সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুুবদলের কমিটির শীর্ষ পদে আসার বিষয়ে আলোচনায় থাকা যুবদল নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে নিজেদের অবদানের বিষয়টি তুলে ধরছেন। একই সঙ্গে অন্যান্য প্রতিদ্বন্ধি নেতৃত্বপ্রত্যাশিদের বিপক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরে তাদের বিষয়ে নানা অভিযোগও দিচ্ছেন।
যদিও কেন্দ্রীয় যুবদলের সঙ্গে মহানগর যুবদলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে কেবল নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। সেখানে কেউ কেউ অভিযোগ করতে গেলে বাধা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে বৈঠক শেষে শীর্ষ পদপ্রত্যাশিরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে একে অপরের বিপক্ষে নানা অভিযোগ তুলে দিচ্ছেন বেশ। তবে তারা প্রত্যেকেই এই সরকারের আমলে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এসব বিষয়গুলোও কেন্দ্রে তুলে ধরছেন। এসব মহানগর যুবদল নেতাদের পক্ষে আবার জেলা ও মহানগর বিএনপির মুলদলের শীর্ষ নেতারাও তাদের নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষেও কেন্দ্রে তদবির করছেন।
নেতাকর্মীরা মহানগর যুবদলের কমিটি গঠনের বিষয়ে শীর্ষ পদে আসার লড়াইয়ে ৬ জন নেতাকে রাখছেন এগিয়ে। তারা হলেন মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন মন্তু, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, সাবেক সহ-সভাপতি রানা মুজিব, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম সজল ও মহানগর যুবদলের বিগত কমিটির সদস্য মাজহারুল ইসলাম জোসেফ।
স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সূত্রে জানাগেছে, উপরোক্ত ৬জন নেতা কেন্দ্রীয় যুবদলের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে ৬ জন নেতাই যার যার অবস্থান থেকে দলের প্রতি নিজেদের অবদান ও ত্যাগের বিষয়টি তুলে ধরেন। কেউ কেউ একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করলেও কেন্দ্রীয় নেতারা শুধু যার যার ভুমিকা অবদান তুলে ধরে বক্তব্য দেয়ার নির্দেশ দেন। তবে কেউ কেউ একে অপরকে আকারে ইঙ্গিতে বিরোধপূর্ণ বক্তব্যও দেন। ওই বৈঠকে নিজেদের ভুমিকা অবদান তুলে ধরলেও বৈঠক শেষে বর্তমানে এসব নেতারা যার যার লবিংয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন বলে এমনটা সান নারায়ণগঞ্জের কাছে অনেকেই জানিয়েছেন। আবার একই সঙ্গে অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ মৌখিকভাবে তুলে দিচ্ছেন।
যেখানে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের সঙ্গে মমতাজ উদ্দীন মন্তুর পূর্বের সুসম্পর্কের বিষয়ে এগিয়ে রাখলেও মন্তুর বিগত বছরগুলোতে তার ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল এমনটা তুলে ধরা হচ্ছে। বিগত কমিটির সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে ভুমিকা রেখেছেন বলে তার পক্ষে যুক্তি তুুলে ধরা হয় এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পেরেছেন সেটাও সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। আবার কমিটি গঠনের পর রাজনীতির কঠিন সময়ে তার নিষ্ক্রিয়তার ফলে খোরশেদ একাই দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সভাপতিও ছিলেন মন্তু। কিন্তু মন্তুর নিষ্ক্রিয়তায় সাগর প্রধানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে খোরশেদ দায়িত্ব দেন। এমন বিষয়টিও কেন্দ্রীয় নেতাদের কানে পৌছে গেছে।
বিগত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখনের পক্ষেও যুক্তি তুলে ধরা হয়। দাবি করা হয় শোখনও রাজনীতিতে সক্রিয়তা দেখিয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়- তিনি মহানগর যুবদলের রাজপথের রাজনীতিতে সামনের নেতৃত্বে ছিলেন না। আওয়ামীলীগ সরকার আমলে শহরের প্রাণকেন্দ্রে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঠিক রাখতে তিনি পুরোদস্তর রাজনীতিতে রাজপথে ছিলেন না। ফলে সরকারি দলের সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আতাতের অভিযোগ মৌখিকভাবে দেয়া হয়।
মহানগর যুবদলের সুপার ফাইভের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাগর প্রধান পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর বিদ্রোহ করেন। একাই তার অনুগামীদের নিয়ে রাজপথে সক্রিয়তা দেখান। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ তোলা হয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তোলা হয়। তবে সাগর প্রধানের পক্ষে যুক্তি দেখানো হয় তিনি বিদ্রোহ করলেও তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন না। নিয়মিত পাল্টা কর্মসূচি তিনি পালন করেছেন। দলীয় কর্মসূচিগুলোও তিনি পালন করেছেন। এমনকি খোরশেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নগরীতেও কর্মসূচি পালন করেছিলেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে পরে মন্তুর নিষ্ক্রিয়তার ফলে সাগর প্রধানকে এই খোরশেদই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেন। রাজপথে সক্রিয়তার ফলে সরকারি দলের লোকজন তার জমি দখলেরও চেষ্টা করেছিলেন।
বিগত কমিটির সহ-সভাপতি রানা মুজিবের পক্ষে যুক্তি দেখানো হয় রাজপথের একজন সক্রিয় তো। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে ডজন খানিক মামলার আসামি হন। রাজপথে পুলিশি নির্যাতনে হামলা শিকার হয়েছেন। এমনকি তাকে থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয় বলে দাবি করা হয়। তার একটি হাতের আঙ্গুুল ওই নির্যাতনে ভেঙ্গে যায়। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়- রানা মুজিব এক পর্যায়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। বর্তমানে দেশে ফিরেছেন। তিনি মুলত খোরশেদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম সজলের পক্ষে শুধু কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতার জোরালো তদবিরই বড় যুক্তি। তার নামে বলা হয়- তিনি ছিলেন মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক। যুবদলের রাজনীতিতে ছিলেন না। তিনি মহানগর বিএনপির পদে থেকেও মহানগর বিএনপির রাজনীতির চেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন আড়াইহাজারের রাজনীতিতে। হুট করে তিনি মহানগর যুবদলের রাজনীতি করতে নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছেন। তবে তার পক্ষে যুক্তি দেখানো হয় তিনি অনেকগুলো মামলার আসামি। একাধিকবার জেল খেটেছেন। তিনি দাবি করেছেন মহানগর বিএনপির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
একইভাবে নেতৃত্ব প্রত্যাশি মাজহারুল ইসলাম জোসেফের পক্ষে যুক্তি দেখানো হয় বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা প্রয়াত এমপি কমান্ডার সিরাজুল ইসলামের ভাতিজা তিনি। এক সময় মহানগর ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছিলেন জোসেফ। রাজপথ কাপানো নেতা। ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাকে নেতৃত্বে নিয়ে আসা জরুরী দাবি করা হয়। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়- জোসেফ দীর্ঘদিন সব ধরনের রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয়। তিনি মহানগর যুবদলের রাজনীতি কখনই করেননি। এমনকি বিগত কমিটির সদস্য পদে থাকলেও তিনি কোনোদিন মহানগর যুবদলের ব্যানারের নিচে দলীয় কর্মসূচি পালন করেননি। এখন কমিটি গঠনের আমলে তিনি সক্রিয় হয়েছেন। জোসেফ আওয়ামীলীগ সরকার আমলেও তিনি টানবাজার এলাকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিনা বাধায় চালিয়ে যাচ্ছেন।
নেতাকর্মীদের সূত্রে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের কমিটি নেই প্রায় ৪ মাস পেরিয়ে গেল। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাতিল ঘোষণা করার পর নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে মহানগরীর তিনটি থানার শীর্ষ নেতাদের নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় যুবদলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখনও কমিটি গঠন করা হয়নি।