দৈনিক কালের কন্ঠ থেকে নেয়া:
পশ্চিমবঙ্গজুড়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে সংসদ সদস্য শামীম সমানের একটি সংলাপ। শামীম ওসমান প্রায় চার-পাঁচ বছর আগে নারায়ণগঞ্জের একটি জনসভায় একটি ডেডলাইনকে সামনে রেখে বলছিলেন, ‘২৪ তারিখের পরে আসো খেলব, খেলা হবে।’ এই ‘খেলা হবে’ সংলাপটি দেশের সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রেন্ড হয়ে যায়। কারণে-অকারণে ব্যবহার হতে শুরু করে। বলতে গেলে নেটিজেনরা বেশ মজাই পেয়ে যায়।
তবে সবচেয়ে মজার বিষয়, এই সংলাপ সীমান্ত পেরিয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় স্লোগান। শুধু তাই নয়, প্রতিবাদী গান তৈরি করা হয়েছে ‘খেলা হবে’-কে কেন্দ্র করে। বলতে গেলে সব রাজনৈতিক দল গানে, মিছিলে-স্লোগানে সবখানে খেলা হবে স্লোগানকে রেখে তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিধান সভা নির্বাচন এবার ‘খেলা হবে’র দখলে।
পশ্চিমবঙ্গে এই ‘খেলা হবে’ শব্দ যুগলের ব্যবহার করেন বীরভূমের কেষ্ট হিসেবে পরিচিত তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ অনুব্রত মণ্ডল। ধীরে ধীরে এই সংলাপ বা বক্তব্যের অংশ স্লোগানে পরিণত হয়। শুধু তৃণমূল নয় এই স্লোগান এখন পসচিমবঙ্গের প্রায় বসকল রাজনীতিবিদদের মুখেই উঠে আসছে। এখানে শেষ হলেও কথা ছিল। এই স্লোগান এখন বিয়ে বাড়ির ডিজেতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বলতে গেলে এই এক স্লোগান কাসন্ন বিধানসভা উপলক্ষে গোটা পশ্চিমবঙ্গেই হইচই ফেলে দিয়েছে।
এদিকে, এবার ‘খেলা হবে’ স্লোগান বাম ছাত্র যুবদের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। আজ ১১ ফেব্রুয়ারি তাদের নবান্ন অভিযান। পুলিশ ডাফরিন রোড পর্যন্ত মিছিলের অনুমতি দিয়েছে। যা নিয়েই সুব চড়িয়েছে বাম ছাত্র যুবরা। তারা স্লোগান তুলেছে খেলা হবে। তবে তাদের এই খেলা হবে স্লোগান মনে করিয়ে দিচ্ছে অতীতে বামদের নবান্ন অভিযানের কথা।
দিন কয়েক আ্রগে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন খেলা হবে, ভয়ঙ্কর খেলা হবে। এই মাটিতেই খেলা হবে। তিনি আরও বলেন, সেই খেলার রেফারি হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রত মণ্ডলের এই হুঁশিয়ারির পরেই বীরভূম জুড়ে শুরু হয়ে যায় বাইক মিছিল। দলীয় পতাকার সঙ্গে বাইকে দু থেকে তিনজন। তাদের সবার গলায় শোনা গিয়েছিল খেলা হবে স্লোগান।
পাল্টা বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারাও প্রস্তুত, হাতে ঝাণ্ডা নিয়ে দাঁড়াবেন গেরুয়া সমর্থকরা। বুথ দখল করতে গেলেই খাটিয়ায় ফিরবেন তৃণমূলে নেতা, কর্মীরা।
অন্যদিকে তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোর বার্তা দিতে আজ ১১ ফেব্রুয়ারি নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে ১০ টি বাম ছাত্র ও যুব সংগঠন। পাশাপাশি সংগঠনগুলোর তরফে বলা হয়েছে রাজ্যে বিজেপিকে জমি করে দেওযার পাশাপাশি বিজেপিকে লালন পালন করে বাড়িয়ে তোলার কারিগর তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিতেই পথে নামবেন তাঁরা। কলেজ স্ট্রিট থেকে মিছিল শুরু হবে। রাজ্য জুড়ে এব্যাপারে পথ সভা করেছে সংগঠনগুলো। করা হয়েছে বাইক মিছিলও। তারা বলেছে যাহাই নবান্ন তাহাই ছাপ্পান্ন অর্থাৎ মমতা ও মোদি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আর পুরো ‘খেলা হবে’ স্লোগান।
পুলিশ প্রথমে বাম ছাত্র-যুবদের এই কর্মসূচিতে অনুমতি দিতে চায়নি। পাল্টা হিসেবে তারা জানিয়ে দেয় কর্মসূচি তারা পালন করবেনই। যদি কিছু হয়, তার জন্য দায়ী থাকবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। জানা গিয়েছে, এব্যাপারে কথা বলতে মঙ্গলবার লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয় বাম যুব সংগঠনের দুই নেতাকে। সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মিছিলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে ডাফরিন রোড পর্যন্ত। এর পাল্টা হিসেবে বাম ছাত্র যুবরা জানান, পুলিশ পুলিশের মতো মিছিল আটকাবে। কিন্তু নবান্নে তাঁরা যাবেনই। কেননা নবান্নে যাওয়ার অনেক রাস্তা রয়েছে।
এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে বাম ছাত্র যুবদের মধ্যেও উঠেছে খেলা হবে স্লোগান। এদিন তাঁরা বলেছেন খেলা হবে। হুঁশিয়ারি দিয়ে তাঁরা বলেছেন, এমন ছকে খেলা হবে যে দিদির পুলিশ বুঝতেই পারবে না, কীভাবে তারা বক্সে ঢুকে পড়েছেন। তবে এই কর্মসূচির মূল স্লোগান হলো শিক্ষা দাও, কাজ দাও, হাল ফেরাও, লাল ফেরাও। এই কর্মসূচিকে কংগ্রেস ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ এবং যুব কংগ্রেসকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বামদের পক্ষ থেকে।
শামীম ওসমানের ‘খেলা হবে’ স্লোগান গোটা পশ্চিমবঙ্গে দাবানলের মতো ছড়িয়ে যাবে তা হয়তো কখনোই ভাবেনি এদেশের নেটিজেনরা। তাই বিধানসভাকে কেন্দ্র করে এই স্লোগান রীতিমতো দাবানল হয়ে গেল কিভাবে, এটা খুঁজতে গিয়ে ভারতের পত্রিকা গুলো খুঁজে পেয়েছে শামীম ওসমানকে। অবশ্য কেউ কেউ তো এখনও মকনে করছেন এটা অনুব্রত মণ্ডলের। তবে অনুব্রত মণ্ডল যে বাংলাদেশ থেকেই এই স্লোগান আমদানি করেছেন তা ইন্টারনেট ঘাঁটলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।