সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেছেন, আমরা আইজি স্যারের অধীনে। আমরা ডিআইজি স্যারের অধীনে। ডিআইজি স্যারের অধীনে থেকে আমরা কাজ করছি। পুলিশ এখন রাতের আধারে কারো বাসায় গিয়ে হাজিরা দেয়ার মানসিকতা পোষণ করেনা। এজন্য আমি বলি আজকে নারায়ণগঞ্জে যে চেঞ্জ আসছে। আজকে পুলিশ যেখানেই যাচ্ছে সেখানেই মানুষ সুবিচার পাচ্ছে। চেঞ্জ হলো নারায়ণগঞ্জে যেখানে মানুষ অসহায়ত্ব বোধ করতো চাষাড়া থেকে বঙ্গবন্ধু সড়ক পর্যন্ত সেখানে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারতোনা।
২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্স মাঠে পুলিশ সুপার ফুটবল টূর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলা ও নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের সঙ্গে জেলা পুলিশের প্রীতি ফুটবল খেলার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি নারায়ণগঞ্জে মাদক ব্যবসায়ীদের স্থান হবে না। নারায়ণগঞ্জে ভূমিদস্যূদের স্থান হবে না। এখন সকল মাদক ব্যবসায়ীরা অন্তরালে চলে গেছে। তাদের নারায়ণগঞ্জের কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আমরা অনেক সন্ত্রাসীকে ধরেছি।
পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুুবুুর রহমান মাসুমের বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। তারা তাদের কাজ আজকে করতে পেরেছে। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় তারা তাদের অভিযান পরিচালনা করেছে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের শহরের মধ্যে একটি বড় জুয়ার আসর বসতো। বছর বছর চলে আসলেও সেখানে কেউ অভিযান দিতে সাহস পেতোনা। মনে করতো হয়তো পুলিশ সদস্যের সমস্যা হয়ে যাবে। আজকে কিন্তু এ বিষয়ে কেউ বিরোধীতা করেনি। বরং সাংবাদিকবৃন্দ তুলে ধরেছেন এবং সহযোগীতা করে সাহস জুগিয়েছেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, আজকে মাননীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানও কিন্তু এখন আমার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন যে মাদকের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তিনি জিহাদ ঘোষণা করেছেন। নারায়ণগঞ্জে তিনি আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন এবং তিনি আমাদের সঙ্গে করবেন বলে প্রতিশ্রতি দিয়েছেন। আমরা মনে করি নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি সংসদ সদস্য আমাদের যেমন সহযোগীতা করছেন তেমনি আমরা কোন কাজের জন্য যে স্যারের কাছে যাই আমরা সহযোগীতা পাই।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে মাদক থাকবে না। ভূমিদস্যূ থাকবে না। কোন ভূমিদস্যূদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ কুলষিত হবে না। কোন মানুষের গায়ে হাত ওঠবে না। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। এখন নারায়ণগঞ্জের মানুষের মাঝে গণসচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তাদের কোন সমস্যা হলে তারা আমাদের অফিসে এসে ভীর করে।
তিনি বলেন, আমরা নারায়ণগঞ্জে যতদিন থাকবে ডিআইজি স্যারের অধীনে আমরা প্রত্যেকটি জায়গায় হাত দিব। মাদক ব্যবসায়ীরা যে দলরই হোক না কেন, কোন ভূমিদস্যূ যে দলরই হোক না কেন যদি আওয়ামীলীগের নেতৃবন্দৃ আমাদের সাথে থাকেন, সাংবাদিকেরা যদি লেখনীর মাধ্যমে পাশে থাকেন তাহলে আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জ নিয়ে আপনারা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই নারায়ণগঞ্জই আপনারা পাবেন। যে নারায়ণগঞ্জ ভাষা আন্দোলনে ভুমিকা রেখেছিল, যে নারায়ণগঞ্জ মহান মুক্তিযুদ্ধে আদমজী থেকে জাতির জনক বন্ধুবন্ধুকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দিয়েছিলেন। সেই নারায়ণগঞ্জকে অবশ্যই আমরা মাদকের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে সুন্দর একটা পরিবেশ ফিরিয়ে আনবো।
আত্ম সমালোচনা করে পুলিশ সুপার বলেন, আজকে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয় দেই। কারো পকেটে মাদক ঢুকিয়ে তাকে আমরা হয়রানি করি। এই আড়াই হাজার পুলিশের মাঝে গুটিকয়েক ৫/৭টা পুলিশের কাজ। এই ৫/৭ পুলিশের জন্য গোটা পুলিশ বাহিনীর উপর কলঙ্ক নিতে পারব না। যে সকল পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তিনি কঠোর ভাষায় বলেন, নারায়ণগঞ্জের আইন শৃঙ্খলার দায়িত্ব আমাদের হাতে। এই আইন শৃঙ্খলার কাজটি শুধু আমরাই করব। কোন লোক এসে সেখানে কোন পেট্রোনাইজ করে নারায়ণগঞ্জে আমাদের পুলিশের মাঝে কোন বিভাজন সৃষ্টি করে পুলিশ বাহিনীকে কুলষিত করবে এই সুযোগটুকু আমরা দিব না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ও নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম, মনিরুল ইসলাম, ইমরান মেহেদী সিদ্দিকী সহ জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ও অন্যান্য থানা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ।
এর আগে বিকেল তিনটায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ হ্যাট্ট্রেক গোল সহ ৯টি গোল করে জেলা পুলিশ সুপারের দল। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব সাতটি গোল করেন।
পরে টূর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলায় ১-০ গোলে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের লাল দল ও অতিরিক্ত পুুলিশ সুপার (ডিএসবি) এর নীল দলকে পরাজিত করে। বাদ্য বাজনা বাঝিয়ে জমকালো আয়োজনে এই টূর্ণামেন্টের সমাপ্ত হয়। পরে সন্ধায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।