সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
১৮ ফেব্রুয়ারী বৃহস্প্রতিবার সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী আন্দোলনের পথিকৃত, বলিষ্ট কণ্ঠ, বাংলাদেশ নীট ম্যানুফ্যাক্চারাস এন্ড এক্সপোর্টারস এসোশিয়েসনের সহ-সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক, নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষা ও ক্রীড়ানুরাগী, সমাজসেবক সাব্বির আলম খন্দকারের ১৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী।
সাব্বির আলম খন্দকারের ১৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী স্বরণে ও শহীদ সাব্বিরের খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার এবং নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করার দাবীতে ও ১৮ ফেব্রুয়ারীকে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষণার দাবীতে সকাল সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে বিশাল শোক র্যালী বের হয়।
র্যালী পূর্ব সমাবেশে অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দাকার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিস্বাস, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা বিএনপির সদস্য মাসুকুল ইসলাম রাজীব, আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দীন সরকার, জেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন, মহানগর শ্রমিক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দাকার বলেন, ‘আমার ভাইকে কোন ব্যক্তিগত কারণে হত্যা করা হয়নি। শুধু মাত্র সমাজসেবায় মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ভাই আইনশৃঙ্খলার মিটিংয়ে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজীদের নাম উল্লেখ্য করে এবং তারা কে কত টাকা পায় এসব বলার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আজও আমার ভাইয়ের হত্যা বিচার পাইনি। শুধুমাত্র টাকার কাছে হেরে গেছি। হত্যাকারীরা টাকা দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ চার্জশীট করিয়েছে। তাই আজও বিচার পাইনি। খুনিরা আবারো ঢাকায় ফিরে আমাদের খুন করার হুমকি দিচ্ছে। তিনি ১৮ই ফেব্রুয়ারীকে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষণার দাবী করেন।
১৮ ফ্রেব্রুয়ারীকে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষণার দাবী করে বক্তারা বলেন, আজ যেই মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্বে সরকার সহ দেশবাসী কথা বলছে, সেই মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্বে শহীদ সাব্বির আলম খন্দকার নব্বইয়ের দশক থেকেই সোচ্চার ছিলেন। তিনি মাঠ পর্যায়ে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্বে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় মাদক ও সন্ত্রাসের গডফাদারদের চক্ষুসূলে পরিনত হন। সমাজের ও দেশের চিন্তা করেই একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েও অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েও তার হত্যার বিচার পাইনি তার পরিবার। বক্তারা সমাবেশ থেকে হত্যাকারীদের ফাঁসি ও নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করার এবং দাবি জানান ১৮ ফ্রেব্রুয়ারীকে সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী দিবস ঘোষণার দাবী করে বক্তারা।
সাব্বির আলম খন্দাকার গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর সাবেক সহ-সভাপতি ও ব্যবসায়ী নেতা ছিলেন। মৃত্যু তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসেরও সহ-সভাপতি ছিলেন।
সাব্বির আলম খন্দকারের ১৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার এবং নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করার দাবীতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শহীদ সাব্বির আলম খন্দকার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আয়োজিত উক্ত শোক র্যালীতে দল-মত, জাতি-র্ধম নির্বিশেষে কয়েক হাজার নারায়ণগঞ্জবাসী যোগ দেয়। শোক র্যালী নিয়ে মাসদাইর সিটি কবরাস্তানে গিয়ে শহীদের কবর জেয়ারত, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে সকালে ৯টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইরে সাব্বির আলম খন্দকারের স্মরণে ও খুনিদের গ্রেপ্তার এবং বিচার দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সর্বস্তরের সন্ত্রাস বিরোধী জনগণ ব্যানারে মানববন্ধন করে বিএনপির নেতারা। ওই মানববন্ধন থেকে হত্যাকারীদের ফাঁসি ও নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করার দাবি জানান বক্তারা।
উল্লেখ্য যে, ২০০২ সালের ২২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাস, চাঁদা ও মাদক মুক্ত করার জন্য নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাসে অনুষ্ঠিত জেলার ৩২টি ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে সেনাবাহিনীর মতবিনিময় সভায় শহীদ সাব্বির আলম খন্দকার “আমার জানাযায় অংশগ্রহণ করার আহবান জানিয়ে বক্তব্য শুরু করছি” বলে নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নাম, ঠিকানা ও তাদের গডফাদারদের নাম প্রকাশ করেন এবং সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্ঠা করেন। তখন শহীদ সাব্বিরের ব্যাপক তৎপরতায় ঝুট সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, চুন ফ্যাক্টরী ও নারায়ণগঞ্জবাসী নিস্তার লাভ করে।
চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা কোনঠাসা হয়ে পরলে তাদের গডফাদারদের ষড়যন্ত্রে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা প্রাতঃকালীন ভ্রমনকালে শহীদ সাব্বির আলম খন্দকারকে গুলি করে হত্যা করে। তৎসময়ে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা দায়ের থেকে শুরু করে তদন্ত সহ সকল ক্ষেত্রে অবৈধ হস্তক্ষেপ করে। ফলে দীর্ঘ ১৮ বছরেও একটি গ্রহণ যোগ্য চার্জশীট প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।