সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিল করতে গিয়ে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলায় জড়িয়েছেন। উভয় মামলায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাই আসামি হয়েছেন। পাল্টা মামলায় জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুকে আসামী করা হয়। আবার উভয় মামলার দুই বাদীও পাল্টা মামলায় আসামী হয়েছেন।
জানাগেছে, ৪ মার্চ সোমবার সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান কালাম বাহিনীর লোকজন নিজেদের অবস্থান জানানি দিতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে হামলার শিকার হন মোশারফ হোসেনের অনুগামী নেতাকর্মীরা। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী যারা উভয় গ্রুপের আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িত।
থানা সূত্রে জানাগেছে, সোমবার মনোনয়ন পত্র জমাকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কালাম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় পাল্টা পাল্টি দুটি মামলা দায়ের করেছে উভয় পক্ষের দুই নেতা। কালাম ও মোশারফ হোসেন দুজনেই ছাত্রলীগের উদীয়মান দুই ছাত্রলীগ নেতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যেখানে তাদের পাল্টাপাল্টি মামলায় বাদী করা হয়। মোশারফ হোসেনের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা এসকে সজীব বাদী হয়ে কালামের লোকজনদের আসামী করে মামলা করেন। অপর মামলাটি মোশারফ হোসেনের লোকজনদের আসামী করে কালামের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা নুবনুর রহমান সাবিক। সোমবার রাতে এ দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
কালাম সমর্থকে সাবিকের মামলায় রফিকুল ইসলাম নান্নু ছাড়াও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, মোস্তফা কামাল নিলু, কামাল হোসেন, সাইফুল ইসলাম বাবু, জামান, এসকে সজীব, রফিকুল হায়দার বাবু, মিন্টু ও মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে আসামী করা হয়। মোশারফ হোসেন সমর্থক এসকে সজীবের মামলায় মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম ছাড়াও রনি, আলমগীর, নাঈম, সাজু ও সাবিক।
মামলায় বিষয়ে সোনারগাঁ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ হেলাল উদ্দীন জানান, সোমবার মনোনয়ন জমাকে কেন্দ্র করে মোশারফ হোসেনের সমর্থক ও মাহফুজুর রহমান কালামের সমর্থকদের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাহফুজুর রহমান কালামের সমর্থক নুবনুর রহমান সাবিক বাদী হয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুকে প্রধান আসামী করে ১০ জনকে এজাহার নামীয় সহ আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনকে অজ্ঞানামা আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন।
এছাড়াও অপর মামলাটি করেন মোশারফ হোসেনের সমর্থক ও মোগরাপড়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এসকে সজীব। এ মামলায় প্রধান আসামী করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুমকে। মাসুম বিদ্রোহী প্রার্থী কালামের ছোট ভাই। মামলায় এছাড়াও ৪০ থেকে ৪৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়।
অন্যদিকে জাানগেছে, নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে বর্তমানে এমপি হিসেবে রয়েছেন মহাজোটের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। মোশারফ হোসেন হলেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কায়সার হাসনাত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে পুলিশ তার বাড়িতে হামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের মারধর করলে কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের নির্বাচনী বেশকটি সভায় এমপি খোকার বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য রেখেছিলেন। এমনকি বলেছিলেন, এমপি খোকা আপনি হাওয়ার মাঝে ২০১৪ সালে বিনা ভোটে এমপি হয়েছিলেন। সোনারগাঁয়ে আপনার কোন ভোট নাই। আপনি বাড়িতে গিয়ে ঘুমান।’ গত ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন পান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে সোনারগাঁও আসনটি আওয়ামীলীগ জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দিলে এখানে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। গত নির্বাচনেও কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে গেলে এখানে এমপি নির্বাচিত হন খোকা। এ নির্বাচনে খোকার পক্ষে কাজ করেছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। কালাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি পাননি। এর আগে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুইবার নির্বাচনে করে তিনি পরাজিত হয়েছেন।