সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক পরিবার হাসনাত পরিবার। বর্তমান জেলা পর্যায়ের রাজনীতিতে জেলার প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে এই হাসনাত পরিবারের সদস্যদের সাথে। এই পরিবারের পেছনে থেকেই রাজনীতিতে উত্থান সোহাগ রনি। তবে এবার সোহাগ রনিতেই বিব্রত হাসনাত পরিবার, যখন সোহাগ রনির পেছনে আশীর্বাদ রয়েছে জেলার প্রভাবশালী রাজনীতিকদের।
কারন হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের লড়াইয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি। এই পরিবারে বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন হাসনাত পরিবারের অন্যতম সদস্য আরিফ মাসুদ বাবু। এখন হাসনাত পরিবারের এক সময়কার কর্মীর সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে হাসনাত পরিবারকে।
প্রভাবশালীদের আশীর্বাদ থাকায় হাসনাত পরিবারের জন্য সোহাগ রনিই হয়ে ওঠেছেন ফ্যাক্টর। মুলত রাজনৈতিক খেলায় হাসনাত পরিবারের সামনে সোহাগ রনি হয়ে ওঠেছেন অস্তিত্বের লড়াই। কারন সোহাগ রনিকেই ঠেকাতে মাঠে নামতে হবে তাদের। যে কারনে হাসনাত পরিবারের রাজনীতির ইজ্জতের লড়াই। নির্বাচন যত কাছে আসবে সোনারগাঁও উপজেলার দশটি ইউনিয়নের মধ্যে এই ইউনিয়ন নির্বাচনটিই হবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত। কারন সোহাগ রনি সবুজ সংকেত নিয়েই নির্বাচনী মাঠে।
স্থানীয়রাও আরো জানিয়েছেন, সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছিল। সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় সেই নির্বাচনের সম্ভাবনা এখনও জাগেনি। প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকরা নীরব হয়ে গেছেন। তবে সেই রেশ না কাটতেই নতুন করে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াতে যাচ্ছে উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে। কারন উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা ও স্থানীয় এমপির বসবাস এই ইউনিয়নেই। নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে যখন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামার পর।
গত আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী মাঠে নামেন সোহাগ রনি। এক সময় আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের সঙ্গে হাসনাত পরিবার বলয়ের রাজনীতি করেছেন সোহাগ রনি। বছর খানিক সময় ধরে সেই পরিবারের পক্ষে তিনি ছিলেন নীরব ভুমিকায়। যদিও কায়সার হাসনাত এমপি থাকাকালীন সময়ে যখন কায়সার-মোশারফের বিরোধ তুঙ্গে সেই সময় সোহাগ রনি ছিলেন মোশারফ হোসেন বলয়ে। ওই সময় জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম ছিলেন কায়সার হাসনাতের সঙ্গে।
তবে কায়সার হাসনাতের এমপি ও মোশারফ হোসেনের চেয়ারম্যান পদে চলে যাওয়ার পর সোনারগাঁয়ের রাজনীতির পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হোন সোহাগ রনি। সেই সুবাদে সোহাগ রনি নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবার ওসমান পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন। ধীরে ধীরে রাজনীতিতে সোহাগ রনির ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে। সব দিক থেকে শক্ত অবস্থান তৈরি হয় তার।
সোনারগাঁও পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে হাসনাত পরিবার ও স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সঙ্গে বিরোধ প্রকাশ্যে হয়ে ওঠলে কারো পক্ষেই অবস্থান নেননি সোহাগ রনি। উত্তপ্ত রাজনীতির সময় সোহাগ রনি ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমি কারো বিরুদ্ধে নই। সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই।’ ফলে জাপা এমপি খোকার সুদৃষ্টিতেও রয়েছেন সোহাগ রনি। যদিও জাতীয়পার্টি থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক পার্টির নেতা কাজী নাজমুল ইসলাম লিটু। তিনিও পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন।
সোহাগ রনির নির্বাচনের ঘোষণার পর হাসনাত পরিবারের বলয়ের নেতাদের মাঝে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কারন মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে বর্তমানে চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আরিফ মাসুদ বাবু। তিনি দ্বিতীয় দফায় এখানে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে এই পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন মোশারফ হোসেন।
অনেকেই জানিয়েছেন, বর্তমানে কায়সার হাসনাত, কালাম ও মোশারফ হোসেন আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ হলেও কায়সার ও মোশারফের মাঝে ভেতরগত সম্পর্ক গভীর নয়। অনেকেই কায়সার হাসনাতের বিকল্প হিসেবে এরফান হোসেন দীপকে রাজনীতিতে নামানো হয়েছে। যে লক্ষ্য নিয়ে পুরোদমে রাজনীতিতে সাবেক এমপি মোবারক হোসেনের ছেলে দীপ। দীপের সঙ্গে যারা রয়েছেন তাদের বেশির ভাগ নেতাকর্মীরা মোশারফ হোসেনের রাজনীতিতেও জড়িত। ফলে কায়সার হাসনাতের বিকল্প হিসেবে দীপকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। এসব কারনে সোনারগাঁয়ে হাসনাত পরিবারের বলয়ের রাজনীতি থেকে ইউটার্ণ দিচ্ছেন একেরপর এক নেতা।