সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে রাজনীতিতে বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার রাজনৈতিক কৌশলের কাছে ধরাশয়ী খেয়েছেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মত নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো এমপি খোকার রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে নানা আলোচনা চলছে সাধারণ মানুষের মাঝে।
এখানকার রাজনীতিতে এবার উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন কিংবা উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের। তবে এই দুজনের কেউ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এখানে বেশ রাজনীতিতে বেকায়দায় পড়বেন এমপি খোকা। সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে দুজনই পাকাপোক্ত। এদের কেউ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এমপি খোকা তাদের কারো উপরে চেপে বসতে পারবেন না।
সোনারগাঁয়ের সাধারণ মানুষ মনে করছেন, একজন এমপির কাজ হলো আইন প্রনয়ণ করা। সেক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের আওতায় থাকে যাবতীয় অবকাঠামোগত উন্নয়মুলক কাজগুলো। ফলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিয়ন্ত্রনে থাকবে বেশির ভাগ কাজ। মোশারফ হোসেন কিংবা কালাম এখানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এমপি খোকার খবরদারিত্ব থাকবে না। মোট কথা এখানে এমপির ক্ষমতা হ্রাস পাবে। আবার রাজনৈতিকভাবে এমপি খোকার চেয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী কালাম ও মোশারফ হোসেন। তারা দুজনই আওয়ামীলীগের দুটি বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রক। এদের দুজনের কেউ নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সোনারগাঁয়ে এমপি খোকার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাবে।
আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সূত্রে, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে আওয়ামীলীগের এমপি নির্বাচিত হন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর কায়সার তার আপন চাচার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কায়সার হাসনাতের সমর্থন পান কালাম এবং কায়সার হাসনাতের সমর্থন ছাড়াই চাচা মোশারফ হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পর সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রন নিয়ে চেয়ারম্যান গ্রুপ ও এমপি গ্রুপের নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এমনকি টেন্ডারবাজি নিয়েও সংঘর্ষ হয়। সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প যাদুঘরের একটি টেন্ডারবাজি নিয়ে জাতির জনকের প্রতিকৃতিও ভাংচুরের ঘটনা ঘটনায়। ওই সময় কায়সার হাসনাতের পাশে ছিলেন কালাম। মোশারফ হোসেনের কারনে অনেকটা কোণঠাসা থেকে কালামই তখন কায়সার হাসনাতকে টিকিয়ে রেখেছিলেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে মোশারফ হোসেন অথবা মাহফূজুর রহমান কালামের মধ্যে যে কোন একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এখানে এমপি খোকার রাজনীতিতে বেশ ঝুঁকিই সৃষ্টি হবে। যদিও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে এই দুজনই হেভিওয়েট প্রার্থী। যেখানে বেশ জোড়ালো সম্ভাবনা আবার মোশারফ হোসেনের। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন মোশারফ হোসেন। মহাজোট এ আসনটি ছেড়ে দিলে মোশারফ হোসেন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন খোকা।
গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভাতিজা কায়সার হাসনাতের পক্ষে জোড়ালো অবস্থান নিয়েছিলেন মোশারফ হোসেন। এমনকি বেশকটি সমাবেশে এমপি খোকাকে কঠোর ভাষায় বক্তব্য দিয়ে সোনারগাঁও ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুশিয়ারিও দিয়েছিলেন। ফলে মোশারফ হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মোশারফ হোসেন তার কথার বাস্তবায়ন হয়তো ঘটাতে যাবে। কারন তার সঙ্গে এখন কায়সার হাসনাতও রয়েছেন। সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন কালাম। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাংগঠনিক তার যোগাযোগ রয়েছে। গত নির্বাচনে তিনি মহাজোটের পক্ষেই ছিলেন।
কিন্তু বর্তমান এমপি খোকা রাজনীতি করেন নারায়ণগঞ্জের আরও দুজন প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান ও একেএম সেলিম ওসমানের বলয়ে। এক সময় কালাম ছিলেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন। কিন্তু বিশেষ কারনে তাদের মধ্যে কয়েক বছর ধরে সেই সম্পর্কে ফাটল ধরে যায়। এখন আর কালামকে শামীম ওসমানের পাশে দেখা যায়না। বেশকবার শামীম ওসমানের বিরোধী হিসেবে পরিচিত মেয়র আইভীর সঙ্গে কালামকে দেখাও গিয়েছিল। এখন আর কালাম শামীম ওসমানের কাছে ধর্ণা দেয়না। একইভাবে চুনকা পরিবারের সঙ্গে কয়েক যুগ ধরেই মোশারফ হোসেনের সম্পর্ক। তিনি সরাসরি শামীম ওসমানের বিরোধী এবং মেয়র আইভীর বলয়ে রাজনীতি করেন। ফলে উভয় সংকটে পড়েছেন এখন এমপি খোকা। যদিও কালামের সঙ্গে এমপি খোকার সম্পর্ক বর্তমানে শিথিল রয়েছে। যে কোন সময় দলীয়ভাবে মনোনয়ণ ঘোষণা করা হতে পারে। এখন দেখার বিষয় কার হাতে ওঠবে নৌকা এবং কি নাটক অপেক্ষা করছে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে।