সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের নলুয়া পাড়া জামে মসজিদের আয় ব্যয়ের হিসেব নিয়ে সাবেক ও বর্তমান কাউন্সিলরের মাঝে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের পর এলাকাবাসী মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে আসছিল। সংঘর্ষের দিন যেখানে ৪ প্লাটুন পুলিশের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে বর্তমান ও সাবেক কাউন্সিলর সহ ২২জনকে গ্রেপ্তার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে হয়েছিল। সেখানে সোমবার ২৫ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর সাথে আধঘন্টার আলোচনায় বিরাজমান আতঙ্কের অনলে পানি ঢেলে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে দিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে স্বপ্রনোদিত হয়ে আলোচনা সভাটির আয়োজন করায় বাংলাদেশ পাট আড়ৎদার মালিক সমিতির সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন লাভলুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এমপি সেলিম ওসমান।
এ সময় তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে তাদের গোলামী করার দায়িত্ব দিয়েছেন। এলাকার শান্তি বজায় রাখা আমার দায়িত্ব। কবির ও মুন্না তারা উভয়েই আমার সন্তানের মত পরিবারের মত। আজকে আমার পরিবারে অশান্তি বেধেছে তাদের জন্য এলাকার মানুষ হাতংকে রয়েছে। এ জন্য আমি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। তবে এ নিয়ে এলাকায় আবারো যদি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাহলে সে যদি আমার সন্তানও হয় তাকেও ছাড় দেওয়া হবেনা। সন্তান যদি খারাপ হয় তাকে তেহ্য করার আইনে বিধান রয়েছে। উচ্ছৃঙ্খলতা সৃষ্টির পেছনে যারা থাকবে তাদের বাবা-মায়েরা যেন আমার কাছে না আসেন। আইন তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ সময় তিনি আগামী ৭ মার্চের মধ্যে ফয়েজ উদ্দিন লাভলুর নেতৃত্বে মসজিদের সকল আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রস্তুত এবং দেনা-পাওনা পরিশোধ করতে নির্দেশ প্রদান করেন। এলাকার সাধারণ মুসুল্লীদের মাঝে সেই হিসাব প্রকাশ করা হবে। আর কমিটির নেতৃত্বে কারা থাকবেন সেটা এলাকাবাসীই নির্ধারণ করবেন। বিষয়টি নিয়ে পুণরায় এলাকার কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি বা উত্তেজনাকর ঘটনা ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমপি সেলিম ওসমানের এমন সিদ্ধান্তের প্রতি সকলে সম্মতি প্রকাশ করেন এবং সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না এবং বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসেন উভয়েই বিষয়টি নিয়ে এলাকায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, আমি নিজে হারাম খাই না। আমি কাউকেও হারাম খেতেও দিবো না। অনেকেই আছেন যারা আগামীতে নির্বাচন করবেন বলে অনুদান দিচ্ছেন। অথচ উনারা অনুদানের ওই টাকাটা ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে দেখিয়েছেন কিনা, ওই টাকা আয়ের উৎস কি? আপনার সম্পদের যাকাতের হিসেবটা কি হবে? সেই বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখতে হবে। আপনার আয় যদি সঠিক না হয় তাহলে আপনার অনুদান কবুল হবে না। অনেকে আছেন রাস্তার মোড়ে বড় বড় সাইনবোর্ড লাগিয়ে স্বঘোষিত নেতা সাজছেন। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠান করছেন। আর নারায়ণগঞ্জের কিছু মানুষ তাদেরকে পেছন থেকে উস্কানি দিচ্ছেন। যারা করছেন তাদেরকে আমি কিছু বলবো না। কিন্তু পেছন থেকে যারা উস্কানি দিচ্ছেন তাদেরকে বিন্দু মাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
নিতাইগঞ্জ এলাকার অতীত ইতিহাস টানতে গিয়ে তিনি বলেন, এখানে এক সময় পাটের ব্যবসা ছিল। পাটের ব্যবসার জন্য বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়ে যতই পাট শিল্পকে উজ্জীবিত করতে চাইছেন আমাদের নারায়ণগঞ্জে বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনকে ততই লুটেপুটে খাওয়া হচ্ছে। জুট অ্যাসোসিয়েশনের আজকে ব্যাংক ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, ডাক্তার খানা বসানো হয়েছে। আসলে আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষ সজাগ হতে পারছি না। নয়তো একটি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যায় কিভাবে?
নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে অনেক ভাল ভাল সাংবাদিক রয়েছেন। যারা দেশের প্রথমসারির পত্রিকায় কর্মরত আছেন কিন্তু উনাদের প্রেসক্লাবের সদস্য করা হয়না। অথচ সাংবাদিকতা পেশায় নেই এমন অনেকেই প্রেসক্লাবের সদস্য এমনকি কমিটিতেও জায়গা দখল করে বসে আছেন। অথচ সাংবাদিক ভাইয়ের কোন কথা বলছেন না। প্রেসক্লাব কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয়। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনটি বিকেএমইএ ২টি ফ্লোর কিনে নিয়ে মালিকানা ভোগ করছেন। সেই হিসেবে বিকেএমইএ ওই ভবনের শেয়ার হোল্ডার। অথচ বিকেএমইএ’কে না জানিয়েই ওই ভবনে রেস্টুরেন্ট ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সাধারণত বিধান রয়েছে এমন কিছু করতে হলে ইজিএম এর মাধ্যমে অনুমোদন নিতে হয়। অথচ আমার মনে হয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সদস্যরা জানেনও না রেস্টুরেন্টটি কত টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়েছে, কত বছরের চুক্তি হয়েছে।
বাংলাদেশ পাট আড়ৎদার মালিক সমিতির সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন লাভলুর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, ১৮নং ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ভুলু, ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবির হোসেন, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।