সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আজ ১৬ জুন দেশের ইতিহাসে অন্যতম বর্বরোচিত ও নৃশংস বোমা হামলার ২০ বছর।
২০০১ সালের এই দিনে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগ অফিসে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের (হুজি) নৃশংস বোমা হামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীসহ ২০ জন নিহত হয়েছিলেন। সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছিলেন।
১৬ জুন বুধবার সকাল থেকে দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা চাষাড়া শহীদ মিনারে নিহতদের স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকালে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহামুদা মালা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এ ছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ, সেক্রেটারি আশরাফুল ইসমাঈল রাফেল প্র্রধানের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান। একইভাবে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রধানের নেতৃত্বে মহানগর ছাত্রলীগ ও সরকারি তোরালাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও শ্রদ্ধা জানান। পরবর্তীতে এসব ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা একেএম অয়ন ওসমানের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
জানাগেছে, ভয়াবহ ওই বোমা হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া আহতদের অনেকেই পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরছেন। কিন্তু গত ২০ বছরেও নৃশংস এই বোমা হামলার বিচার কাজ শুরু না হওয়ায় স্বজনদের চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও বুকে যেন রক্তক্ষরণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
জানা গেছে, ২০০১ সালের ১৬ জুন রাত পৌনে ৮টায় চাষাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিনই নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা দুটি মামলা (একটি বিস্ফোরক ও অন্যটি হত্যা) করেন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চূড়ান্ত রিপোর্ট দেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে এ মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
দুটি মামলায় ১৪ বছরে সাত বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন ও অষ্টম বার ১৩ বছর পর ২০১৩ সালের ২ মে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি ছয় জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন। মামলাটি সাক্ষী পর্যায়ে রয়েছে। মামলার অন্যতম আসামি হুজি নেতা মুফতি হান্নানের একটি মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় ও তার প্রতিবেদন আদালতে জমা না দেওয়ায় বারবার মামলার তারিখ পেছাচ্ছে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়া শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল ও আব্দুস সালাম পিন্টু কারাগারে রয়েছেন। ভারতে গ্রেপ্তার রয়েছে হরকাতুল জিহাদের ২ জঙ্গি সহোদর আনিসুল মোরছালিন ও মাহাবুবুল মুত্তাকিন।
এদিকে দীর্ঘ ২০ বছরে এই ২০ হত্যা মামলার বিচার না পাওয়ায় শঙ্কিত, হতাশ ও ক্ষুব্ধ নিহতের স্বজনরা। ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার নানা আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত বিচারের দাবি করেন তারা।
আদালত সুত্রে জানাগেল, এখনও এই মামলার ৮০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। যদি সেটি করা যায় তবে ছয় মাসের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন হবে।
বোমা হামলার সেই দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শামীম ওসমান (বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন) একটি জাতীয় গণমাধ্যমকে জানান, রক্ত কত গরম, তা অনুভব করেছিলাম। বোমাটি যখন বিস্ফোরণ ঘটল, তখন মেঝেতে লুটিয়ে পড়ি। আমার আশপাশে কারও ছেঁড়া হাত-পা বা কারও মাথা। সিলিংয়ে ঝুলে আছে ছিন্নভিন্ন মানবদেহ। আমি প্রথম জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলাম। বলেছিলাম শেখ হাসিনাকে বাঁচান। আমার ওপর হামলার পরেই কিন্তু ২১ আগস্ট নেত্রীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। সমস্যা হল, আমি আগে বলি, পরে সবাই বুঝতে পারে।
বোমা হামলার মামলা ও বিচার প্রসঙ্গে শামীম ওসমান জানান, আমি হতাশ। এ কারণে যে এ হামলার মূল আসামি ছিল চাষাঢ়া এলাকার উবায়দুল নামে এক ব্যক্তি। উবায়দুল সেদিন ঘটনাস্থলে এসে আমার টেবিল চাপড়িয়ে বলেছিলেন, আমি কেন তার কাগজে স্বাক্ষর করব না। তার সঙ্গেই এসেছিলেন হরকাতুল জিহাদের দুই জঙ্গি সহোদর মোত্তাকিন ও মোরসালিন। এই উবায়দুলের কথা আমি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বারবার বলার পরে তাকে সরে যেতে সহায়তা করা হয়েছে। ভারত থেকে দেশে এত বন্দি বিনিময় হয়। কিন্তু এত বড় নৃশংস বোমা হামলায় জড়িত দুই জঙ্গি মোত্তাকিন ও মোরসালিনকে কেন দেশে আনা হয় না।
তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন, দুঃখ একটাই যারা আমাকে হত্যা করতে গিয়ে ২০ জনকে হত্যা করল, তারা তো শুধু আমাকে একটি গুলি করেই হত্যা করতে পারত। খুব কষ্ট হয়। যখন কারও বিধবা স্ত্রী ও এতিম সন্তান আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। আজ আমার জন্য তাদের এই অবস্থা।