সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে জাতীয়পার্টি থেকে আওয়ামীলীগে ফিরে গিয়েছেন বলে সম্প্রতি খবর বেড়িয়েছিল। সেখানকার রেজাউল করিম ও লিয়াকত আলী নামের দুই নেতা আওয়ামীলীগে ফিরে গিয়েছেন বলে মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়। তবে এ নিয়ে স্থানীয় জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা আনন্দ উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন। কিন্তু আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও নাখোশ প্রকাশ করতে দেখা যায়। যেখানে কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝরা এ নিয়ে ফেসবুকে একটি লেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ওই ব্যক্তি নিজেদের এক সময় আওয়ামীলীগার দাবি করেছেন এবং তারা জাতীয়পার্টিতে যোগদান করেছিলেন বলে দাবি করা হয়। সর্বশেষ তারা আওয়ামীলীগে ফিরে গিয়েছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামীলীগের কোনো নেতাকর্মী কখনও দল ত্যাগ করেনা। সুতরাং ফিরে আসার তো প্রশ্নই ওঠেনা।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ক্ষমতার সুবিধা অর্জনে রাজনৈতিক দলবদল করে তারা কখনও বিএনপি, কখনও আওয়ামীলীগে, আবার কখনও জাতীয় পার্টি, কখনও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী গ্রুপে। মূলদল হোক আর বিদ্রোহী হোক, ক্ষমতার পাল্লা যেদিকে ভারী সেদিকেই দেখা যাবে তাদেরকে দুজনকে। বারবার রাজনৈতিক দল পাল্টে ক্ষমতার দাপট দেখাতে পারাটাই তাদের মূল টার্গেট। যোগদানের এক বছরের মাথায় দুই নেতা সম্প্রতি জাতীয় পার্টি ছেড়ে যাওয়ায় সোনারগাঁয়ের স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের এলাকায় সালিশি বিচারের নামে সুবিধা আদায় ও জনসাধরণকে হয়রানি করাসহ নানা অভিযোগ উঠে রেজাউল ও লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে। এতে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাও।
তাদের তোপের মুখে পড়ে কোনঠাসা হয়ে পড়া রেজাউল ও লিয়াকত সম্প্রতি ১৭ মে জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপে ভিড়েছেন। সোনারগাঁ উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা মাহফুজুর রহমান কালামের হাত ধরে তারা আওয়ামী লীগে যোগ দেন বলে মিডিয়াতে খবর প্রকাশিত হয়।
এদিকে রেজাউল ও লিয়াকতের দলত্যাগে স্থানীয় জাতীয় পার্টির শিবিরে স্বস্তি নেমে এসেছে। এই দুই নেতা দল ছেড়ে যাওয়ায় তাদের বিতর্কিত কর্মকান্ড থেকে রক্ষা পেয়েছে জাতীয় পার্টির ইমেজ। এতে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও খুশি বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে সোনারাগাঁও আওয়ামীলীগের মূল শিবিরে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। এসব হাইব্রিড নেতার আগমন প্রতিহত করার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ভুঁইয়া মিডিয়াতে বলেছেন , দলে অন্যলোকের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ। সোনারগাঁ আওয়ামী লীগে কাউকে যোগদান করানো হয়নি, হবেও না। যারা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী তারা কখনও আওয়ামীলীগ ছেড়ে যাবে না।
স্থানীয়রা জানান, নারায়ণগঞ্জ সোনারাগাঁ নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার হাত ধরে স্থানীয় জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা ও আধিপত্য বাড়লে ক্ষমতার লোভে পৌর বিএনপি নেতা রেজাউল করিম ও লিয়াকতরা স্থানীয় রাজনীতিতে কোনঠাসা হয়ে পড়েন। মামলা মোকাদ্দমা থেকে রক্ষা সহ ক্ষমতার সাইনবোর্ড ব্যবহার করতে বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে আসতে চান।
অবশেষে ২০২০ সালের ৫ মার্চ পৌর বিএনপির নেতা রেজাউল করিমের নেতৃত্বে লিয়াকত আলীসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
জানা গেছে, ১৯৯১-৯২ সালের দিকে চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিমের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেন রেজাউল করিম ও লিয়াকত আলী। রেজাউল করিম পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি হন। চারদলীয় জোট সরকারের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ক্ষমতার পট পরিবর্তনে বিএনপি ছাড়েন রেজাউল ও লিয়াকত। তারা আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের হাত ধরে নৌকায় ভিড়ে যান।
২০১৪ সাল পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগের পদপদবি না পেলেও ক্ষমতার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে চলেন। ২০১৪ সালে মহাজোট সরকারের হয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি নির্বাচিত হন। এসময় তারা জাতীয় পার্টিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এসময়ে তারা আওয়ামী লীগে পদ পদবি না পেয়ে অন্যদিকে জাতীয়পার্টি যোগ দিতে না পেরে পুরাণ দল বিএনপিতে সক্রিয় হন। ২০২০ সালে পৌরসভা বিএনপির পদ পদবি থেকে স্থানীয় এমপি খোকার হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন তারা। একবছর পার হতেই আবার তারা জাতীয় পার্টি ছেড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি বলয়ে যোগদান দেন।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সানু দাবি করেছেন, যারা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো আগাছা দলে আসে এবং নানা অপকর্ম করে দলকে বিতর্কিত করে ফেলে, এমন সব ব্যক্তি দল থেকে চলে গেলে আমি মনে করি জাতীয় পার্টি আগাছামুক্ত হয়। আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও উপজেলা জাতীয় পার্টিতে এখন কোনও সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও ঠেন্ডারবাজ নেই।