সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, আমাদের আরও লোক মারা যাবে। এ কারনেই মারা যাবে, কারন আমরা প্রতিটি মুহুর্ত টেনশনে থাকি। দরজায় কেউ নক করলে বুক কেঁপে ওঠে এই বুঝি পুলিশ ধরতে আসলো। ঘরে ঘরে এখন আতংক কখন জানি পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। একটা সময় ঘটনা ঘটিয়ে মামলা দেয়া হতো। এখন ঘটনা ঘটাতে হয়না। এখন গায়েবী মামলা দেয়।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে চাষাড়া বোমা হামলায় ২২ জন মানুষ মারা গেল। সেই হত্যা মামলায় আমাকে প্রধান আসামী করা হয়। তখন ঘটনা ঘটছে আমরা করিনি। যা ১৪ বছর পর আমরা খালাস পাই। চাষাড়া খাজা সুপার মার্কেটে দোকান ভাংচুর কওে, টেলিভিশন ভেঙ্গে আমাদের নামে মামলা দেয়া হয়। আওয়ামীলীগের অফিসের নৌকা পুড়াইয়া মামলা দেয়া হয়েছে। কেবল সাজিয়ে মামলা দেয়া হতো। এখন তো আর ঘটনা ঘটানো লাগেনা। সরকারি দলের নেতারা কল্পনা করে কাকে কাকে আসামী করবে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এমপিরা নেতারা বিএনপি নেতাদের লিস্ট ওসির কাছে দিবে সেটাই মামলা হবে। এমপি দেয় লিস্ট আর ওসি করে গায়েবী মামলা।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে এপিলেট ডিভিশনের এই আইনজীবী আরও বলেন, এখন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবেরাও বলে এ মামলায় জামিন দেয়া যাবে না। ম্যাজিস্ট্রেটও মনে হয় সরকারি দলের ক্যাডারের চেয়েও বড় ক্যাডার। তারা জানে মামলাগুলো গায়েবী মামলা কিন্তু জেনে শুনেই রিমান্ডে দেয়। সে একটা দাড়িপাল্লা খুচিতো চেয়ার বসে গায়েবী মামলায় নেতাকর্মীদের রিমান্ডে দেয়। তার বুক কাঁপেনা। তারপর জেলা জজও জামিন দিবেনা। তার চাকুরী রক্ষা করা দরকার। তার হাইকোর্টেও জজ হবে, তাকে বড় প্রমোশন পেতে হবে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপিকে এগুতে হচ্ছে।
৭ মার্চ বৃহস্পতিবার সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রয়াত জেলা শ্রমিকদলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম ও প্রয়াত সিদ্ধিরগঞ্জ মৎস্যজীবী দলের সভাপতি ইব্রাহীম সর্দারের স্মরণে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।
এর আগে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে। আমরা বাহিরে থেকেও জেলে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপিতে আসেনি। ভবিষৎেও আসবে। আর আসলে কথা বলার মানুষ থাকবে না। পার্থক্য এখন এটাই আগে মামলা দিতো আওয়ামীলীগ নেতারা। এখন আওয়ামীলীগ নেতারা সেফ সাইটে আছে তারা মামলা দেয়না। এখন মামলা দেয় পুলিশ। বেতন খায় রাষ্ট্রের কিন্তু দায়িত্ব পালন করে সরকারি দলের। পুলিশ আওয়ামীলীগের সরকারি দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এই দায়িত্ব গ্রহণ করায় প্রত্যেকটি এ্যাকশনের একটি রি-এ্যাকশন থাকে।
তিনি বলেন, আজকে এসবের কারনেই ওসি ক্লোজ হয় ইয়াবা রাখার কারনে। হাইকোর্ট অর্ডার দিছে ওসির বিরুদ্ধে এ্যাকশন দেয়ার জন্য। ক্রসফায়ার করছে রূপগঞ্জে, সেই নিহতের গাড়ি আত্মাসাত করায় ওসি ক্লোজ হয়েছে। এত বড় সাহস পুুলিশ পায় কোথা থেকে? পুলিশ এ জায়গা থেকেই সাহস পায় যে,পুুলিশ মনে করে এই সরকার আমরা বানাইছি। আগের দিন ভোট আমি দিছি, সীল তো আমি মারছি। আমি যে সরকার বানাইছি সেই সরকারের আমলে যা খুশি তাই করব। এমনটাই করছে পুুলিশ।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে একটি প্রশ্ন ওঠছিল পত্রপত্রিকায়- কে বড় জনপ্রতিনিধি নাকি আমলা বড়? প্রশ্ন ওঠলো নারায়ণগঞ্জে দুইজন সরকারি দলের কাউন্সিলরকে হ্যান্ডক্যাপ লাগিয়ে পিছমোড়া করে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও। কিন্তু বিএনপির কাউন্সিলদের যখন পিছমোড়া করে বেঁধে ধরে নিয়ে যায় তখন তো প্রশ্ন ওঠে না।
সরকারি দলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যাদেরকে আপনারা পর্দা দিতেছেন একদিন তারাই আপনাদের গিলে খাবে। আমরা আজকে নির্যাতিত মজলুম অবস্থায়। আমরা বিশ^াস করি আল্লাহ আমাদের পাশে আছেন। আমাদের উপর যত জুলুম হবে আমাদের পাপ তত খন্ডিত হবে। যারা জুুলুম করছে তাদের পাপের সীমা বৃদ্ধি পাবে। সীমা লংঘনকারী কোনদিনই কোন অবস্থাতেই মুক্তি পায়নি। এটা ইতিহাসের স্বাক্ষী।
তৈমূর আলম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সংবিধান। সেই সংবিধানে আমাদের যেই অধিকারগুলো সংরক্ষিত করলো সেই অধিকার আজকে পুলিশের বুটের তলায় নিমজ্জিত হয়ে গেল। এর জবাব একদিন কাউকে না কাউকে দিতে হবে।
এর আগে বক্তব্য রাখা মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের বক্তব্যের বিষয়ে তৈমূর বলেন, কামাল সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সমর্থনও করি আবার দ্বিমত পোষণও করি। নেতৃত্বের দায়িত্ব অনেক। ব্যর্থতা যা আসবে নেতৃত্বের কারনে আসবে। কর্মীর কারনে কোন ব্যর্থতা নাই। নেতাদের জবাবদিহি করতে হবে।
এর আগে তিনি প্রয়াত নজরুল ইসলাম ও ইব্রাহীমকে স্মরণ করে তাদের দুজনের ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন তৈমূর আলম খন্দকার।
পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়না। আদালতে যেয়ে হাইকোর্টের অর্ডার নিয়ে মেডিকেল বোর্ড করে পাঠানো হয় সেটাও পাঠাতে বিলম্ব হয়। এবং সেটার যে রিপোর্ট সেটাও কার্যকর করতে বিলম্ব হয়। আমরা বলেছি চিকিৎসার খরচ আমরা বহন করবো তবুও বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করানো হোক। অথচ ইয়াবা ব্যবসায়ীকেও বারডেম হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা হয় কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হয়না। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১/১১ এর সময় চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। এ রকম অনেক উদাহরণ আছে জেলখানায় আবদ্ধ তাদের চিকিৎসা করানো হয়েছিল। এত দৃষ্ঠান্ত থাকার পরেও বেগম খালেদা জিয়ার ৭৩ বছর পরেও এত জটিল রোগে আক্রান্ত তার চিকিৎসা করানো হচ্ছেনা।
এর আগে তিনি বলেন, ৯টা বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। গত ১২ বছর ধরে আমরা সরকারের বাহিরে এবং একটা নিষ্ঠুর অত্যাচারী সরকারের অধীনে আমরা। এই সরকার তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, দুই বারের বিরোধী দলীয় নেতা, এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষ বেগম খালেদা জিয়া যিনি জীবনে কোন নির্বাচনে হারেননি। ৫টা জাতীয় নির্বাচনে ২৩টা আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করা সম্ভব ছিল, উনি ২৩টা আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে বিজয়ী হয়েছেন। এই রেকর্ড বাংলাদেশে কারো নাই। মহান স্বাধীনতার ঘোষক এবং এই দেশের নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী তাকে আজ কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে গত এক বছর ধরে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি ও স্মরণ সভা কমিটির আহ্বায়ক এটিএম কামালের সভাপতিত্বে এ স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাবেক এমপি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাসিম, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিম চৌধুরী প্রমুখ।
আরও বক্তব্য রাখেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খান, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম, বিএনপি নেতা সুলতান মাহামুদ, আইনজীবী ফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ খান ভাষানী ভুইয়া, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি কাউন্সিলর মাকসুুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, জেলা ওলামা দলের সভাপতি মুন্সী সামসুুর রহমান খান বেনু, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক নুরুন্নাহার বেগম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রহিমা শরীফ মায়া, মহানগর শ্রমিকদলের আহ্বায়ক এসএম আসলাম, সদস্য সচিব আলী আজগর, মহানগর শ্রমিকদল নেতা ফারুক হোসেন, নাজির হোসেন, মনির মল্লিক, ঢাকা মহানগর মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খান ইমন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক গিয়াসউদ্দীন প্রধান, সোনারগাঁও মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সালমা আক্তার কাজল, আড়াইহাজার মহিলা দলের সভাপতি পারভীন আক্তার প্রমুখ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মাকিদ মোস্তাকিম শিপলু। স্মরণ সভায় আলোচনা শেষে প্রয়াত দুই নেতার রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দেয়া মাহফিল করা হয়। স্মরণ সভায় প্রয়াত ইব্রাহীম সর্দারের ছেলে শাকিল ও প্রয়াত নজরুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।