সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বেশ বিপাকে রয়েছেন মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। মনোনয়ন দাখিলের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও নিজ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় নামতে পারছেন না এই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। তিন দিন ধরে হেলো সরকারকে নারায়ণগঞ্জ শহরেই একা একা ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। যদিও ৪ মার্চ সোমবার গুটিকয়েকজন নেতাকর্মীদের নারায়ণগঞ্জ জেলায় জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে তার মনোনয়ন দাখিল করেন। ওইদিন তিনি তার নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে মনোনযন পত্রটিও দাখিল করার সাহস পাননি। ৬ মার্চ বুধবার প্রার্থীতা যাচাই বাছাইয়ের দিন তাকে এবার দেখা গেল তিনি একাই আসছেন। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা চলে গেছে বিদ্রোহী প্রার্থী শাহজালাল মিয়ার পক্ষে। যার পক্ষে স্থানীয় এমপির সমর্থন রয়েছে বলেও জানান নেতাকর্মীরা।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬ প্রার্থীর মধ্যে তিন জনের মনোনয়ন বাতিল করেছেন আড়াইহাজারের রিটার্নিং অফিসার ও নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সেলিম রেজা। ৬ মার্চ বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাই বাছাই অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে একক প্রার্থী হিসেবে নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ঝর্না রহমানের প্রার্থীতাও বাতিল করে রিটানির্ং অফিসার।
এই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার, উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজালাল মিয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন মোল্লার প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। বাতিল করা হয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আজাদ খান সোহাগ, গোলাম মোহাম্মদ ও আবুল হাসেমের মনোনয়ন পত্র। ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী রফিকুল ইসলামের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গত ৪ মার্চ সোমবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ থেকে মনোনয়ন দাখিল করেছেন মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। বিকেলে একই সময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজাহাল মিয়া। তবে আড়াইহাজার নির্বাচন কমিশন বরাবর মনোনয়ন পত্র শাহজালাল মিয়া দাখিল করলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছেন হেলো সরকার। আড়াইহাজারে আওয়ামীলীগের নেতাকমীদের নিয়ে শোডাউন করে শাহজালাল মিয়া মনোনয়ন দাখিল করলেও নারাণগঞ্জে এসে গুটিকয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে মনোনয়ন দাখিল করেন হেলো সরকার। এসময় আওয়ামীলীগের শীর্ষ কোন নেতা তার সঙ্গে ছিলেন না।
নারায়ণগঞ্জে এসে মনোনয়ন দাখিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ওইদিন মুজাহিদুর রহমান হলো সরকার বলেছিলেন, আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। আমি কাউরে ডরাইনা। তিনি বলেন, নৌকার মালিক শেখ হাসিনা। আওয়ামীলীগের নেত্রী শেখ হাসিনা। উনি আমাকে আড়াইহাজারের মানুষের সেবা করার লক্ষ্যে আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। আমি মনে করি আড়াইহাজার আওয়ামীলীগের দূর্গ সেখানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নেতাকর্মীরা আনন্দিত।
আড়াইহাজারের নেতাকর্মীরা আপনার সঙ্গে রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি আড়াইহাজারে নৌকার পক্ষে আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগ যারা করেন তারা সবাই নৌকার পক্ষে তাদের থাকতে হবে। যারা শেখ হাসিনার আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিশ^াস করেনা তারা নৌকার বাহিরে যেতে পারেনা।
আড়াইহাজার আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি আপনার সঙ্গে মনোনয়ন দাখিলে আসেননি এর কারন কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। আড়াইহাজারের এমপির সঙ্গে আমি আলাপ আলোচনা করেছি। কাগজপত্র নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি তারা দাবিদার আমি মনে করি তারা আমাকে অভিনন্দন জানানো উচিত ছিল। সেক্রেটারিকে আমি ফোন করেছি তিনি বলেছেন তিনি আমার সঙ্গে আছেন।
আড়াইহাজার রেখে আপনি নারায়ণগঞ্জে এসে মনোনয়ন দাখিল করলেন কেন আপনি কি কোন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানতে চাইলে হেলো সরকার বলেন, আমি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে লড়াই করেছি। এরশাদের সঙ্গে লড়াই করেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ঢাকার রাজপথে প্রথম আমি মিছিল করেছি। আমি আবার কাকে ভয় পাবো? আমি কাউরে ডরাইনা। কাউরে ভয় পাই নাই। আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক।
জানাগেছে, মুলত শাহজালাল মিয়া স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠজন এবং মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার হলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজের অনুগামী হিসেবে রাজনীতি করছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেলো সরকার এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে গিয়ে ইকবাল পারভেজের পক্ষে কাজ করেছিলেন। নৌকা প্রতীকে পেলেও মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি আবদুর রশিদ ভূইয়া সহ শীর্ষ নেতাদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না।
আরও জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। তিনি এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে গিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজের জন্য মনোনয়ন চেয়ে কাজ করেছিলেন। শুধু তাই নয় নজরুল ইসলাম বাবুর বিরোধী সরাসরি বক্তব্যও রেখেছিলেন হেলো সরকার।
এবারের নির্বাচনে নজরুল ইসলাম বাবু চেয়েছিলেন বর্তমান পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজাহাল মিয়াকে। কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল হেলো সরকারের পক্ষে সুপারিশ করে কেন্দ্রে নাম পাঠায়। ফলে এখানে মনোনয়ন ইকবাল পারভেজের ঘনিষ্টজন পান হেলো সরকার। তার মনোনয়ন ভাগিয়ে আনতে কাজ করেছিলেন ইকবাল পারভেজ।