সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
যদি কোন পুলিশ সদস্য মাদকে জড়িত থাকেন এবং প্রমানিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। প্রয়োজনে ওইসব পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করা হবে বলেও জানান তিনি। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সদস্যদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারী জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সদস্যদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারী জানাচ্ছি। আপনারা মানুষের জান মাল রক্ষা করার দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে কোন বেআইনী কাজে জড়াবেন না। কোন পুলিশ সদস্য যদি মাদকে জড়িত থাকে তাহলে তাকেও তাৎক্ষণিক নারায়ণগঞ্জ থেকে বিতারিত করা হবে। এ লক্ষ্যে পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করা হবে। পরীক্ষায় যদি তাদের মাদক সেবনের বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি পুলিশ সদস্যদের প্রতি আরও বলেন, ‘মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকলে বা পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে মানুষকে হয়রানী করার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেলেও ছাড় দেয়া হবেনা। ইতমধ্যে আমরা বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। বন্দরের ওসিকে ক্লোজ করা হয়েছে। আমাদের আড়াই হাজার পুলিশ সদস্যের মধ্যে দুএকটা খারাপ থাকতে পারে। তবে আমরা তাদেরকেও কোন প্রকার ছাড় দেবো না।’
কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শণপূর্বক আয়োজিত পুলিশ মেমোরিয়াল ডে উপলক্ষে আয়োজিত র্যালী শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
১ মার্চ শুক্রবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে থেকে র্যালিটি শুরু হয়ে চাষাঢ়া শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। র্যালী শুরু করার পূর্বে নিহত পুলিশ সদস্যদের প্রতি সম্মান জানিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতি স্তম্ভে ফুর দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জেলা পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে এসপি হারুন আরো বলেন, আগে ডিবির কিছু অপতৎপরতা ছিল। সিভিল টিমের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ ছিল। আমরা ডিবির কর্মকান্ড হ্রাস করেছি। আর থানাগুলোর সিভিল টিম বন্ধ করে দিয়েছি। পুলিশের দ্বারা যাতে কোন সাধারণ মানুষ হয়রানীর শিকার না হয় সে বিষয়ে আমরা বদ্ধ পরিকর।
এসপি হারুন অর রশিদ আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জের মূল সমস্যা হলো মাদক। আর মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে অনেক উচু স্তরের মানুষ জড়িত। তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। সুষ্পষ্ট প্রমাণ পেলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। মাদকের গডফাদারদের এখনো আমরা ধরতে পারিনি। তবে আমাদের অভিযান চলবে, পর্দার অন্তরালে থেকে কোন বড় ভাইয়ের পরিচয় দিয়েও পার পাবেনা। তাছাড়া ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যার ছত্রছায়ারই থাকুন না কেন, পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পাবেন না।
তিনি আরো বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন। সদরের এমপিও আমাকে ফোন করে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা আমাদের সঙ্গে আছেন। নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। সকলকে সাথে নিয়ে আমরা একটি সুন্দর বাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলবো। পরিশেষে মেমোরিয়াল ডে যাদের জন্যে পালিত হচ্ছে সেই নিহত পুলিশ সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি, আল্লাহ যেনো তাদের বেহেসত নসিব করেন।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) ইমরান মেহেদী সিদ্দিকী, র্যাব-১১ এর কমান্ডিং অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান, ডিআইও-১ মমিনুর রহমান, ডিআইও-২ সাজ্জাদ রুমন, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর শাহিন শাহ পারভেজ, ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের, টিআই-১ শরফুদ্দিন সহ নারায়ণগঞ্জ পুলিশের সদস্যগণ ও নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারের লোকজন।
এখানে উল্লেখ্যযে, এসপি হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর অপরাধীদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রায় ৬ লাখ মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে শহরের আলোচিত হকার উচ্ছেদ করেছেন। এছাড়াও প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রিত শহরের জুয়ার আসর থেকে ৪১ জনকে আটক করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর কবির হোসেন ও সাবেক কাউন্সিলর মহানগর শ্রমিকলীগের সেক্রেটারি কামরুল হাসান মুন্না গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জে ৫ জন নিখোঁজের ঘটনায় ৪ জনকে উদ্ধার ও মুল ঘটনা উৎঘাটন করেছেন।
এছাড়াও সোনারগাঁয়ে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে লাল মিয়া হত্যা মামলায় তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। বন্দরের খলিল গ্রুপ ও আমির গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের ঘটনায় মামলায় আসামীদের গ্রেপ্তার করেছেন। এর আগে তিনি নারায়ণগঞ্জে এসেই কয়েকশ মাদক বিক্রেতাদের গ্রেপ্তার করেছেন। বন্দরের তিন নারীকে পতিতাবৃত্তির অভিযোগ তুলে গাছে বেধে নির্যাতন করে চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ইউসুফ মেম্বারকে গ্রেপ্তার করেছেন। এছাড়াও বেশকিছু আলোচিত ঘটনায় অভিযান পরিচালনা করেছেন।