সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
ঢাকা থেকে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ‘ময়ূরপঙ্খী’ উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টাকারী কথিত মাহাদীর বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে। তার প্রকৃত নাম মাহমুদ পলাশ (২৪)। ঢাকাই চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নায়িকা সিমলা তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেছে মাহমুদ পলাশের পরিবার।
এ বিষয়ে মাহমুদ পলাশের পরিচয় নিশ্চিত করে ২৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেরা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ প্রেস বিফ্রিং করেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন এখনও পর্যন্ত কোন থানায় এই মাহাদী ওরফে মাহমুদ পলাশের বিরুদ্ধে কোন মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার জানান, মাহমুদ পলাশের সঙ্গে তার পরিবারের যোগাযোগ ছিল না। প্রায় ২০ দিন পূর্বে সে বাড়িতে আসে। তার বাবার কাছ থেকে দুবাই যাওয়ার কথা বলে টাকাও নেয়। এর আগে বিদেশে পাঠানোর নাম করে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি অনেকেই জানিয়েছেন। অনেকটা চিটিং করে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যেতো সে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, হা মাহাদীর পরিবার জানিয়েছেন তাদের বাড়িতে সিমলা আসতো।
তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা প্রামের পিয়ার জাহানের ছেলে এই মাহাদী ওরফে মাহমুদ পলাশ।
তার পরিবার জানায় ২০১১ সালের দিকে উপজেলার তাহিরপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করেছিল সে। এরপর সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করেনি।
পলাশের বাবার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তিনি ১৯৯০ সাল থেকে বিদেশে থাকতেন। প্রথমে কুয়েত এবং পরে সৌদি আরবে ছিলেন তিনি। প্রবাসী বাবার দেওয়া টাকা-পয়সা নিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করতো পলাশ। এর মধ্যে নাচগান থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র শিল্পে জড়ায় সে। কয়েকটি শর্টফিল্মও তৈরি করেছিল বলে জানান তিনি।
এক পর্যায়ে সোনারগাঁয়ের বাসা ছেড়ে ঢাকায় চলে যায় পলাশ। বাড়িতে তেমন আসতো না। মাঝে মধ্যে টাকার প্রয়োজন হলে বাড়ি আসতো।
পলাশের বাবা পিয়ার জাহান বলেন, গত ২০-২৫ দিন আগে বাড়িতে আসে পলাশ। সাধারণত বাড়িতে সে এত দিন থাকতো না কখনও। গত ২০-২৫ দিনে অনেকটা পাল্টে যায় সে। মসজিদে যাওয়া-আসা করে, এমনকি আজানও দিয়েছে।
তিনি জানান, গত শুক্রবার বাসা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তার মাকে বলে যায়- ভ্রমণ ভিসায় আমি দুবাই যাচ্ছি। তবে দুবাই যাওয়ার বিষয়ে বাবা পিয়ার জাহানাকে বলেননি পলাশ।
পলাশের বাবা আরও জানান, প্রায় ১০ মাস আগে চিত্রনায়িকা সিমলাকে বাড়িতে নিয়ে আসে পলাশ। বাবা-মায়ের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেয়। সিমলার সঙ্গে তাদের কথাও হয়।
তিনি বলেন, এক-দেড় মাসের ব্যবধানে দু’বার আসে পলাশ ও সিমলা। দ্বিতীয়বার এসে পলাশ বলেছে- আমি সিমলাকে বিয়ে করেছি। সিমলাও বিষয়টি স্বীকার করেছে।
পিয়ার জাহান বলেন, ‘আমি সিমলাকে তখন বলেছি- তোমার সঙ্গে বয়সের এত ব্যবধান, কীভাবে আমার ছেলেটাকে বিয়ে করেছো? যাহোক বিয়ে যেহেতু করেই ফেলেছো, আমার ছেলেটা যাতে ভালো হয়ে যায় একটু খেয়াল রেখো।’
তিনি জানান, পলাশের মা রেনু আক্তারের সঙ্গে এরপর তিন মাসের মতো সিমলার কথাবার্তা ও যোগাযোগ হয়। পরে আর যোগাযোগ হয়নি। হয়তো সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল।
পলাশের বাবা বলেন, বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে প্রথমে তারা কিছুই জানতেন না। পরবর্তীতে তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন।
তিনি বলেন, ‘সোনারগাঁও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ রাতে তাদের বাসায় এসে একটি ছবি দেখিয়ে জানতে বলেন- এটা আপনার ছেলে কিনা? পরে দুবাই যাওয়ার বিষয়টি এবং ছবি মিলে যাওয়ায় পলাশের পরিচয় নিশ্চিত হই।’
পরিবার সূত্রে আরও জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার সাতমাথা ভাইপাগলা মাজারের পাশে পলাশ ২০১৪ সালে মেঘলা নামে একজনকে বিয়ে করেছিল পলাশ। তাদের আড়াই বছর বয়সী আয়ান নামে একটি সন্তানও আছে। মেঘলা বগুড়ার স্থানীয় নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপালের মেয়ে। তার বাবা বগুড়ায় আইন পেশায় জড়িত।