সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা বলেছেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বললাম, আইসিটি আইনে আরেকটা মামলা করেন আমার নামে। আপনার ভুয়া মামলায় আমি জেলে যেতে রাজি। বিএনপির দুঃশাসন আমলে, এরশাদের আমলে, টোটাল মামলা খাইছি ৪১ টা। ৪০টায় আমি বেখসুর খালাস, একটায় রিমান্ডে অনেক মাইর খাইছিলাম। আমার ভাতিজি মেয়র আইভী মনে করছে, খোকন কাকার নামে মামলা দিলে কাকায় পলাইয়া ইন্ডিয়া যাইবো গা’।
৬ ফেব্রুয়ারি ৬ ফেব্রুয়ারী বিকেলে মেয়র আইভীর পরিবার থেকে দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে জিউস পুকুরের সামনে গণ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ্যাডভোকেট খোকন সাহা এসব কথা বলেন।
এসময় জিউস পুকুর সম্পত্তি দখলে মেয়র আইভীর পরিবারের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গে খোকন সাহা বলেন, ‘৬টা দলিল আপনাদের দেখাবো। (এসময় তিনি দলিল গুলো সবাইকে দেখান) এই ৬টা দলিল মেয়র বলেছে উনার বাবার ওয়ারিশ সূত্রে উনারা মালিক হয়েছে। আজ প্রমাণ করে দিবো। আমরা সত্য বলছি। দলিল নাম্বার ৩৫৫১৮, সম্পাদনের তারিখ ২২/৮/১৯৭৯, এই দলিলটি হয় মেয়রের আপন নানা মাহাতাব উদ্দিনের নামে, সম্পত্তি ৫৭ শতাংশ। এই জিউস পুকুরের দলিল হইছে মেয়র আইভীর নানার নামে, ১০ হাজার টাকায় কিনেছে মাহাতাব উদ্দিন। একই তারিখে ২২/৮/১৯৭৯ দ্বিতীয় আরেকটি দলিল, এই দলিলে নাম মাহাতাব উদ্দিন সাহেবের মেয়ে, আইভীর মা ও আমার ভাবী অত্যন্ত ভালো মহিলা মমতাজ বেগম’র নামে। যার স্বামী আলী আহম্মদ চুনকা, ২২/৮/১৯৭৯ তারিখে দলিল নাম্বার ১২৪২৩। আমার মাতৃতুল্য ভাবীর নামের সম্পত্তি জিউস পুকুর পাড়ের ৬০ শতাংশ এই দলিলে জিউস পুকুরের দাম লেখা হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তৃতীয় আরেকটা দলিলের মালিক আইভীর দুই ভাই আমার ভাতিজা উজ্জ্বল ও রিপনের নামে। দলিলের নাম্বার ৩২৫১৫, এখানেও একই তারিখ ২২/৮/১৯৭৯, এই দলিল যখন হয় আমার দুই ভাতিজার বয়স উজ্জ্বল’র দেড় বছর ও বড় ভাতিজা রিপনের বয়স সাড়ে ৩ বছর। তারা কিনছে ৬০ শতাংশ জিউস পুকুর পাড় ১০ হাজার টাকায়। চতুর্থ আরেকটি দলিল আইভীর চাচী আমার শ্রদ্ধের চুনকা ভাইয়ের ভাই জমু ভাইয়ের স্ত্রী সাহারা খাতুনের নামে। এই দলিল ২২/৮/১৯৭৯ তারিখের, দলিল নাম্বার ৩২৪২৪। পঞ্চম আরেকটি দলিল আইভীর তিন মামার নামে একই তারিখের দলিল নাম্বার ৩২৪২২, এই দলিলটার মালিক আইভীর আপন তিন মামা। ষষ্ঠ দলিল আমার প্রিয় নেতা চুনকা ভাই ২২/৮/১৯৭৯ তারিখে দলিল নাম্বার ৩২৪২১। অথাৎ ,জিউস পুকুর পাড়ের সম্পত্তি বিক্রি হইছে ৬০ হাজার টাকায়। এবার মাননীয় মেয়র, আমি বললাম দায়িত্ব নিয়ে, আইসিটি আইনে আরেকটা মামলা করেন আমার নামে, চ্যালেঞ্জ করলাম। বেশি চুলকাইয়েন না। এই দলিলের মাস্টার মাইন্ড কে? ৬টা দলিলে পর্দার অন্তরালে কে? যে কোন সময় খুলে যাবে আমার মুখ। মুখ খোলার চেষ্টা করবেন না। আমরা বলেছিলাম রাজেন্দ্র শর্মাকে গুম করা হয়েছে। উনি প্রতিবাদ করেছেন। বলেছেন, যে না রাজেন্দ্র শর্মাকে দাহ করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ শশ্মানে। আমি সব জানি। শহরের ৫০ বছরের ইতিহাস আমি জানি। মুখ খোলাবেন না, ঘর থেকে বের হতে পারবেন না’।
খোকন সাহা আরও বলেন, ‘গতকালের একটা নিউজ পড়লাম আজ, ডিআইটি মসজিদের ইমাম সাহেবের। উনি বললেন মেয়র বলেছেন বাগে জান্নাত মসজিদ ভেঙ্গে পার্ক করবেন। বন্দরের খোকনের দাদার মসজিদ বহু জায়গা নিয়ে ওয়াকফ করছে, সামনে প্রচুর জায়গা, সিটি কর্পোরেশনের মার্কেট বানিয়েছে সেখানে সুফিয়ানদের পেট ভরার জন্য। উনি ডিআইটি ভাঙ্গবেন। আমার বক্তব্য না, দায়িত্ব নিয়ে বলি সেটা হুজুর বলছেন, আমি মুসলমান ভাইদের সম্পত্তি রক্ষায় বিনা পয়সায় কাজ করি। বৌদ্ধ খ্রিষ্টানদের জন্য কাজ করি বিনাপয়সায়। মুসলমান ভাইদের সম্পত্তি রক্ষায় আপনারা সকলে আসবেন। যারা ওয়াকফ সম্পত্তির জন্য লড়ছেন, এদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান আপনাদের পাশে আছে। আমরা ওয়াকফ এর সম্পত্তি দখল হতে দিবো না। বাদলরে তো উনি চাঁনপুর পাঠাইয়া দিছেন, চন্দনশীলরে বরিশাল পাঠাইয়া দিছেন, আর কাজল তো রূপগঞ্জে আছে’।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘মাস্টার মাইন্ড আরেকদিন বলবো। আমার দলের বদনাম হবে। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর কিছু লোকের জন্য বদনাম হয়েছিল। কারণ, তারা লুট করেছিল। নারায়ণগঞ্জ তার ব্যতিক্রম নয়। সব বলে দিবো । এখনও সময় আছে দেবোত্তর সম্পত্তি ওয়াকফ্ স্ট্রেটের সম্পত্তি ছেড়ে দেন। সব বলবো, কত তারিখে কার বাড়ি নামমাত্র মূল্যে দিয়ে ভারতে পাঠিয়েছেন, কোন কোন জায়গা দখল করেছেন, সব বলে দিবো। আমরা জানি নারায়ণগঞ্জের সিএস আরএস আছে’।
মেয়র আইভীর উদ্দেশ্যে খোকন সাহা বলেন, ‘চন্দনশীল দুই পা হারিয়েছে, মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে। আপনার সিএস টা আগামীতে বলে দিবো, কাগজ প্রমাণ নিয়ে বলবো। কোথা থেকে এসেছেন। আপনাদের স্বস্থানে পাঠিয়ে দিবে নারায়ণগঞ্জবাসী। পোস্টারে দেখলাম, প্রণাম করছেন। মা কালী আমাকে পাশ করিয়ে দেও, মায়ের দোহাই দিয়ে ভোট নিবেন, আর দেবোত্তর সম্পত্তি খাবেন, তা হবে না। জিউস পুকুর উদ্ধারে প্রাণ গেলেও আমি খোকন সাহা প্রস্তুত। কি করবেন? মেরে ফেলবেন? ওয়াকফ সম্পত্তি খাবেন, মুসলমান ভাইদের মসজিদের সম্পত্তি খেয়ে বিশাল মার্কেট করবেন, সেটারও প্রতিবাদ করবো। আমি তো পরিষ্কার বলেছি, শেখ হাসিনা দখলদারিত্বের দায় দায়িত্ব নিবেন না। শেখ হাসিনা ভূমি দস্যুদের দায়িত্ব নিবেন না। আর আমরা তো নেত্রীর কর্মী হিসেবে নিতে পারি না। সর্বশেষ আরেকটা কথা, অনেকে বলেন খোকন সাহা মেয়র নির্বাচন করবে। আরে ভাই ২৫ বছর এই শহরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। চাওয়া পাওয়ার অনেক কিছু হয়েছে। হিন্দু, মুসলিমদের নিয়ে শেখ হাসিনা ২৫ বছর রেখেছেন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। দেবোত্তর ও ওয়াকফ সম্পত্তি ছেড়ে জনগণের কাছে মাফ চান। শেখ হাসিনার গোলাম আমরা, শামীম ওসমান, চন্দন শীল, বাদল আমরা সবাই গোলাম। মাফ চান ওয়াকফ ও দেবোত্তর সম্পত্তি ফেরত দেন। নেত্রীর হাতে পায়ে ধরে নমিনেশন আনেন। আমরা নেত্রীর গোলাম হিসেবে আপনাকে পাশ করিয়ে দিবো। এই টুকু আশ্বস্ত করতে চাই’।
মেয়র আইভীর করা আইসিটি আইনে মামলা প্রসঙ্গে খোকন সাহা বলেন, ‘অনেকে বলেছেন খোকন সাহার বিরুদ্ধে মামলা। অনেকে অনেক কিছু করতে চাইছেন। আমি বলছি কিছু দরকার নাই। হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, খালেদা মামলা দিয়েছেন। ২০০১ থেকে ৬ পর্যন্ত অনেক মামলা খেয়েছি। বলছেন খোকন সাহা মামলা দিলে পলাইয়া যাইবো ইন্ডিয়া। আরে পলাইবেন তো আপনে। আমি খোকন সাহা মামলা দিলে, আপনে থাকতে পারবেন না। ভুল আপনে করছেন, আমি ভুল করতে রাজি না। কারণ, রাজনীতি অভিজ্ঞতার বিষয়। আপনে কয়দিন ধরে আওয়ামী লীগ করেন? কবে আসছেন? অনেক কিছু বলতে হয়’।
খোকন সাহা আরও বলেন, ‘আপনার জমু চাচা ৯২ সালে শামীম ওসমানকে ধরলেন, বললেন শামীম বাবা ‘চুনকা ভাইয়ের রক্ত আসছে’। নাজমা রহমানের বাঁধা আসছিল, কিন্তু শামীম ওসমান দয়ালু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক করা হলো। ২০০৩ সালে নমিনেশন কিভাবে পেলেন, আপনারাই বলবেন। আমার নেতা মহানগরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট আনোয়ার ভাই বলছেন, ‘মেয়র বেইমান, রাত ভর মেকানিজম করেছি। জামায়াত শিবিরের সাথে আতাত করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে ফেইল করিয়েছি।’ আমার নেতা আনোয়ার হোসেনের বক্তব্য এটা। কাদের সাথে আপনি চলছেন? নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, রফিউর রাব্বি, মাহবুবুর রহমান মাসুম, শাহেদ আলী কারা আপনার উপদেষ্টা? এরা কিন্তু ৮৪ সালে আপনার বাবাকে ডুবাইছিল। ‘যেবা করেছে দেবতার অন্ন গ্রাস, বিন্দাবন গেলে কয় তার হবে সর্বনাশ’। শাহেদ আলী, মজনু, মাহবুবুর রহমান মাসুম, রফিউর রাব্বি, খোকন সাহা বলছে তাই দূরে সরাবেন, না আটকাইয়া রাখেন, তারাই আপনাকেও ডুবাবে’।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, প্রধান বক্তা বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মূল চ্যার্টাজী । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বাংলাদেশ হোসিয়ারি এসোসিয়েশনের সভাপতি ও নাসিক ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বাবু চন্দন শীল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রবিউল হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল, বর্তমান সভাপতি এড. মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া, বাংলাদেশ ইয়ান মার্চস সভাপতি লিটন সাহা, নাসিক ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফি উদ্দিন প্রধান, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত মন্ডল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক উত্তম সাহা, মহানগরের সভাপতি অরুণ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা, বন্দর কমিটির সভাপতি শংকর দাস, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, সিদ্ধিরগঞ্জ পূজা পরিষদের সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, সাধারণ সম্পাদক খোকন বর্মন, প্রয়াত কমান্ডার গোপীনাথ দাশের বড় ছেলে সঞ্জয় দাসসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।