সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক এক নারীসহ (তার দাবিমতে দ্বিতীয় স্ত্রী) অবরুদ্ধ হওয়ার পর ভাংচুর-হামলা ও চুরির অভিযোগে আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
১০ এপ্রিল শনিবার রাতে এ মামলাটি দায়ের করেন সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর শাশুড়ি জোহরা বেগম।
তিনি তার বাড়িতে হেফাজত নেতাকর্মীদের হামলা, ভাংচুর ও স্বর্ণালংকার চুরির অভিযোগ তুলে মামলাটি দায়ের করেন। পরে শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের সকলকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোনারগাঁও থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বিষয়টি স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে নিশ্চিত করেছেন।
এ মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মুফতি লোকমান হোসেইন, মো. মিন্টু, নবীর হোসেন, কবির হোসেন, মাওলানা হাবিবুর রহমান, আমজাদ হোসেন, যোবায়ের আহম্মেদ, মো. সোহাগ, শহীদুল ইসলাম ও মো. হাসান মিয়া। তবে এর আগে আরো ৬টি মামলা দায়ের করা হয়।
ঘটনা সূত্রে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতির বাড়িঘর, কার্যালয়, ব্যবসা প্র্রতিষ্ঠানে তান্ডবলীলা চালিয়েছে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে হামলা ভাংচুরের তান্ডব সহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ ভাংচুরের তান্ডবের ঘটনাও ছিল। এ ছাড়াও স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লাঞ্ছিত করেছে হেফাজত কর্মীরা। এসব ঘটনায় পৃথক ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার মধ্যে দুটি পুুলিশ বাদী ও বাকি ৫টি মামলার বাদী পাবলিক।
উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বাদী হয়ে তার বাড়ি ও ব্যবসা প্র্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে হেফাজত নেতাকর্মীদের চেয়ে বেশির ভাগ আসামি বিএনপি ও জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা। একইভাবে উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাসির উদ্দীন আহাম্মেদ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। সবশেষ রফিকুল ইসলাম নান্নুর শ্বাশুড়ি মামলাটি দায়ের করলেন।
জানাগেল- গত ৩ এপ্রিল শনিবার সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে আসেন কেন্দ্রীয় হেফাজত ইসলামের যুগ্ম মহাসচিন মাওলানা মামুনুল হক। ওই সময় তার সঙ্গে এক নারী ছিলেন যাকে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেছিলেন। ওইদিন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি সহ স্থানীয়রা মামুনুল হককে নারী সহ আটক করেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ও সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাটি সংবাদকর্মীরা ভিডিও ধারণ করেন। ওই খবরটি প্রচারিত হলে হেফাজতের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে রয়েল রিসোর্টে হামলা ভাংচুর চালিয়ে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেয়। এরি মাঝে নান্নু ও সোহাগ রনির বাড়িঘর, ব্যবসা প্র্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে অগ্নিসংযোগ ভাংচুর ও উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় ভাংচুর চালায়। পরবর্তীতে ৫ এপ্র্রিল স্থানীয় সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের বাড়িতেও হামলা ভাংচুর চালায়।
৯ এপ্রিল সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু বাদী হয়ে ১২৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে হেফাজত নেতা মাওলানা ইকবাল হোসেনকে।
উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নাসির উদ্দীন বাদী হয়ে ১১১জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা মামুনুল হককে প্রধান আসামি করা হয়।
একইভাবে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনির বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুরের ঘটনায় সোহাগ রনির পিতা সাবেক মেম্বার শাহ জামাল তোতা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৭ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০০/৩০০জনকে আসামি করা হয়।
স্থানীয় সাংবাদিক হাবিবুর রহমানের বাড়িঘর ভাংচুুর হামলার ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। তিনি মোজ্জামেল হক আরিফকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৮০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
তবে এর আগে ঘটনার একটি দিন সোনারগাঁও থানা পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এসআই ইয়াউর রহমান বাদী হয়ে মাওলানা মামুনুল হককে প্রধান আসামি করে এবং ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০/৩০০জনকে আসামি করা মামলা দায়ের করেন। মুলত রয়েল রিসোর্টের ঘটনায় তিনি এই মামলাটি দায়ের করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তান্ডবের ঘটনায় এসআই আরিফ হাওলাদার বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মাওলানা ইকবাল হোসেনকে প্রধান আসামি করে এবং ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়।