সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা তৈরি করে জেলা আওয়ামীলীগের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী কমিটি জমা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করছেন আওয়ামীলীগের ত্যাগী রাজপথের সক্রিয় এবং আওয়ামী পরিবারের রাজনীতিকরা। বিএনপি জামাতের পৃষ্টপোষক, বিএনপি জামাতের লোকজন ও বিএনপি জামাত পরিবারের লোকজনদের কমিটিতে রাখা হয়নি বলে খসড়া কমিটি জমা দেয়ার পর কমিটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিএনপি-জামাতের এজেন্ডরা। তারা চাচ্ছে যেকোনোভাবে খসড়া কমিটির অনুমোদন ঠেকিয়ে বিএনপি জামাতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে। তবে সেটি আর হচ্ছেনা জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপের কারনে। তারা অচিরেই কমিটির অনুমোদন দিতে যাচ্ছেন।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ১৬ বছর পর গত ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সভাপতি পদে নাজির আহাম্মেদ প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আল মামুন নির্বাচিত হোন। কমিটি গঠনের পর সদর থানা আওয়ামীলীগের আওতাধীন দুটি ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া জেলা আওয়ামীলীগের কাছে জমা দেয়া হয়।
ওই কমিটির বিষয়ে ২৩ জুন নারায়ণগঞ্জের একটি গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমুলক বক্তব্য দেন আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার। যেখানে তিনি সদর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বলেন, সদস্য পদ থেকে সায়েম আহাম্মেদকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে কমিটিতে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি আপত্তি জানান ওই মিডিয়াতে।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আলীরটেক ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তারা তুলে ধরেন নুরুজ্জামান সরকারের নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড। অনলাইন সান নারায়ণগঞ্জের কাছে নুরুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি জামাতকে পৃৃষ্টপোষকতা দেয়ার অভিযোগ তোলা হয়। দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় তিনি আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে দলের জন্য কিছুই করেনি। উল্টো বিএনপি জামাতকে নিয়ে সুবিধা ভোগ করছেন।
এ বিষয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল সান নারায়ণগঞ্জ জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামীলীগের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি জেলা আওয়ামীলীগের কাছে জমা দিয়েছি। কমিটিতে বিএনপি জামাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত, বিএনপি জামাত হেফাজতের পৃষ্টপোষক কিংবা বিএনপি জামাতের পরিবারের কাউকে রাখা হয়নি। আমরা কারো কোনো তদবিরে কিংবা কারো অনুরোধে অথবা কোনো কিছুর বিনিময়ে কাউকে কমিটিতে নাম দেইনি। অনেকের অনৈতিক তদবির আমরা শুনিনি যে কারনে তারা মিথ্যা অভিযোগ তুলে মিডিয়াতে বক্তব্য দিচ্ছেন।
নুরুজ্জামান সরকারের দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, মুলত সামনে আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। আর এই নির্বাচনে বিএনপি জামাতের পৃষ্টপোষক সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন নির্বাচন করতে চান। একই সঙ্গে সায়েম আহাম্মেদও নির্বানের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। নুরুজ্জামান সরকার মুলত জাকির হোসেনের মতই বিএনপি-জামাতের পৃষ্টপোষক এবং সে জাকির হোসেনের লোক। এখন সায়েম আহাম্মেদকে সরাতে পারলে জাকির হোসেনের জন্য আলীরটেক ইউনিয়নে নির্বাচনী সুবিধা হয়। আর সেই লক্ষ্যেই নুরুজ্জামান সরকার সদর থানা আওয়ামীলীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। নুরুজ্জামান সরকার দীর্ঘদিন বিএনপি নেতা আব্দুর রহমান সহ বিএনপি জামাতের লোকজনকে পৃষ্টপোষকতা করছে। আমাদের নেতা একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, কমিটিতে যেনো কোনো বিএনপি-জামাতের পৃষ্টপোষক কিংবা বিএনপি জামাতের কাউকে কমিটিতে না রাখি। আমরা সেভাবেই কমিটি গঠন করে জমা দিয়েছি। নুরুজ্জামান সরকারের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সে বিএনপি জামাতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই মিডিয়াতে এ ধরণের বিভ্রান্তিমুলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা মনে করি।
সায়েম আহাম্মেদ সম্পর্কে তিনি বলেন, সায়েম আহাম্মেদকে আমরা কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রেখেছি। সে আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সদর থানা আওয়ামীলীগের সকল কার্যক্রমে সক্রিয় ভুমিকা রাখছে। আলীরটেকে আওয়ামী পরিবারের সন্তান সায়েম আহাম্মেদ। দলকে শক্তিশালী করতে সে ভুমিকা রাখছে এবং ভবিষতেও সদর থানা আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী করতে কাজ করবে। তাই আমরা তাকে রেখেছি।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক, জেলা কৃষকলীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওদাগর খান বলেন, নুরুজ্জামান সরকার যখন আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হয় তখন আমার বয়স কম থাকায় আমি সাধারণ সম্পাদক হইনি। নতুবা তার মত ব্যক্তি এই দায়িত্ব পেতোনা। দায়িত্ব পেয়ে সে বিএনপি জামাতকে পৃষ্টপোষকতা দিয়েছে। এই সরকারের আমলেও সে বিএনপি জামাতকে আলীরটেকে শেল্টার দিচ্ছে।
সায়েম আহাম্মেদ সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, আমার বাবা যখন রাজনীতি করতেন, তখন এই সায়েম আহাম্মেদের পরিবারের লোকজন আমার বাবার সঙ্গে রাজনীতি করতেন, সভা সমাবেশে যেতেন। সায়েম ঐতিহ্যবাহী বোদ্দা পরিবারের সন্তান। আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান। আলীরটেক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে সায়েম আহম্মেদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের ভুমিকা রয়েছে। তারা ছিলেন আওয়ামীলীগের ধারক বাহক। আলীরটেকে যেখানে ১০০টা ভোট ছিল সেখানে সায়েম আহাম্মেদের পরিবার ও তার আত্মীয়স্বজনের ভোট থাকতো ৭০টি। এসব তো নুরুজ্জামান সরকার নিজেও জানে। আর সেই সায়েম আহাম্মেদের দিকে আঙ্গুল তুলেছে নুরুজ্জামান সরকার। যে নুরুজ্জামান সরকার বিএনপি জামাতকে পৃষ্টপোষকতা দিয়েছে। নুরুজ্জামান সরকার কোনোদিন দলীয় সভা সমাবেশে আসেনি। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কোনো একটি মিটিংও করেনি। তার চারপাশে বিএনপি জামাতের লোকজনদের দেখা যায়। সায়েম রাজনীতিতে পুরোদমে আসায় সদর থানা আওয়ামীলীগের রাজনীতি আরো বেশি সক্রিয় হচ্ছে এবং তাকে কমিটিতে রাখলে আমি মনে করি সদর থানা আওয়ামীলীগের রাজনীতি আরো বেগবান হবে।
আলীরটেক গ্রামের পঞ্চায়েত কমিটির প্রধান, সদর থানা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংকলড়ি, কভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি এস.টি আলমগীর সরকার বলেন, সায়েম আহাম্মেদকে যোগ্য মনে করেই কমিটিতে রাখা হয়েছে। এখন কেউ যদি বিএনপি-জামাতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নানা বিভ্রান্তিমুলক বক্তব্য দেয় তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। নুরুজ্জামান সরকারকে নিয়েই নানা বিতর্ক রয়েছে।
আলীরটেক ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ইসমাঈল মাতবর বলেন, নুরুজ্জামান সরকার কোনোদিন আওয়ামীলীগের মিটিং মিছিলে ছিল না। ইউনিয়ন কমিটি হওয়ার পর তাকে কোনোদিন দলীয় কর্মকান্ডে দেখা যায়নি। সে বিএনপি জামাতকে পৃষ্টপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। ২০/২২ বছর পূর্বে ইউনিয়ন কমিটি হলেও সে দলীয় কোনো সভা করেনি। অথচ সায়েম আহাম্মেদ আলীরটেকে আওয়ামীলীগকে চাঙ্গা রাখছে, সেখানে নুরুজ্জামান সরকার বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, নুরুজ্জামান সরকার আওয়ামীলীগের পদে থেকেও বিএনপি-জামাতকে পৃষ্টপোষকতা দিচ্ছে। জাকির হোসনে যখন চেয়ারম্যান ছিল তখন সে বিএনপি জামাতের লোকজন নিয়ে সুবিধা ভোগ করেছে। এখন সে আবারো স্বপ্ন দেখছে জাকিরকে নিয়ে বিএনপি জামাতকে প্রতিষ্ঠিত করতে।
৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জুনু বলেন, নুরুজ্জামান সরকারের সঙ্গে সব সময় বিএনপি জামাতের লোকজনদের দেখা যায়। আর সায়েম আহাম্মেদ আলীরকেট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রাণভ্রমরা হিসেবে আভির্ভূত হয়েছেন। বিএনপি নেতা আবদুর রহমান, শহীদ হোসেন, আওলাদ হোসেন, হেফাজতের ফেরদাউসুর রহমান, হাসমত উল্লাহ, সাজেদুল ইসলাম, আলী আকবর, হযরত আলী, আলী আহাম্মদ মোল্লা, রতন মাতবর, রমিজ উদ্দীন সহ বিএনপি নেতাদের নুরুজ্জামান সরকারের সঙ্গে সখ্যতা দেখা যায়।
১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহান উল্লাহ বলেন, সায়েম আহাম্মেদের মাধ্যমে আলীরটেক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে। সায়েম আহাম্মেদ সকলের খোঁজখবর রাখছেন। কিন্তু নুরুজ্জামান সরকারের মত ব্যক্তিরা কোনোদিন আওয়ামীলীগ নেতাদের খোজখবর নেয়নি। বিএনপি জামাতের লোকজনদের নিয়ে কাজ করেছে, এখনও করছে।
ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক শুক্কুর আলী মেম্বার বলেন, নুরুজ্জামান সরকারের সঙ্গেই তো সারাক্ষন বিএনপি জামাতের লোকজনকে দেখা যায়। সে কখনও আওয়ামীলীগের জন্য কাজ করেনি, সে বিএনপি জামাতের লোকজনদের হয়ে কাজ করেছে।