সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এক এমপির ইশারায় বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ঠেকাতে যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন বন্দর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল। ফলে আবারো দায়িত্বে থাকছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান মাহামুদা আক্তারও। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের মতই মামলার জটিলতায় আটকানোর পরিকল্পনা করে নির্বাচন ঠেকানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন বিএনপির এই নেতা। তারা তিনজনই বিএনপি ও জামাতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও স্থানীয় এমপি একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করেন মুকুল ও মাহামুদা।
বিশ^স্তু সূত্রে জানাগেছে, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে। এর বিষয় থাকবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ড ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নের এনায়েতনগর এলাকা নিয়ে। ওই এনায়েতনগর এলাকার কিছু অংশ ভোটার রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের সীমানার ভিতরে। আবার সিটি কর্পোরেশনের কিছু ভোটার রয়েছে এনায়েতনগর এলাকায়। ফলে সীমানা সংক্রান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিতের আদেশ চেয়ে রিটের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। একইভাবে এটি খারিজ বা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে গেলে বন্দর ইউনিয়নের কিছু অংশের এলাকা কেন সিটি কর্পোরেশনে অন্তভূক্ত করা হবেনা তা জানতে চেয়েও আদালতে রিট করা হবে। মোট কথা বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঠেকাতে হবে। এসব রিট করার জন্য ইতিমধ্যে বাদীও ম্যানেজ করেছেন মুকুল। তার বাসায় গত সপ্তাহে এ বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে বলেও বিশ্বস্থ সূত্রে জানাগেছে। যে কারনে প্রভাবশালী ওই এমপি বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তেমন একটা নাক গলাচ্ছেন না।
এর কারন হিসেবে জানাগেছে, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক মনেনায়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ানের। যদিও বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগ থেকে সুফিয়ান ছাড়াও বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এমএ রশিদ মিয়া ও মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী সালামের নাম কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এই প্রার্থীর চেয়ে শক্তিশালী লবিং সুফিয়ানের হাতেই ওঠবে নৌকা প্রতীক সেটা অনুমেয়। ফলে স্থানীয় এমপি একেএম সেলিম ওসমানের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। কারন সুফিয়ান মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠ কর্মী। আর উপজেলা পরিষদেই থাকে সকল ধরনের কাজ। এমপির তদারকি করার এখতিয়ার থাকলেও তার প্রধান কাজ আইন প্রনয়ণ করা। ফলে বন্দরের পুরো নিয়ন্ত্রন চলে যাবে মেয়র আইভীর হাতে। কিন্তু বর্তমানে মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হলেও তিনি সেলিম ওসমানের পক্ষে সকল কাজ করেন। সেলিম ওসমানের চাটার দলের কর্মী হিসেবে তিনি পরিচিত পেয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে। আর বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। ফলে এখানে মুকুলকে বিএনপিও প্রার্থী করবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও মুকুল ধুপে টিকবে না। ফলে নির্বাচন ঠেকানোর প্রস্তুতি নিয়েছে মুকুল।
টানা প্রায় দশ বছর ধরে বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল। গত ৫ বছর ধরে উপজেলা পরিষদের তিনটি পদেই নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপি ও জামাতের তিনজন নেতা। তবে এবার দীর্ঘদিন পরে হলেও বিএনপি ও জামাতের রাহুমুক্ত হবে এমনটা নিয়ে আওয়ামীলীগের বেশকজন প্রার্থী মাঠে নেমেছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ডজন খানিক ছাড়িয়ে গেছে প্রচারণায়। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার পথে। বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের মত আটকে যাওয়ার উপক্রম।
বন্দর উপজেলা পরিষদে টানা দুইবার চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন আতাউর রহমান মুকুল। ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা সাইফুল ইসলাম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহামুদা আক্তার। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আতাউর রহমান মুকুল স্থানীয় সরকারি দলের এমপির সঙ্গে সখ্যতা রেখেই উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপির নেতা হলেও তিনি অনেকটা সরকারি দলের নেতার ভুমিকায় ছিলেন বেশ জোড়ালো। তবে এক্ষেত্রে সুবিধা করতে পারেননি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করলেও সরকারি দলের সঙ্গে প্রকাশ্যে মাহামুদাকে কমই দেখা গেছে। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত ইসলামীর নেতা সাইফুল ইসলাম গত ৫ বছরের বেশির ভাগ সময় ছিলে কারাগারে। আবার ছিলেন মামলায় আসামি হয়ে আত্মগোপনে। এমন পরিস্থিতিতে একক নিয়ন্ত্রন ছিল মুকুলের হাতেই। তবে ২০১৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে পড়বে এমন সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেই রাজপথে নেমেছিলেন আতাউর রহমান মুকুল। পরবর্তীতে তিনি আন্দোলন করতে গিয়ে মামলায় আসামীও হন। ওই নির্বাচনের পর তিনি আবারো বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে সরকারি দলের পক্ষে কাজ করেন। গত জাতীয় নির্বাচনে আতাউর রহমান মুকুল এ আসনের বর্তমান এমপি একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে সরাসরি নির্বাচনে কাজ করেন। সেলিম ওসমানের বেশকটি নির্বাচনী জনসভায় গিয়েছিলেন মাহামুদা আক্তারও। তবে দুরেই ছিলেন জামায়াত নেতা সাইফুল ইসলাম।
গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ২০ দলীয় জোটের সমর্থন পান বর্তমান মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি নূরউদ্দীন আহমেদ। যেদিন নূরউদ্দীন আহমেদকে নিয়ে বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেছিলেন ২০ দলীয় জোটের নেতারা ওইদিন সন্ধায়ই আতাউর রহমান মুকুলকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা আমানউল্লাহ আমান সমর্থনের ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয় বরং আতাউর রহমান মুকুলকে বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি উল্লেখ্য করে নূরউদ্দীন আহমেদকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি ঘোষণা করা হয়। অথচ মুকুল ছিলেন বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির স্বঘোষিত সভাপতি। বিএনপির সক্রিয় রাজনীতিতেও ছিলেন না। ওই নির্বাচনে মুকুল নির্বাচিত হন। একইভাবে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন মাহামুদা আক্তার। অপর ভাইস চেয়ারম্যান হন জামায়াত নেতা সাইফুল ইসলাম।