সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে সারাদেশে লকডাউন শুরু হয়। সেই থেকে কয়েক মাস লকাউনে দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলো এবং অসহায় দুস্থ মানুষগুলো খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত কাটাচ্ছিলেন। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এগিয়ে আসেন অসহায় মানুষের পাশে। দিনের পর দিন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন নেতারা। কিন্তু দেখা যায়নি এক সময় যারা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন আসনে এমপি ছিলেন এমন বেশ কজন সাবেক এমপিকে। কেউ কেউ একমুঠো চাল বিতরণও করেননি।
অনেকে এমপি মন্ত্রী হয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে এখন আরামে আয়েশে দিন যাবত করছেন তারা। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ধাপে যখন সামনে ঈদ একই সঙ্গে লকডাউন এমন পরিস্থিতিতেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালেন না তারা। অথচ জাতীয় নির্বাচন আসলেই এমপি হওয়ার জন্য দৌড়যাপ শুরু করেন। জনগণের নামে ভোট আদায়ে মাঠে নামলেও এবার মহামারিতে জনগণের মাঝে দেখা গেল না।
নারায়ণগঞ্জের এক সময় দাপটশালী বিএনপি নেতা ছিলেন রেজাউল করিম। নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসন থেকে একাধিকবার হয়েছিলেন এমপি। হয়েছিলেন বিএনপি আমলের সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্র্রতিমন্ত্রীও। ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি। তার পিতা ছিলেন একজন দর্জি শ্র্রমিক। সেই থেকে এখন অঢেল সম্পদের মালিক। কিন্তু করোনা মহামারির এক বছর পেরিয়ে গেলেও অসহায় মানুষের মাঝে একমুঠো চাল বিতরণ করতেও দেখা গেল না রেজাউল করিমকে। অথচ তার বর্তমানে হাজার বিঘা সম্পত্তি রয়েছে বলেও কথিত রয়েছে। নির্বাচন আসলেই তাকে ভোটের লড়াইয়ে নামতে দেখা যায়। কিন্তু এমন কঠোর পরিস্থিতিতে এই রেজাউল করিম এক মুঠো চালও অসহায় মানুষের হাতে তুলে দিলেন না বিষয়টি নিয়ে সোনারগাঁয়ের মানুষ হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন পূর্ব আওয়ামীলীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান করেই বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন থেকে এমপি নির্বাহিত হয়েছিলেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। ১/১১ এর সময় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন এই বিএনপির নেতা। কিন্তু করোনা মহামারিতে তিনিও জনগণের মাঝে একমুঠো চাল নিয়ে দাঁড়িয়েছেন তা দেখা গেল না। যদিও তিনি করোনার শুরুর দিকে তিনি ফেসবুকে লাইভে এসে নীতিবাক্য শুনিয়েছিলেন যে, সকলকে গোপনে দান খয়রাত করা উচিত। কিন্তু তিনি গোপনে কতটুকু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সেটাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন এমন কোন অসহায় পরিবারকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসনের বিএনপির সাবেক এমপি এম আতাউর রহমান আঙ্গুর। তিনি ছিলেন একজন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। সেখান থেকে তাকে বিএনপিতে যোগদান করেন প্রয়াত বিএনপি নেতা বদরুজ্জামান খান খসরু। ভাগ্যগুণে ১৯৯১ সালে দলের মনোনয়ন পেয়ে যান এমপি। একাধিকবার বিএনপির এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আঙ্গুর। কিন্তু তাকেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে জোড়ালো ভুমিকা দেখা গেল না। গত বছর এমন সমালোচনার পর হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারের মাঝে আঙ্গুরের পক্ষে তার লোকজনকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এরপর আর জনগণের পাশে দাঁড়াতে আঙ্গুরকে দেখা যায়নি।
নারায়ণগঞ্জে বড় কোনো নির্বাচন আসলেই আলোচনায় আসেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি এসএম আকরাম। নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের এমপি ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় সমর্থন চেয়েও না পেয়ে নির্বাচনের পর জেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন এসএম আকরাম। এর কয়েক বছর পর তিনি নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা হোন। গত জাতীয় নির্বাচনে নাগরিক ঐক্যের নেতা হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন এসএম আকরাম। কিন্তু সেই নির্বাচনের পর নারায়ণগঞ্জের মানুুষের পাশে তাকে দেখা গেল না। এমনকি মহামারি করোনা ভাইরাসে একটি অসহায় পবিরারে হাতেও একমুুঠো চাল বিতরণ করতেও দেখা গেল না।