সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
শিল্পনগরী খ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলার ঘনবসতিপূর্ণ উপজেলা রূপগঞ্জে বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ২য় ধাপে এমন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশের মতো রূপগঞ্জেও চলছে ঈদ পরবর্তি লকডাউন কার্যক্রম। তাই সড়ক মহাসড়কে কঠোর অবস্থানের কারনে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশের তৎপরতায় শুধুমাত্র ওই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে।
তবে নিয়ন্ত্রণে নেই গ্রামের পাড়া মহল্লা আর নগরের অলি গলিতে। সচেতনতার অভাবে মানুষজন পুলিশ ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাড়া মহল্লায় চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, গ্রামের কারো কভিড আক্রান্তের লক্ষন হলে পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হচ্ছেন না । আবার কভিড আক্রান্তরা নিজের তথ্য গোঁপন করে স্বাভাবিক মানুষের মতোই অবাধ দায়হীন চলাফেরা করছে।
এমনকি তাদের স্বজনরাও হয়ে পড়েছেন বেপরোয়া। কোনরূপ স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন সবস্থানে। তবে স্বজনদের দাবী করোনা হয়েছে জানলে সমাজের লোকজন আমাদের ঘর থেকে বেরুতে দিবে না কিংবা কোন দোকান থেকে কিছু কিনতে পারবো না তাই বাধ্য গোঁপন রাখি।
সূত্র জানায়, রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত নার্স খাইরুনসহ ৪জনের অধিক নার্স ও কর্মচারী করোনা আক্রান্ত রয়েছেন। তারা স্টাফ কোয়ার্টারে অন্য সুস্থ্য রোগীদের সঙ্গেই বসবাস করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাদের স্বজনরা বেপরোয়া চলাচল করছে গ্রামের অন্য লোকজনের সঙ্গেও। এতে আরো ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে রয়েছেন হাসপাতালের পাশের বাসিন্দারা।
হাসপাতালের নিকটবর্তি শাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা তানভীর আহমেদ ফয়সাল জানান, আমরা হাসপাতালটির পাশেই বসবাস করি। ফলে প্রতিদিন শত শত লোক করোনা টেস্টের জন্য বা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসেন। তারা স্থানীয় চায়ের দোকান ও মানুষজনের সঙ্গে তথ্য গোঁপন করে আড্ডা জমায়। এতে শুধুমাত্র মুশুরী গ্রামের ২০জনের অধিক করোনা আক্রান্ত হয়েছে। আমরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক টান মুশুরী এলাকার অপর বাসিন্দা জানান, এ পর্যন্ত মুশুরী গ্রামেই আবুল হাশেম, আব্দুল বাতেন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাদের উভয়ের স্ত্রী এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাজধানীর একটি হাসপাতালে আইসিওতে ভর্তি রয়েছেন। একইভাবে মুশুরী গ্রামের নাজিমমুদ্দিনের স্ত্রীও মারা গেছেন। আবার নবগ্রামের সাইফুল ডাক্তারের মা খাদিজা,শফিকুল ইসলাম,ইলিয়াস, দুলালসহ হাসপাতালের পাশের গ্রামের লোকজন আক্রান্ত হওয়ায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
অভিযোগ রয়েছে, তথ্য গোঁপন করায় এসব মারা যাওয়াদের জানাজায় শতাধিক লোক অংশ নিয়েছেন। আবার তাদের স্বজনদের সঙ্গে মানবিক অযুহাতে গ্রামের অন্যলোকজন অবাধে মিশছেন। ফলে বেড়ে যাচ্ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। স্থানীয় মুশুরী গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য আপেল মাহমুদ বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফেসবুক আইডি ও প্রধান ফটকের সামনে আক্রান্তদের নাম পরিচয় প্রকাশ করে স্ব স্ব এলাকায় কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা জরুরী।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডাক্তার নূর জাহান আরা খাতুন জানান, এ উপজেলায় আক্রান্তদের জন্য পর্যাপ্ত বেড না থাকায় বাসায় চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। গুরুতর হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে প্রেরণ করি।
এ সময় তিনি আরো জানান, রূপগঞ্জে এ পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ১৭জনসহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩২০৬জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ১৫জন। সুস্থ্য হয়েছেন ২৮৪০জন। এখনো পজেটিভ রয়েছেন ৩৬৮জন। তবে তালিকা প্রকাশ করা যায় কি না তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে সম্মত হলে ব্যবস্থা নেব।
এদিকে কভিড পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনায় লকডাউন পালনে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ সড়ক মহাসড়কে তৎপর থাকায় ওইসব সড়কে যান চলাচল নেই বললেই চলে। তবে পাড়া মহল্লায় অবাধে আড্ডা জমাচ্ছেন ঘরে আটকে থাকা লোকজন। তাদের মধ্যে করোনা ভীতি কিংবা স্বাস্থ্য বিধি মানার পরিবেশ দেখা যায়নি।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, পাড়া মহল্লার মুদি দোকানে ওয়াইফাই সংযোগ নিয়ে তরুণরা অযথায় আড্ডায় মাতে। অন্যদিকে চায়ের দোকানে বয়স্ক ও লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়া লোকজন আড্ডা দিচ্ছে। দোকানের সামনে পর্দা লাগিয়ে পুলিশকে ফাঁকি দিতে সামনের সার্টার বন্ধ রেখে পেছনে আড্ডার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, রাজধানী ঘেষা এ রূপগঞ্জ দিয়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক, পূর্বাচলের ৩শফুট সড়ক, আবার এশিয়ান বাইপাসের মতো ব্যস্ততম সড়কগুলোর পাশাপাশি অভ্যন্তরীন জনপদে লোকজনকে লকডাউন পালনের সর্বাতœক চেষ্টা চালাচ্ছি। অলিতে গলিতে কিংবা পাড়া মহল্লায়ও পুলিশের টীম যাচ্ছে। তবে দুঃখের বিষয় পুলিশ চলে এলে তাদের মাঝে সচেতনতা দেখা যায় না।মুলত তারা নিজেরাই ঝুঁকিতে পড়ছে তা বুঝতে পারছে না। তাই অনুরোধ করবো সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মানতে লকডাউন পালন করুন। ঘরে থাকুন। নিরাপদে থাকুন।
অভিযোগ রয়েছে, আক্রান্তদের দেখভাল ও স্বজনদের অবাধে চলাচলরোধে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা মানছেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় কাউন্সিলর ও ইউপি মেম্বারগণের কেউ কেউ নিজেই চায়ের দোকানে আড্ডা বসাচ্ছেন।স্বাস্থ্যবিধি না মেনে করছেন গ্রাম্য বিচার শালিস। এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ সদর ইউয়িন পরিষদের চেয়ারম্যান ছালাহউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, উপজেলা প্রশাসন যখনই আমাদের সহযোগীতা তাৎক্ষনিক তা পালন করি। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করছি। দরিদ্রদের ঘরে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলাম বলেন, বিধি মোতাবেক স্থানীয় নির্বাহী ম্যাজিস্টেট,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তত্বাবধানে কভিড আক্রান্ত ও তাদের স্বজনদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৮টি মামলায় জড়িমানা আদায় করছি। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে হাজতবাস দন্ড দেয়া হয়নি।
তবে এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জাহান বলেন, ঈদ পূর্ব সময়ে রূপগঞ্জে ২জন ভারত ফেরত ভারতীয় ধাচের রোগীর সন্ধান পাই। তাৎক্ষনিক তাদের বাড়ি কোয়ারেন্টাইন ঘোষণা করেছি। তবে ঢালাওভাবে সব আক্রান্তদের বাড়িতে লাল পতাকা ও নোটিশ দিলে তারা সামাজিকভাবে নিজেকে হেয়ভাবে । দেশের বহুস্থানে আতœহত্যা করা কিংবা সামাজিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন অনেকে।