সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারনে আপাতত স্থগিত রয়েছে সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনগুলো। তেমনি নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলার ইউনিয়নগুলোর নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করা হয়নি। যদিও ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমান তার পছন্দের ব্যক্তিদের নিজের সমর্থন ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এমপি সেলিম ওসমানের সমর্থন নিয়েও ব্যাকফুটে রয়েছেন তিনটি ইউনিয়নের তিনজন প্রার্থী। যার মধ্যে দুটি ইউনিয়ন পরিষদের তারা বর্তমান চেয়ারম্যান।
নারায়ণগঞ্জের দানবীর খ্যাত এমপি একেএম সেলিম ওসমান তার নিজস্ব সমর্থন ঘোষণা নিয়ে প্রার্থীদের বলেছিলেন ‘আপনারা জনগণের কাছে যান এবং জনগণের সেবা করে জনগণের ভালবাসা নিয়ে আপনারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন।’ কিন্তু সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে স্থানীয়রা বলেছেন, সেলিম ওসমানের এমন নির্দেশনা মানেননি তার সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। উল্টো করোনার দ্বিতীয় ধাপে অসহায় মানুুষগুলো যখন আরো অসহায় পড়ে তখন তারা জনগণের মাঝে দাঁড়াননি। করোনাকালে ঈদ উল ফিতরেও তাদের দেখা যায়নি জনগণের মাঝে জোরালোভাবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে।
এমনকি নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে জনগণকে নিয়ে নির্বাচনী সভা সমাবেশ কিংবা গণসংযোগও করেননি তেমনভাবে। কিন্তু তাদের বিকল্প প্রার্থীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা সুযোগে সুযোগে জনগণের কাছে যাচ্ছেন। মানুষকে সহায়তা করছেন, বিপদে আপদে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু যারা এমপির সমর্থন পেয়েছেন তারা মনে করছেন তারা চেয়ারম্যান হয়ে গেছেন। তারা বিনাভোটে চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। যে কারনে তারা জনগণের ভোটের আশা করছেন না, জনগণের মাঝেও যাচ্ছেন না। জনগণও তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
বন্দরের কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধানকে কয়েক মাস পূর্বে একটি অনুষ্ঠানে এসে এমপি সেলিম ওসমান তাকে সামনের নির্বাচনেও সমর্থন ঘোষণা করেছেন। এমপি সেলিম ওসমানের সমর্থন ঘোষণার পুর্বে তিন চার মাসে দু’একবার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের মানুষের সামনে দেখা যেতো দেলোয়ার প্রধানকে। কিন্তু এমপির ঘোষণার পর দেলোয়ার প্রধান এখন জনগণ তো দুরের কথা নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন না। কিন্তু সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজিম উদ্দীন ভুঁইয়া নিয়মিত নানা অজুহাতে ছোট ছোট কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছেন। বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারি হলেও তিনি তার সকল কর্মকান্ড কলাগাছিয়া ইউনিয়নেই চালিয়ে আসছেন। শক্ত অবস্থানও তৈরি করেছেন তিনি।
একইভাবে সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতিকেও সমর্থন ঘোষণা করেছেন এমপি সেলিম ওসমান। নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের স্থানীয় এমপি একেএম সেলিম ওসমান কয়েক মাস পূর্বে পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতিকে আবারো নির্বাচনের জন্য তার নিজস্ব সমর্থণ ঘোষণা করেছিলেন।
মতিউর রহমানের পক্ষে এমপি সেলিম ওসমানের ঘোষণার পর আলীরটেক ইউনিয়নবাসী নির্বাচন ও সুষ্ঠ ভোটের দাবিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহাম্মেদকে নিয়ে আন্দোলনে নামেন। আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন আওয়ামীলীগ নেতা ও তরুণ সমাজ সেবক ব্যবসায়ী সায়েম আহাম্মেদ। নির্বাচনী কোনো প্রচার প্রচারণায় মতিকে দেখা না গেলেও বিভিন্ন ইস্যূতে সায়েম আহাম্মেদ বেশ সরব। মতির পক্ষের লোকজনও সায়েমের দিকে ভীড়ছেন।
করোনার দ্বিতীয় ধাপের পূর্বে কয়েক দফা আন্দোলন করেন আলীরটেক ইউনিয়নবাসী। ওই আন্দোলনে একটাই শ্লোগান ছিল ‘বিনা ভোটে নয়, নির্বাচন ও সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে চাই নির্বাচিত চেয়ারম্যান’। বর্তমান চেয়ারম্যান মতিউর রহমানের প্রতি স্থানীয় জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে আগামীতে চেয়ারম্যান প্রার্থী সায়েম আহাম্মেদকে নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমে পড়েন।
এদিকে গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নওশেদ আলী কয়েক মাস পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন। এরি মাঝে কয়েক মাস পূর্বে গোগনগরে এক অনুষ্ঠানে এমপি সেলিম ওসমান তার নিজের সমর্থন ঘোষণা করেন আওয়ামীলীগ নেতা জসিম উদ্দীনকে। গত নির্বাচনে জসিম নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়ে পরাজিত হোন। ওই নির্বাচনে নওশেদ আলীর পক্ষে এমপি সেলিম ওসমানের সমর্থন ছিল। তবে এখানে নওশেদ আলীর ভাই ব্যবসায়ী ফজর আলী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেলিম ওসমানের সমর্থনের পর নানা প্রচারণা চালিয়ে আসছেন ফজর আলী। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারণার কর্মকান্ডে এমপি শামীম ওসমানের ছবি ব্যবহার করছেন। যেখানে সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানকে মুুখোমুখী দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে ফজর আলীর বিরুদ্ধে। ফজর আলী বেশ সরব রয়েছেন।