সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
অধ্যাপক রেজাউল করিম একজন লজিং মাস্টার থেকে বিএনপির নেতা বনে যান, দলের মনোনয়ন পেয়ে হয়ে যায় এমপি, পরবর্তীতে হন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। আতাউর রহমান খান আঙ্গুর একটি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ থেকে বিএনপিতে এসেই হয়ে যান এমপি। অ্যাডভোকেট আবুল কালাম তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেও যার নিজের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, অথচ তিনি বিএনপির একাধিকবারের এমপি। অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ছিলেন রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, কাজের বুয়াদের নিয়ে গঠিত সংগঠনের নেতা। তাকে ডেকে নিয়ে বিএনপির আহ্বায়ক করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, হয়েছিলেন এডিশনাল এ্যাটর্নী জেনারেল, সেই পদ ছেড়ে দিলে তাকে বিআরটিসির চেয়ারম্যান বানানো হয়। মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি, ২০০১ সালের নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন পূর্বে বিএনপিতে এসেই বিএনপির মনোনয়নে এমপি হয়ে যান। কিন্তু দল যাদের এত্তকিছু দিলো, তাহলে দলের দুঃসময়ে দল ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি তাদের ভুমিকা কি? নাই বললেই চলে।
গত বছরের মার্চ মাস থেকে করোনা মহামারি বাংলাদেশে হানা দেয়। লকডাউনে দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ, অসহায় মানুষের না খেয়ে দিনাতিপাত কাটানো শুরু। সেই থেকে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অসহায় জনগণের মাঝে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। দু ‘একজনকে ব্যক্তিগতভাবে জনগণের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেলেও পুুরোদস্তর সেভাবে দেখা যায়নি। মুলত বিএনপির ক্ষমতার আমলে যারা ক্ষমতার স্বাদ সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছিলেন তারাও নেই জনগণের মাঝে। এদের কেউ কেউ একমুঠো চাল বিতরণ করেছেন এমন খবরও পাওয়া যায়নি।
তবে এসব অসহায় দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির বিশাল অংশের নেতাকর্মী যারা আরো বেশি দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। সান নারায়ণগঞ্জকে অনেকেই জানিয়েছেন লোক লজ্জার ভয়ে তারা কারো কাছে হাত পাততে না পারলেও তাদের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছাড়খার। নারায়ণগঞ্জেও গত এক যুগ ধরে হামলা মামলা নির্যাতন আর দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পথে বসেছে হাজার হাজার নেতাকর্মী। মাসের পর মাস বছরের পর বছর নেতাকর্মীদের থাকতে হয়েছে আত্মগোপনে। জেল জুলুমে জামিন পেতে অনেকেই তার স্ত্রীর গহনা ভিটেমাটি বিক্রিও করেছেন। কিন্তু বিএনপির ক্ষমতার আমলে যারা দু’হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন তারা কেনো দু’চার পয়সা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না? উল্টো বিএনপির এমন কিছু আইনজীবী নেতা রয়েছেন যারা বিএনপির ক্ষমতার আমলে সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন কিন্তু এই আমলে বিনা ফিতে নেতাকর্মীদের জামিনও পর্যন্ত করান না। এমনও ঘটনা রয়েছে মাত্র ৫’শ টাকা না দেয়ার কারনে হাইকোর্টের আদেশের কপি পাঠানো নিয়ে গাফিলতির জন্য মহানগর যুবদলের এক নেতাকে দুই মাস জেল খাটতে হয়েছে। বিএনপির অনেক আইনজীবীকে টাকা না দিলে ওকালতনামায় সই করেন না বলেও অতীতে অনেক অভিযোগ ওঠেছিল।
নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপির ছত্রছায়ায় এমপি মন্ত্রী হয়েছিলেন রেজাউল করিম, আবুল কালাম, আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ও মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। কিন্তু করোনাকালে জনগণের মাঝে তাদের কোনো ভুমিকা নাই। নেতাকর্মীদের তো খোঁজ খবর নেয়ার প্রয়োজনও মনে করছেন না তারা। ১/১১ এর সময় এদের মধ্যে তিনজন আবার ছিলেন বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস ফর্মূলার সংস্কারবাদী। জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম নেতাকর্মীদের দিয়ে বৃক্ষরোপন ও কদিন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করিয়েছেন। কিন্তু নিজের পকেট খরচ করে কজন নেতাকর্মীদের কিংবা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন এমন খবর পাওয়া যায়নি।
বিএনপির সমর্থনেই প্রথমে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা মনিরুল আলম সেন্টু। মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু বিএনপির রাজনীতি করেন কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বেশ। গত জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দিয়েছিল শকু, এমন অভিযোগও রয়েছে। মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুলও গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের বিরোধীতা করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার। জেলা বিএনপির সদস্য আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যােন হয়েছিলেন বিএনপির সমর্থনে। বিএনপির সমর্থনে জনপ্রতিনিধি ও বিএনপির পদ পদবী বহন করে উল্টো এই আমলে সরকারি দলের সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন তারা। তারা কাজ করেন সরকারি দলের হয়ে। দল থেকে তারা সুবিধা নিলেও দল ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি তারা কি করছেন সেটা বিরাট প্রশ্ন।