সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে অভিমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ফতুুল্লা থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নেন শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। তবে তিনি কৌশলে স্থানীয় পদ ছাড়লেও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদ বহাল রেখে নিজ বগলবন্ধি নেতাদের মাধ্যমে ফতুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভাগিয়ে নিয়েছেন শাহআলম। যেখানে আহ্বায়ক পদে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস ও সদস্য সচিব পদে নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লা। স্থানীয় নেতৃত্বে না থাকলেও ফতুল্লায় বিএনপির রাজনীতির নিয়ন্ত্রক কেবল মুহাম্মদ শাহআলম।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, গত ৩০ ডিসেম্বর অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও মামুন মাহামুদকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে কমিটি গঠনের পূর্বে বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে রেখে একটি কমিটির খসড়া কেন্দ্রে জমা দিয়েছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার।
ফতুুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। বিএনপির সক্রিয় রাজনীতিতে না থাকলেও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করেন সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দীন ও শিল্পপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। ২০০১ সালে এ আসনের এমপি হয়েছিলেন গিয়াসউদ্দীন। ২০০৮ সালে শুধুমাত্র ফতুল্লা থানা এলাকা নিয়ে গঠিত এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
২০০৯ সালে জেলা বিএনপির সভাপতি হয়ে শিল্পপতি শাহআলমের সুবিধার্থে কাজ করেন তৈমূর আলম। ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি ছিলেন খন্দকার মনিরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি ছিলেন মনিরুল আলম সেন্টু এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি ছিলেন আব্দুল হাই রাজু ও সেক্রেটারি ছিলেন এমএ হালিম জুয়েল। তারা মুলত গিয়াসউদ্দীনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তখন পরিচিত ছিলেন।
এদেরকে মাইনাস করে শাহআলমের কারখানায় বসে ফতুল্লা থানা বিএনপির কমিটি শাহআলমের নেতৃত্বে তুলে দেন তৈমূর আলম। এর বিরোধীতা কঠোর সমালোচনা করেছিলেন মনিরুল ইসলাম ও মনিরুল আলম সেন্টু। মেরী এন্ডারসনে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছিলেন। কিন্তু শাহআলমের প্রতি তৈমূর আলমের একচেটিয়া সমর্থন থাকায় কুলিয়ে ওঠতে পারেনি মনির ও সেন্টু। মুুলত এ আসনে শাহআলমের সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করতেই কাজ করেছিলেন তৈমূর আলম।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্বে ছিলেন তৈমূর আলম। ওই সময় তিনি শাহআলম অনুগামী আজাদ বিশ্বাসকে সদর উপজেলা নির্বাচনে সমর্থন করেছিলেন। দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকলেও বারবার শাহআলম ও আজাদ বিশ্বাসের হাতেই ওঠতো ফতুুল্লা থানার নেতৃত্ব। তবে জেলা বিএনপির বিগত কমিটির সভাপতি কাজী মনির ও সেক্রেটারি মামুন মাহামুদ একই কাজ করেছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জে আহ্বায়ক না থাকলেও সেখানে কমিটি না দিলেও ফতুল্লায় শাহআলম সরে যাওয়ার পর রাতের আধারে কমিটি করে দেন তারাও।
তবে এবার সেই ধারার পরিবর্তন হয়েছে। এবার এ আসনে গিয়াসউদ্দীনকে সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে দিতে কাজ করছেন তৈমূর আলম। জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের আগে নানা সুযোগ সুুবিধাও তৈমূরের পেছনে ঢেলেছিলেন গিয়াসউদ্দীন। এমনকি মুলধারার কমিটি থাকার পরেও গিয়াসউদ্দীন অনুগামী নেতাকর্মীদের নিয়ে তৈমূর আলমের বাসায় বৈঠক করেছিলেন তৈমূর আলম। ওই বৈঠকে দাবি করা হয়েছিল ফতুুল্লা থানা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক। যেখানে আহ্বাযক আজাদ বিশ্বাস ও পান্নার নেতৃত্বের কমিটির কেউ ছিলেন না। তৈমূরের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছিলেন মনিরুল ইসলাম।
ওইসব ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জ হিরাজিলে গিয়াসউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মনিরুল ইসলাম ও সম নরুল ইসলাম সহ গিয়াসউদ্দীনের আমলের কমিটির নেতাকর্মীরা। ফতুল্লার রাজনীতি এবার গিয়াসউদ্দীনের নিয়ন্ত্রনে দেয়ার চেষ্টায় তৈমূর আলম।