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার তেমন কোনো উদ্যোগই দেখা যায়নি।
বাংলাদেশে বাসাবাড়িতে এবং বিভিন্ন যানবাহনে যেসব গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে তার একটি বড় অংশ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় এগুলো বিস্ফোরিত হতে পারে। প্রতিটি সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদ দশ থেকে ১৫ বছর। এরপর সেগুলো ধ্বংস করে ফেলতে হয়। কিন্তু দেশে গাড়িতে যেটা ১০ বছর বা ১৫ বছর আগে লাগানো হয় সেটা চলতেই থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৩ হাজার পাউন্ড চাপে যখন গ্যাস ভরা হয় তখন রাস্তায় চলাচলকারী এক একটি গাড়ি যেন চলমান বোমা হয়ে ওঠে। গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার এমনকি গ্যাসও উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে। সিলিন্ডার যথাযথ না হলে বড় রকমের অঘটন ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। বড় বাস-ট্রাকের বিস্ফোরণের ঝুঁকি অনেক বেশি। কারণ বাস-ট্রাকগুলোতে ছয় থেকে আটটি সিলিন্ডার থাকে। যদি সিলিন্ডার রিটেস্ট করানো বাধ্যতামূলক করা যায় তাহলে এই ধরনের ঝুঁকি কমবে। সবাই সচেতন হবে। এর ফলে প্রাণহানি ও যানবাহনও নিরাপদ হবে।
যানবাহন ও গৃহস্থালি জ্বালানির গ্যাস সিলিন্ডার যেন শক্তিশালী বোমা। দিন দিন ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রাণহানি একটি নিয়মিত ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরণে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও দুর্ঘটনার রাশ টানার কোনো উদ্যোগ না থাকা উদ্বেগজনক। নিন্মমানের সিলিন্ডার ও কিটস ব্যবহার, পাঁচ বছর পরপর রিটেস্ট না করাসহ বিভিন্ন কারণে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ও হতাহতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বৈধ বা অবৈধভাবে গাড়িতে সংযোজিত আড়াই লক্ষাধিক সিএনজি সিলিন্ডার এখন জানমালের জন্য ভয়ঙ্কর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে চলন্ত অবস্থায় প্রায়ই গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হচ্ছে, দুর্ঘটনায় যানবাহন ভস্মীভূতসহ প্রাণহানিও ঘটছে অহরহ। বৈধভাবে সংযোজিত দুই লক্ষাধিক সিলিন্ডার ইতোমধ্যে রিটেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে, এর সাথে যুক্ত হয়েছে নকল-ভেজাল নিম্নমানের অসংখ্য সিলিন্ডার।
রিটেস্টবিহীন সিলিন্ডার গুলো চরম ঝুঁকি সত্ত্বেও বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কারে ব্যবহৃত হচ্ছে। সিএনজিচালিত গাড়ির পাঁচ বছরের বেশি পুরনো সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষার আইন কেউ মানছে না। রিটেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় দুই লাখ গাড়ি বিপজ্জনক সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় চলছে। এমন অবস্থায় গত কয়েক বছরে রাস্তার ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে।
সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জনৈক নেতা বলেন, বিআরটিএ’তে একটি সিএনজি সেল স্থাপনের মধ্য দিয়ে ফিটনেস ও নবায়নের সুযোগ সৃষ্টির প্রস্তাব দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন হয়নি। গাড়ির ফিটনেসের সময় সিলিন্ডার রিটেস্টের সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হলে সিলিন্ডার পরীক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো। ইদানীং পুরনো জাহাজের মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারকেও গাড়িতে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। জনস্বার্থে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা দরকার। রাজপথে চলাচলকারী মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারবাহী গাড়ি আটকের বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ রোধে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই। টাইম বোমা ঘরে অথবা গাড়ীতে রাখা বন্ধ করতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরনের হাত থেকে জনগনকে বাঁচাতে হবে। জননিরাপত্তার স্বার্থে দুর্ঘটনা রোধে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এবং সরকার সক্রিয় হবে এমনটিই প্রত্যাশা।
লেখক: আশিকুর রহমান হান্নান
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, চ্যানেল জিটিভি ও সারাবাংলা ডট নেট