সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে ওয়াকওভার দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কারন গত ৪ মার্চ আড়াইহাজারে গিয়ে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে পারেননি। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে এসে মনোনয়ন দাখিল করলেও দাখিলের পর আড়াইহাজারে যেতেই পারেননি নৌকার প্রার্থী মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। ৮ মার্চ শুক্রবার রাতে স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবু ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজালাল মিয়ার সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে শাহজালাল মিয়ার সঙ্গে হেলো সরকারকে হাস্যোজ্জলও দেখা যায়।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। তবে ভোটের আগেই তিনি এলাকা ছাড়া। নির্বাচনে তিনি তার মনোনয়ন পত্র আড়াইহাজারের নির্বাচন কমিশন বরাবর দাখিল করতে পারেননি। সংঘর্ষের আশংকায় তিনি তার মনোনয়ন পত্র নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বরাবর দাখিল করেছেন।
৪ মার্চ মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে এসে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দাখিল করেছেন মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। এ সময় তার সঙ্গে মাত্র গুটিয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তবে একই সময়ে আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজালাল মিয়া মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। মুলত শাহজালাল মিয়া স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠজন এবং মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার হলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজের অনুগামী হিসেবে রাজনীতি করছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেলো সরকার এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে গিয়ে ইকবাল পারভেজের পক্ষে কাজ করেছিলেন। নৌকা প্রতীকে পেলেও মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি আবদুর রশিদ ভূইয়া সহ শীর্ষ নেতাদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না।
ওইদিন নারায়ণগঞ্জে এসে মনোনয়ন দাখিলের বিষয়ে বলতে গিয়ে মুজাহিদুর রহমান হলো সরকার বলেছিলেন, আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। আমি কাউরে ডরাইনা। তিনি বলেন, নৌকার মালিক শেখ হাসিনা। আওয়ামীলীগের নেত্রী শেখ হাসিনা। উনি আমাকে আড়াইহাজারের মানুষের সেবা করার লক্ষ্যে আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। আমি মনে করি আড়াইহাজার আওয়ামীলীগের দূর্গ সেখানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নেতাকর্মীরা আনন্দিত।
আড়াইহাজারের নেতাকর্মীরা আপনার সঙ্গে রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি আড়াইহাজারে নৌকার পক্ষে আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগ যারা করেন তারা সবাই নৌকার পক্ষে তাদের থাকতে হবে। যারা শেখ হাসিনার আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিশ^াস করেনা তারা নৌকার বাহিরে যেতে পারেনা।
আড়াইহাজার আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি আপনার সঙ্গে মনোনয়ন দাখিলে আসেননি এর কারন কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। আড়াইহাজারের এমপির সঙ্গে আমি আলাপ আলোচনা করেছি। কাগজপত্র নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি তারা দাবিদার আমি মনে করি তারা আমাকে অভিনন্দন জানানো উচিত ছিল। সেক্রেটারিকে আমি ফোন করেছি তিনি বলেছেন তিনি আমার সঙ্গে আছেন।
আড়াইহাজার রেখে আপনি নারায়ণগঞ্জে এসে মনোনয়ন দাখিল করলেন কেন আপনি কি কোন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানতে চাইলে হেলো সরকার বলেন, আমি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে লড়াই করেছি। এরশাদের সঙ্গে লড়াই করেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ঢাকার রাজপথে প্রথম আমি মিছিল করেছি। আমি আবার কাকে ভয় পাবো? আমি কাউরে ডরাইনা। কাউরে ভয় পাই নাই। আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক।
এদিকে আরও জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া হেলো সরকার নারায়ণগগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য। তিনি এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে গিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজের জন্য মনোনয়ন চেয়ে কাজ করেছিলেন। শুধু তাই নয় নজরুল ইসলাম বাবুর বিরোধী সরাসরি বক্তব্যও রেখেছিলেন হেলো সরকার।
এবারের নির্বাচনে নজরুল ইসলাম বাবু চেয়েছিলেন বর্তমান পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজাহাল মিয়াকে। কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল হেলো সরকারের পক্ষে সুপারিশ করে কেন্দ্রে নাম পাঠায়। ফলে এখানে মনোনয়ন ইকবাল পারভেজের ঘনিষ্টজন পান হেলো সরকার। তার মনোনয়ন ভাগিয়ে আনতে কাজ করেছিলেন ইকবাল পারভেজ।