সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
এইতো ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়নি মহাজোট। মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়ন পান লিয়াকত হোসেন খোকা। ওই নির্বাচনে মাহফুজুর রহমান কালাম কাজ করেছিলেন মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষেই। শুধু তাই নয় তিনি একটি সমাবেশে বলেছিলেন, যেখানে নৌকা নেই, আছে লাঙ্গল, সেখানে লাঙ্গলই নৌকা। অর্থাৎ তিনি লাঙ্গলকেই নৌকা প্রার্থী দাবিও করেছিলেন। এও দাবি করেছিলেন আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশের বাহিরে তিনি যাবেন না। তিনি মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবেন। তাও করেওছিলেন। যিনি লাঙ্গলের ঝোয়ালকে বৈঠা ভেবে মহাজোটের পক্ষে কাজ করেছিলেন এখন সেই কালামই নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে নৌকা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।
জানাগেছে, গত শুক্রবার রাতে তিনটি উপজেলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ঘোষণা করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার মধ্যে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পান মোশারফ হোসেন। গত ৪ মার্চ মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেনের লোকজন। সোনারগাঁও উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনেই হামলার শিকার হন। এতে অন্তত ২০ জনের মত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ওই দিন রাতেই পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে সোনারগাঁও থানায়।
থানা সূত্রে জানাগেছে, সোমবার মনোনয়ন পত্র জমাকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কালাম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় পাল্টা পাল্টি দুটি মামলা দায়ের করেছে উভয় পক্ষের দুই নেতা। কালাম ও মোশারফ হোসেন দুজনেই ছাত্রলীগের উদীয়মান দুই ছাত্রলীগ নেতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যেখানে তাদের পাল্টাপাল্টি মামলায় বাদী করা হয়। মোশারফ হোসেনের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা এসকে সজীব বাদী হয়ে কালামের লোকজনদের আসামী করে মামলা করেন। অপর মামলাটি মোশারফ হোসেনের লোকজনদের আসামী করে কালামের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতা নুবনুর রহমান সাবিক। সোমবার রাতে এ দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
আরও জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে বর্তমানে এমপি হিসেবে রয়েছেন মহাজোটের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। মোশারফ হোসেন হলেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কায়সার হাসনাত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে নির্বাচনে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র একদিন আগে পুলিশ তার বাড়িতে হামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের মারধর করলে কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের নির্বাচনী বেশকটি সভায় এমপি খোকার বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য রেখেছিলেন। এমনকি বলেছিলেন, এমপি খোকা আপনি হাওয়ার মাঝে ২০১৪ সালে বিনা ভোটে এমপি হয়েছিলেন। সোনারগাঁয়ে আপনার কোন ভোট নাই। আপনি বাড়িতে গিয়ে ঘুমান।’ গত ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন পান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে সোনারগাঁও আসনটি আওয়ামীলীগ জাতীয়পার্টিকে ছেড়ে দিলে এখানে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। গত নির্বাচনেও কায়সার হাসনাত নির্বাচন থেকে সরে গেলে এখানে এমপি নির্বাচিত হন খোকা। এ নির্বাচনে খোকার পক্ষে কাজ করেছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। কালাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি পাননি। এর আগে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুইবার নির্বাচনে করে তিনি পরাজিত হয়েছেন।