এক মহিলা ঠেকাতে রাজপথে বিএনপি!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করেছেন সাঈদা আক্তার শিউলি নামের একজন মহিলা।  আর ওই মহিলাকে ঠেকাতেই এবার রাজপথে নেমেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।  অতীতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির আন্দোলনে যাদেরকে দেখা যায়নি এমন সব বিএনপির নেতাকর্মীরাও এবার খোরশেদের বিরুদ্ধে দাযেরকৃত মামলা প্রত্যাহার দাবিতে রাজপথে নেমেছেন।

বলা যায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের চেয়ে তাদের কাছে খোরশেদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার বেশি জরুরী।  তবে এর পেছনে রয়েছে ভিন্ন কারন।  তা হলো জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে দায়িত্বে রয়েছেন খোরশেদের আপন বড় ভাই অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।  ফলে জেলা বিএনপির আওতাধীন বিভিন্ন এলাকার কমিটিতে পদ পেতে হলে তৈমূর আলমের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।

ঘটনা সূত্রে, সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে কাউন্সিলর মাকসুদুুল আলম খন্দকার অবিযোগ করেন, সাঈদা আক্তার শিউলি নামের এক নারীর সঙ্গে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামান্য চেটিং করেছেন।  এ কারনে ওই নারী তাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে চান।  ওই নারীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন খোরশেদ।  এই ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে নিজেকে খোরশেদের বিবাহিতা দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে একটি আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করেন।

ওই নারীর দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার দাবিতে নারায়ণগঞ্জ নগরবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন করা হয় যেখানে অধিকাংশরাই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে খোরশেদের শুভাকাঙ্খীরাও এতে অংশগ্রহণ করেন।

২৪ মে মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর চাষাড়াস্থ নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।  মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জাফরুল্লাহ খান চেঙ্গিস।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ তুলেছেন, মামলার বাদী ওই নারীর পেছনে কেউ কলকাঠি নাড়ছেন।  যে কারনে কাউন্সিলর খোরশেদকে বিতর্কিত করতেই ওই নারী এই বিতর্কিত মামলাটি দায়ের করেছে।  কাউন্সিলর খোরশেদের কোননোপ্রতিপক্ষ ওই নারীর পেছনে ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছেন বলে আমরা ধারণা করছি।

বিএনপি নেতা কাউন্সিলর খোরশেদের পক্ষের এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- ফতুুল্লা থানা বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খান, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ওলামা দলের সহ-সভাপতি মুন্সী সামসুর রহমান খান বেনু, শহর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হক চৌধুরী দিপু, আনোয়ার মাহমুদ বকুল, জেলা বিএনপির সদস্য রহিমা শরীফ মায়া, বিএনপির আইনজীবী ফোরামের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন সরকার, আইনজীবী ফোরামের সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিক আহাম্মেদ, জেলা বিএনপির সদস্য আশরাফুল ইসলাম রিপন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারি মাহাবুব রহমান, মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন, সরকার আলম, মাসুদ রানা, মহানগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রশিদুর রহমান রশু, জিয়া পরিষদ মহানগর কমিটির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম জোসেফ সহ বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নংওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও রেহানা মুসকান নামের এক নারীর বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করায় বাদী সাঈদা শিউলিকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

এমনকি বাদী সাঈদা শিউলি যাতে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যায় সেজন্য তার ব্যবহৃত গাড়ির রেডিয়েটর নষ্ট করে দেয় দুর্বৃত্তরা।  এমন হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ২৩ মে রবিবার রাতে ফতুল্লা থানায় জিডি (নং-১০৯৩)করেন ওই নারী যিনি কাউন্সিলর খোরশেদের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে আসছেন।

সাঈদা শিউলি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সদস্য এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।  নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ সিএনজি মালিকদের নিয়ে একটি সংগঠনের সভাপতিও তিনি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৬ মে বাদী সাঈদা শিউলি ২০১৮ সনের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৫(২)/২৯(১)৩১(২) ধারায় ফতুল্লা থানায় কাউন্সিলর খোরশেদ ও রেহানা মুসকানের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করেন।  মামলায় তিনি নিজেকে খোরশেদের বিবাহিতা দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন।

ফেসবুক লাইভে খোরশেদ ও রেহানা মুসকান অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, মিথ্যা অভিযোগ ও আপত্তিকর বক্তব্য দিয়ে সাঈদা আক্তারের সম্মানহানী করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।  একই সাথে খোরশেদের বিরুদ্ধে প্রতারনাও নানা রকম অপকর্মের অভিযোগ তোলেন সাঈদা।

এদিকে রবিবার রাতে দায়ের করা জিডিতে সাঈদা শিউলি অভিযোগ করেন মামলা দায়ের করার পর থেকে আসামীরা তাকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।  ২৩ মে সকালে তার বাসার সামনে এসে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তার নাম ধরে গালিগালাজ এবং মামলা তুলে না নিলে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যায়।  একই সাথে সাঈদাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেয় তারা।

এর আগে গত ১৯ মে দুর্বৃত্তরা তার ব্যবহৃত গাড়ির রেডিয়েটর নষ্ট করে দেয়। যাতে তিনি বের হলে দুর্ঘটনার শিকার হন।

সাঈদা শিউলি দাবী করেন, মামলার আসামীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তাকে জানে মেরে ফেলার চেষ্টার পাশাপাশি তাকে নিয়ে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও বদনাম রটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

তবে এ বিষয়ে কাউন্সিলর খোরশেদের ঘনিষ্ঠজন ও পরিবারের দাবি- কাউন্সিলর খোরশেদকে হয়রানি করার লক্ষ্যেই এসব করা হচ্ছে।